Songsarek-সাংসারেক


JaDil Mri


Photo:Songssarek
গারোদের আদি ধর্মের নাম হচ্ছে"সাংসারেক"।বর্তমান প্রজম্মের গারোরা সাংসারেক ধর্মকে শয়তানের ধর্ম নামে মত পোষণ করে থাকে।”সাংসারেক” ধর্মের নাম শুনলেই কেমন যেন নেতিবাচক চিন্তা মনের ভেতরে আনাচে কানাচে উঁকি মারে।আমি বুঝতে পারি না ধর্মের প্রতি এত ঘৃণা কী ভাবে জম্মালো?কেনই বা এত ভয় ”সাংসারেক ”ধর্মকে নিয়ে? যখন আমরা সবাই সাংসারেক ধর্মের অনুসারী ছিলাম,তখন আমাদের মধ্যে ধর্মের বিভাজন নামে কোন শব্দ ছিল না। আমরা এক ও অভিন্ন ছিলাম,আমরা সবাই একি পথে হাঁটতাম,আমাদের স্বর্গ বা নরক ছিল।যে;মনি হোক যে কারনে হোক আমরা এখন আর আগের অবস্থানে নাই,ধর্মের নামে আমরা ভাগ হয়েগেছি, ভাগ হয়েছে পরিবার,ভাগ হয়েছে সমাজব্যবস্থা, পরিবেশগত আবাহাওয়া ভাগ হয়েছে সবকিছু।তখন, যখন আমরা”সাংসারেক” ছিলাম সব জিনিশ সবকিছু বস্তুু আমাদের ছিল, কিন্তুু এখন সবকিছুই আমার বা আমাদের(একটি অংশের) সমাজের বা আমাদের অনুসারী হয়েগেছে। যখন আমাদের ধর্ম ছিল তখন আমরা ছিলাম আমাদের নিজস্বতা ছিল, আমাদের নিজস্ব চাওয়া পাওয়া ছিল,আমাদের নিজস্ব দুঃখ কষ্ট বেদনা হাসি ছিল,কী ছিল না তাতে? ”আমরা ধর্মের ছিলাম, ধর্ম আমাদের ছিল” ধর্ম ব্যবসা নামের শব্দ বুঝতাম না কখনো জানতাম না, আমরা এখনো অনেকে জানি না।আমরা অনেক পবিত্র ছিলাম, নিজেদের দোষ স্বীকার করে আরো পবিত্র হতাম।ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলাম,ধর্ম আমাদের ছিল,আমাদের মত করে ছিল সবকিছু।

 আমি জানি বর্তমানে ”সাংসারেক”ধর্ম পালন করা এক অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।সেটা পরিবেশের জন্যই হোক কিনবা মনের দিক থেকেও হোক।আমরা যতই ভাবি না কেন!সাংসারেক ধর্ম সহজ ব্যাপার বা ইচ্ছা করলেই করা যেতে পারে বা এমনেই পালন করা যায়।মোটেই সেটা সহজ কাজ নয়,এত সহজে আমরা ”সাংসারেক” ধর্ম বুকে লালন করতে পারব না।অন্যান্য ধর্ম পালনে যেমন সাধনা লাগে তেমনি ”সাংসারেক ”ধর্মের তার চাইতেও সাধনার প্রতিফলন ঘটাতে হয়।বর্তমান সময়ে এসে সাংসারেক ধর্ম পালন করা হয়তো সম্ভব হয়ে নাও উঠতে পারে কিন্তুু সাংসারেক এর জীবন ধারা বা নিজস্বতা বজায় রাখা সম্ভব। আমি এক” সাংসারেক ”ঘরোয়া পরিবেশে বড় হয়েছি।কখনো জানতাম না, এত আয়োজন এত কিছু মানত এগুলো প্রতিটি অংশ সাংসারেক ধর্মের।শুধু জানতাম এই সব অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না কোন কিছু খাওয়া যাবে না দেখা যাবে না ছুঁয়াও যাবে না।তখনো জানতাম না আসলে কেন এত বাধা নিষেধ।”সাংসারেক”ধর্মে নিজস্বতা আছে সবকিছুই এক অভিন্ন। নিভু নিভু করে এখনো বেঁচে আছে। বর্তমান তরুণ প্রজম্ম যদি এর ধারক বাহক হতে চাই তাহলে হয়তো আরো কিছু দিন বেঁচে থাকবে নয়তো অচিরেই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিবে ”সাংসারেক”ধর্ম।


 এখনো কিছু ”খামাল”(পাল পুরোহিত)বেঁচে আছেন,সত্যিকার ভাবে এখনো নিজের ধর্ম আগলে বেঁচে আছে। যদি খেয়াল করি তাদের সাথে আমাদের কিন্তুু প্রচুর অমিল রয়েছে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি,তাদের যেমন নিজস্বতা রয়েছে বাচন ভঙ্গি আচরণ কথা বলা সবকিছু ভিন্ন। কিন্তুু আমাদের নিজস্বতা বলতে ধার করা ,অন্যের কাছ থেকে নেওয়া বা অনুসরণ করা।” সাংসারেকের ”প্রতি আমার এক রকম ভালোবাসা আছে।ভালোবাসার জায়গা থেকে কোনদিন ঘৃণার চোখে দেখতাম না। ঘৃণা না থাকলেও সব সময় ভয় কাজ করতো, ভয় কাজ করতো এই কারনে যে ছোটবেলায় ভয় দেখানো হতো।এটা করলে সেটা হবে ওটা হবে, কত কী ভাবে যে ভয় দেখাতো বলার ভাষা নাই।আমাদের পরিবারে এখনো সাংসারেকেরর সব নিয়ম কানুন মানা হয়।হাতে সময় থাকলে দেখি,অনুভব করার চেষ্টা করি,কাছে যাই তবে এত কাছে যাওয়ার সাহস নাই,কেন না আমি সব নিয়ম কানুন জানি না, কী করতে হবে আর কী বা বাদ দিতে হবে।যা শুনেছি ”সাংসারেক”ধর্মের খামাল হতে গেলে প্রচুর সাধনা লাগে,প্রতিনিয়ত ধ্যানরত অবস্থায় থাকতে হয়।কত যে নিয়ম কানুন পালন করতে হয় শুধু তারাই জানে।যদি কোন ভুল করে থাকে সাথে সাথে চরম মাশুল গুনতে হয়,সত্যি বলছি ভুলের মাশুল ভোগ করতে হবে সে যেই হোক না কেন।

 বর্তমান প্রজম্মের কিছু কিছু ব্যক্তি ”সাংসারেক”ধর্ম পালনে সদা সচেষ্ট, কিন্তুু এখন পর্যন্ত কাউকে ”খামাল”হতে দেখলাম না বা ইচ্ছা আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখলাম না,আগ্রহ থাকলেও খামাল হতে যে প্রক্রিয়া আবশ্যক তা করতে কাউকে দেখলাম না। পরিচিত অনেকে অনেক ভাবে কাজ করছে তবুও ”সাংসারেক” ধর্মের বিলুপ্তির যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা রক্ষার যে প্রবল তাগিদা সেটা দেখি না।তার পরেও নিজেদের মত করে চেষ্টা করছে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের মত করে অনুসরণ করছে।জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে বিলুপ্তিরর যে ধারা সেটা কিন্তুু থেমে নেই,চলছে অবিরাম।



 আমরা হয়তো জানি না অনেকে, ”সাংসারেক”ধর্মের উৎপত্তি কত সালে বা কোন সময়ে।আমি যতদূর শুনেছি সাংসারেক ধর্মের উৎপত্তি বা শুরু  সেটা” সত্য যুগে” যীশু খ্রিষ্টের জম্মের বহু বছর আগে।”সাংসারেক” ধর্মকে ভাবা হয় সনাতন হিন্দু ধর্মের সমবয়সী। যদি এমন হয়  “সত্য যুগ বা তার আগে থেকে শুরু ধর্ম, তাহলে ভাবা যায় এত বছর ধরে এখনো টিকে আছে”। বর্তমান প্রজম্ম লোকের কাছে হয়তো এমন লোক বা ব্যক্তি পাওয়া যাইতে পারে যে কিনা ”সাংসারেক”ধর্মের জন্য কাঁদবে বা মন থেকে কষ্ট পাবে।হ্যাঁ,সত্যি বলছি, বর্তমান প্রজম্মের এমন 
লোক আছে ,সত্যি কাঁদবে ,মন থেকে কষ্ট পাবে “সাংসারেক”ধর্মের অবস্থা দেখে।

 এমনো আছে যারা সাংসারেক ধর্ম কে ভালোবাসে বা অনুসরণ করতে ইচ্ছা আছে বা খামাল হতে ইচ্ছুক।এখনি দেরি না করে কাজ শুরু করে দাও,হয়তো তুমি পৃথিবীর শেষ সাংসারেক খামাল হতে পারো নয়তো সাংসারেক ধর্মকে বিস্তার লাভ করাতে পারো,যদি পারো আরিকি!আর যদি না হয় এমন কিছু করা উচিত যাতে নিজস্বতা থাকে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইব”সাংসারেক” ধর্ম আরো বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে অথবা যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন” সাংসারেক ”থাকবে।

শুধু মাত্র ধর্মের ক্ষেএটা বলছি না।আমি যেটা বলতে চাইছি ,একজন গারো হিসাবে সবকিছু নিজস্বতা বজায় রাখা উচিত,অন্যদের কাছে সবসময় নিজেদের কে আলাদা  ভাবে উপস্থাপন করা উচিত।
শেষ কথা হলো ,সবার আগে; আমি একজন ”গারো”।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.