একজন চা শ্রমিকের মজুরি ১০২ টাকা মাত্র!

একজন চা শ্রমিকের মজুরি ১০২ টাকা মাত্র!


ছবি:ফেইসবুক থেকে নেওয়া 



এক.
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনোও শেষ হয়নি।মহামারি যখন আসে তা দীর্ঘসময়(বছরের পর বছর) ধরে থাকে।কবে ভাইরাসের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো তার কোন নিশ্চিয়তা এখন পর্যন্ত জানা নেই।বরং শীতকালের জন্য সবাই ভয়ে আছে।হয়তোবা দেশে শীতকালে ভাইরাসটি মারাত্মক আঘাত হানবে।কোভিড-১৯ এর ফলে এত যে ক্ষয়ক্ষতি হলো সামনে যে-কী আরো অপেক্ষা করছে তা ভাবলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।আচ্ছা, হয়তোবা মানুষকে প্রকৃতি মনে করিয়ে দিলো, "পৃথিবী সুস্থ্য থাকলে মানুষ সুস্থ্য থাকবে,পৃথিবী অসুস্থ্য মানে মানুষ অসুস্থ্য"।


দুই.
ভাইরাসের কথা এখানেই শেষ করি।মূল কথায় আসি, আপনারা উপরে হেডিং দেখেছেন একজন চা শ্রমিকের মজুরি ১০২ টাকা মাত্র!

প্রথমেই বলে রাখি আমার চা শ্রমিকদের বিষয়ে বলার মতো কোন জ্ঞান নেই ।শুধু মাত্র আমার ব্যক্তিগত চিন্তার কথাই আপনাদের বলতে চাই।কারণ কিছুদিন ধরেই ফেইসবুকের মারফতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ছবি ও নিউজ দেখছি।তা সূত্র ধরেই আমার চিন্তা-ভাবনার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।আমার সিলেটের চা বাগানে যাওয়া সৌভাগ্য  এখনো হয়নি।তাই বাস্তব চিত্র দেখার সুযোগ হয়নি।তবুও মিডিয়ার মাধ্যমে যতটুকু দেখেছি জেনেছি আপাতোত তাই ভরসা।


তিন.
ভাবছি, যদি দিনমজুরি ১০২ টাকা করে হয়। তাহলে বেঁচে থাকার জন্য যে নিম্নতম উপাদানগুলো দরকার সেই চাহিদা কী মিটানো সম্ভব বা সম্ভব কীনা! কারণ দিন প্রতি ১০২ টাকা করে হলে মাসে আয় হয় ৩০৬০ টাকা মাত্র।যদি পরিবারে তিন/চাঁর/পাঁচ তারও অধিক সদস্য থাকে তাহলে মাসে ৩০৬০ টাকা দিয়ে কী সংসার চালানো সম্ভব। দিনপ্রতি ১০২ টাকা পাওয়ার জন্য ২০-২৫ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করতে হয়।আবার এক কেজি চা পাতা বাজার থেকে কিনতে হলে গুনতে হয় ৪৫০ টাকা।তাহলে কতটুকু ফাঁরাক থেকে যায়(!)প্রশ্ন রেখে গেলাম।

আমাদের দিকে শ্রমিকের মজুরি এখন সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা।অনেক ক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত হলে পাওয়া যায় না।তবুও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।তাহলে যদি চিন্তা করি, ১০২ টাকা দিয়ে দিন প্রতি মজুরিতে কীভাবে সংসার চালানো সম্ভব!আমার জানা নেই।

সম্প্রতি যদি কাঁচাবাজারে পরিসংখ্যান দেখি তাহলে কেজি প্রতি দেখতে পাবো-
১.মোটা চালঃ৫১-৫৫ টাকা
২.দেশি মসুর ডালঃ১২০ টাকা
৩.সয়াবিন তেল(খোলা)ঃ১০২ টাকা
৪.চিনিঃ৬২ টাকা
৫.দেশি পেঁয়াজঃ৯৫ টাকা
৬.আলুঃ৫৫ টাকা

সূত্র-প্রথম আলো


চাঁর.

যদি অসুস্থ্যতা বা কোন কারণে একদিন / দুইদিন কিংবা এক সপ্তাহ কাজে যেতে না পারে তাহলে সংসার চালানো সম্ভব কীনা!এমনিতেই মজুরি কম সেক্ষেত্রে কাজেই যদি যেতে না পারে তাহলে খাবে কী,ঔধুষ কিনবে কী,জামাকাপড় কিনবে কী,নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনবে কী,ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করবে কেমন করে, চিত্তবিনোদনের কথা তো বাদি দিলাম।যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরর্ণ  হচ্ছে না, সেখানে তাঁদের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব কীনা আমার জানা নেই।সরকার এসডিজি-২০৩০ নিয়ে কাজ করছে।সেখানে বলা হয়েছে কাউকে পিছনে রাখা যাবে না।মানে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।এখন চা শ্রমিকের এই যদি অবস্থা হয় তাহলে এসডিজি গোল বাস্তবায়ন সম্ভব কীনা আমার জানা নেই।

এমন অবস্থায় চা শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন চলমান কীনা বা তাঁদের দামি পূরর্ণ হবে কীনা সেটাও জানা নেই।তবে সবার কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।চা শ্রমিকরা যে দিন প্রতি ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করছে তা কিন্তুু বাস্তবতার খাতিরেই দাবি করছে।ব্যক্তিগতভাবে আমি চা শ্রমিকদের আন্দোলন সমর্থন করি এই কারণে যে তাঁদের দাবিদাওয়া সেটা ন্যায্য।
সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো চা শ্রমিকদের জন্য কিছু করা যায় কিনা!

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.