শতপ্রাণের সমাবেশ ২০১৮

Jadil Mri



ছবি:William Nokrek 


সামান্যতম ব্যস্ততায়  অনেক দিন যাবৎ কোন প্রোগ্রাম করা হয়ে উঠেনি, তাই স্বাভাবিক ভাবে মন কেমন যেন খচখচ করছিল।বাধ্যগতভাবে অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় অনেক বার ধর্মীয় প্রোগ্রাম করা হয়েছে।তবুও মন যেন আলাদা কিছু চাইছিল, কোন একটা ভিন্নতা  রহস্যভরা ভালো প্রোগ্রাম।ধর্মীয় প্রোগ্রাম করতে করতে মন যেন কেমন ভোতা হয়ে গিয়েছিল।মনে হতে থাকে একি ধাঁচের একি কথা বার বার শুনছি,মনের ভেতর একটা বিরক্তি ভাব চলে এসেছিল,এক ঘেয়েমি লাগছিল সব। এখান থেকে মুক্তি  পেতে চাইছিলাম।

১.যাইহোক,"শতপ্রাণের সমাবেশ" পোস্ট  দেখেই ছয় নয় না ভেবেই যাওয়ার মনস্থির করলাম।  এই আশায় যে, ধর্মীয় কোন কিছু যেন ছু্ঁতে না পারে। ভাবলাম যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি, হাতে প্রচুর সময় গেলে মন্দ হবে না।মনস্থির করার পর আমার আপন বন্ধুজন সবাইকে জিঙ্গাসা করলাম, যাবে কিনা?অনেকেই বললো যাবে তাই আগ্রহটা আরো বেড়ে গেলো।হয়তো কোন চমক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,হয়ত বা চমক নাই। তখন অবধি জানতাম না আসলে কিসের প্রোগ্রাম হবে  । শুধু জানতাম কারিতাস আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে "শতপ্রাণের সমাবেশ ২০১৮"।জানি না, কেন জানি হঠাৎ করে মনে মনে থিম নিয়ে একটু আধটু গবেষণা করলাম।গবেষণা করে শব্দমালায় রাজনীতি রাজনীতি গন্ধ পেলাম,হয়তোবা আমার ধারণা ভুল ছিল।তবে একটা কথা মনে রাখা ভালো সব কিছুর পেছনে রাজনীতি জড়িত।এই থিম শব্দ বার বার মনে মনে আওড়ালাম কেমন জানি অন্যরকম রহস্য রহস্য গদ্ধ পেলাম।আমি আবার  যে  কোন   রহস্য খুব পছন্দ করি,সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম সেই দিনটির জন্য, অপেক্ষা করা এত কঠিন কথায় বুঝানো বড়ই দায়।প্রথমে ভেবেছিলাম খুব একটা মজা হবে না, মানুষ জন হবে না, শতপ্রাণের সমাবেশ ঘটবে না। কিন্তু আমার ধারণা সব ওলট পালট হয়ে গেল। কেমন জানি এক অস্থিরতা কাজ করছিল,ভাবছিলাম আসলেই কি আমি প্রোগ্রামে আসছি,নিজের অস্তিত্ব বিশ্বাস হচ্ছিল না । কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চল এর প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে সুন্দর ব্যানারটা পড়লাম।ভিতরে যাওয়ার জন্য বন্ধুবর তাগাদা দিল,ভিতরে প্রবেশ করলাম।হাঁটতে হাঁটতে রেজিস্ট্রেশনের জায়গায় গেলাম দেখি কিছু চেনা মুখ বসে আছে সবগুলা অচেনা। মনে মনে খুশিতে আত্নহারা হলাম।বা,অনেক মানুষ আসছে দেখি, অপরিচিত মুখ পরিচিত হবে,তাদের সাথে সম্পর্ক হবে আমার লিংক বেড়ে যাবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছিল।ব্যাগ রেখে দুপুরের খাবারে জন্য চলে গেলাম,খাবারের পর বিশ্রাম নেওয়ার কিছুটা সময় পেলাম, এই যা।প্রোগ্রাম শুরু হলো বলে,দেখি মানুষ জন আরো আসতে থাকে পরিচিত মুখ দেখি মাঝে মাঝে অপরিচিত মুখ দেখি।আমার ধারণা পালটে দিয়ে শতপ্রাণের সমাবেশ ঘটল,কিছু আবার HSC পড়ুয়া ছিল ।আমি এক বিস্ময় নিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে ছিলাম,কারণ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সবাই নিজেদের মত করে পড়াশুনা করছি। আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকি, কিন্তু আজ তিন দিনের জন্য এক সাথে হলাম।শেষ পর্যন্ত, শতপ্রাণের মিলনমেলা ঘটল আমার আশ্চর্যের সীমা রইল না।

 ২.আমার বোন এবং কতক বন্ধুজন প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে জিঙ্গাসা করলো,তাদের অনেকে বললো প্রোগ্রাম করে কি হবে?এই কথা শুনে হাসলাম।তাদের বললাম,এই  যে নতুন পরিবেশ পাচ্ছো,নতুন মুখ দেখার সৌভাগ্য হল,কেউ কেউ মেয়ে/ছেলে দেখার জন্য আসছে,নিজেকে জাহির করতে আসছে,কেউ নতুন কিছু শিক্ষার জন্য আসছে,কেউ ছুটির বিরক্তি কাটাতে আসছে,কেউ নতুন  বন্ধু তৈরি করতে আগ্রহী, কেউবা নিজের জাতির জন্য চিন্তা থেকে আসছে এই সবকিছুই প্রোগ্রামেরর একটা ছোট ছোট অংশ,কারো কাছে প্রোগ্রাম খুব প্রয়োজন হয়ে উঠে আবার কারো কাছে শূর্ণের কোঠায়।এর পরে জিঙ্গাসা করলাম তুমি কোন অংশের,তখন কোন কথা বলল না মুচকি মুচকি হেসে চলে গেল।প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা  ভিন্ন মানুষের ভিন্ন রকম,যাকে বলে সোজা কথায় ঠান্ডা।আমার সৌভাগ্য এই যে কারিতাসের একটা বড় প্রোগ্রামে যেতে পেরেছিলাম।জীবনে এক মনে রাখার মত কোন প্রোগ্রামে করতে পেরেছিলাম।                                                                                              

৩.প্রোগ্রামের শিডিউল যখন হাতে পেলাম তখন চমকে উঠেছিলাম,ওরে বাবা; যাদের দেখার প্রত্যাশায় এতদিন ছিলাম যাদের সংস্পর্শ পেতে চাইছিলাম, যাদের কথা শুনার জন্য অপূর্ণতা অনুভব করছিলাম, আমার স্বপ্নের মানুষ জন প্রত্যেকেই আসবে!ভাবা যায়, মনে মনে আবেগে  আত্নহারা হয়েছিলাম।আমি জানি না অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মনে আমার মত ঝড় বয়েগেছে কিনা?আমার মনে ঝড় বইতে শুরু করেছিল, আমি শত বার আয়োজক কারিতাস কে ধন্যবাদ জানালাম,নিজের আসা সিদ্ধাতে এবং  অন্যদের নিয়ে আসার জন্য খুব গর্বিত অনুবভ করছিলাম।সত্যি বলছি,যারা প্রোগ্রামে  অংশগ্রহণকারী ছিল,তারা কেউ কোন খারাপ কিছু ধরতে পারেনি সবাই বলতে বাধ্য হয়েছে সর্বোপরি  প্রোগ্রাম ভালো হয়েছে।অন্যান্য প্রোগ্রামে চাইতে শতপ্রাণের সমাবেশ প্রোগ্রামে আমি কিছু নতুনত্ব আবিষ্কার করি, জীবনের জন্য এক বিরাট শিক্ষা নিয়ে আসতে পেরেছিলাম,যা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সাহায্যার্থে কাজে লাগবে।আমি শুধু আপসোস করছিলাম যারা আসে নাই বা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারে নাই,অবহেলা করেছিল তাদের জন্য,  কারণ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত একবারি আসে দ্বিতীয় বার আসার সুযোগ নাই।যখন খুব ছোট ছিলাম তাদের মত হতে চাইতাম, সবসময় তাদের লেখা বা বক্তব্য শুনতে হাতছাড়া করতাম না।তাদের কাজ  আমায় সবসময় অনুপ্রাণিত করতো।





অজানা অনেক বিষয় উঠে এসেছিল,আমি মনে করি সবাইকে সেটা কোন না কোন ভাবে উপকৃত করেছে।আমার বিশ্বাস অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকজন নিজেকে নতুন রুপে চিনতে পেরেছিল,নতুনত্ব আবিষ্কারে নিজেকে আরো ঢালাও  ভাবে সজ্জিত করতে পেরেছিল।এই প্রোগ্রাম আমার ভেতর এক দারুণ রেখাপাত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।আমার মাঝে এতদিনের যে কর্ম ক্ষমতা হ্রাস  সৃষ্টি করেছিল,  তা নতুন রুপে আমি নিজেকে আমি তে সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম।আমি মনে করি,আমার মত এমন অনেকের ,উনাদের সান্নিধ্য পাওয়া দরকার ছিল।ফলত,তারা নিজেদের কে নতুন ভাবে চিনতে শিখবে সেটা কম হোক বেশি হোক।আমি দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম,নতুন ভাবে আত্নবিশ্বাসী হতে সাহস পেয়েছিলাম।

৫.আমাদের মাঝে যারা নিজেদের কথা বলেছিল,তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলাম,প্রত্যেকেজনের  এই অবস্থানে উঠে আসা এত সহজ পথ ছিল না।উনাদের প্রত্যেকের কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ ছিল তাদের মধ্য থেকে নতুন এক শক্তি খুঁজে পেয়েছিলাম।আমরা তাদের কথায় দারণ আকৃষ্ট অনুভব করেছিলাম তাদের কথা না বললেই নয়,প্রথমত সবচাইতে আকৃষ্ট করেছিল অপূর্ণ ম্রং,এমনি ভাবে হেমন্ত কুবি,সুভাষ জেংচাম,মতেন্দ্রনাথ মারাক,থিওপিল নকরেক অন্যান্যরাও ছিল যা আমার স্মরণে নাই।নবীণ এবং প্রবীণদের মিলন মেলা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ দুই প্রজম্মের  এক সাথে হওয়া ছিল বিশাল ব্যাপার।প্রজম্মের বিশাল ফারাক দুরত্ব দূর করা ছিল মহা উদ্যোগ, আমি মনে করি আয়োজক সেটা সফলভাবেই সম্পন্ন  করতে পেরেছিল।অভিজ্ঞা ভাগাভাগি এত যে গুরুত্ববহন করে সেটা না বললেই নয়।সত্যিকার ভাবে আমি নিজেকে একজন গারো হিসাবে নতুন ভাবে পরিচয় পাই,এখানে কে চার্চ অব বাংলাদেশ ,কে ক্যাথলিক, কে জিবিসি কোন পার্থক্য আমি দেখিনি।সবকিছু সত্ত্বেও এই পার্থক্য না থাকা আমার কাছে গুরুত্ববহ করে,কারন প্রথমে আমাদের পরিচয় হওয়া  উচিত আমি একজন গারো তারপর অন্য কিছু।এমনি ভাবে অনেক গুলো বিষয় আমার কাছে সংস্পর্শকাতর হলেও পরে সহজ মনে হতে থাকে।কিছু কিছু আমার ধারণা পরিবর্তন হলো,যা বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিলাম।

ছবি:William Nokrek 




৬.আমার মাঝে তাঁরা এক একজন আইকন,আমার মাঝে এক নতুন স্বপ্নের বীজ বপণ করেছিল যা অন্যদের মাঝেও ব্যতিক্রম হবার নয়।আমরা আমাদের স্বপ্নের কথা বলেছিলাম,সমস্যার কথা ভাগাভাগি করেছিলাম,নিজেদের মধ্যে সমাধানে চেষ্টা করছিলাম।প্রত্যেকের স্বপ্ন এক রকম ছিল না তবে আমাদের সবার স্বপ্ন এক ছিল নিজের জাতির জন্য কিছু করা,নিজেদের মধ্যে প্রচুর তাগিদা অনুভব করেছিলাম।আমি বুঝতে সক্ষম হয় সুযোগের অভাবে নিজের প্রতিভা বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল "সচেতনতা"। নিজেদের মধ্যে প্রচুর সচেতনতারর অভাব আছে বলে আমি মনে করি।সব কিছু সত্ত্বেও, আমার বিশ্বাস অংশগ্রহণকারী সবাই সচেতনতার জায়গা খুঁজে পেয়েছিল তা নিজেদের স্বার্থে, জাতি স্বার্থে কাজে লাগাবে। আমার কাছে  সব চাইতে যেটা সর্বোপরি বেশি প্রয়োজনে মনে হয়েছে সৎ রাজনীতিবিদ,শিক্ষাবিদ,পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, মুক্ত চিন্তার নতুন প্রজম্ম,উদ্যোক্তা,ব্যবসায়ীক,ক্রেডিট, আইনজীবি,এবং সরকারি কর্মকর্তা এছাড়াও অনেক পেশা থাকতে পারে।


৭.শতপ্রাণের সমাবেশ"প্রত্যাশার চাইতে আমায় অনেক দিয়েছে, সেই জন্য আয়োজক ও সহযোগী আয়োজক প্রত্যেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।এই প্রোগ্রাম আমার জীবনে এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

শতপ্রাণের সমাবেশ আবার সফল হোক এই কামনা করি।

2 comments:

  1. ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ ভাই। অনুপ্রেরণা পেলাম নতুন করে।

    ReplyDelete

Theme images by saw. Powered by Blogger.