জিবিসি,বাগাছাস,গাসু এবং অতীত ২০১৭!



জিবিসি,বাগাছাস,গাসু এবং অতীত ২০১৭!

জাডিল মৃ
তরুণ লেখক এবং ব্লগার




তিনটি সংগঠনের লগো




আমার কাছে ফেলে আসা বছরটা খুব অন্যরকম ছিল,বরাবরি গুরুত্ববহ এবং সাংঘাতিক।গুরুত্ববহ এই জন্য বলছি যে, সবারি নিজের মত করে অনেকগুলো স্বপ্ন থাকে,আমারো স্বপ্ন ছিল।আমার খুবই আত্নবিশ্বাস ছিল, আমার স্বপ্ন কোন না কোন ভাবে সফল হবেই।শেষ পর্যন্ত তা জানতাম না কোথায় গিয়ে সফল হবো!একাডেমি পড়াশুনা কোন দিন আমার মগজে ছিল না, তাই হয়তো কেউ আস্থা রাখতে পারেনি, কোন মতে পাশ করে যেতাম আরিকি!তাই কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি আমার মত ছেলে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পাবে।সেটা অবশ্য গর্বো করে বলছি না,সেটা আমার স্বপ্ন ছিল।আমার খুব স্বপ্ন ছিল,আমি সেটা চাইতাম, ভালো হোক খারাপ হোক একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ চেয়েছিলাম।শেষ অবধি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম।স্বাভাবিক ভাবেই খুব আনন্দের বছর  ছিল।আমার চাইতে আমার মা,বাবা এবং আত্নীয় স্বজন অনেক খুশি হয়েছিল,তারা ধরেই নিয়েছিল আমার দ্বারা সম্ভব নয়। কিন্তুু আমি তাদের ধারণা পাল্টে দিলাম,তাদের মনোভাব পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছিলাম।এমকি অনেক ছোট ছোট স্বপ্ন বাস্তবায়ন  করেছিলাম সবদিক থেকে খুব আনন্দের একটা বছর ছিল।সেই সাথে সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছিল, অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে ,কিন্তুু আমার কাছে তা ছিল না।আজকে শুধু মাত্র সাংঘাতিক  কথা নিয়েই আলোচনা করতে চাই।

       

আজকে শুধু সেটা নিয়েই আলোচনা করব, যে বিষয় গুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাংঘাতিক   মনে হয়েছে।আমার জীবনে দেখা তিনটি ঘটনা ঘটেগেছে, যা আমাদের সবার জন্য খুবই দুঃখজনক;এই জন্য যে, আমাদেরর সংগঠনগুলো ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে ।আমাদের শক্তি আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যাচ্ছে,অনেক বড় বিপদ মোকাবেলার  সার্মথ্য আমরা হারিয়ে ফেলছি।গত বছর আমাদের পুরো গারো জাতির জন্য খুবই খারাপ সময়গেছে, কাকতালীয় ভাবে কেমন যেন সব কিছু হয়ে গেল।সবকিছু ঘটনা নিজে চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।আমি কোন সমাধানের কথা বলব না,কাদের সমস্যা সেটা নিয়েও আলাপ করব না।কারন সব ঘটনা আমি পুরোপুরি জানি না, কেন বিভক্তি হয়েছে আমার কাছে তা পরিষ্কার নয়।তিনটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস,ঐহিত্য,কার্যক্রম, আমি পুরোপুরি অজ্ঞাত। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।







জিবিসি




এক,

১.আমাদের গারো জনগোষ্ঠীর গর্ব করার মত একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  আছে।যে প্রতিষ্ঠানে শুধু মাত্র গারো ছাড়া কেউ সদস্য পদ লাভ করতে পারে না।গারোদের  অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান  বলা যায়।ইতিহাস যদি দেখি নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে জিবিসি প্রতিষ্ঠা  লাভ করে ১৮৯০ সালে।প্রথম দিকে জিবিসি এমন ছিল না,কিন্তুু সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে এই অবস্থানে আসতে পেরেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পুরোপুরি গারো জাতির  মধ্যে ধর্ম প্রচার  শুরু করে এবং নিজেদের একটা শক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড় করতে সক্ষম হয়। যদি গারোদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে, তাহলে সেটা হলো গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন ,বাংলাদেশ(জিবিসি)।যেটি বর্তমানে সবকিছু কার্যক্রম  নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্যদের সাথে পার্টনারশীপ হিসাবে কাজ করে।জিবিসি একটি অরাজনৈতিক,অলাভজনক, মানব সেবা,চিকিৎসা ,শিক্ষা এবং ধর্মীয় বান্ধব প্রতিষ্ঠান  । জিবিসির ইতিহাসে যাব না শুধু মাত্র এইটুকু বলব, এত বছর বিপদ আপদ থাকা সত্ত্বেও কোন দিন ভাগ হয়ে যায়নি, সংকটপূর্ন পরিস্তিতি  থাকলেও দ্রুত সমস্যা সমাধান হয়েগেছে ।কিন্তুু ২০১৭ সালে এসে এমন এক অবস্থা পড়ে যা সমস্যার সমাধান হয়নি, অনেক পুরানো প্রতিষ্ঠান দুটো দলে ভাগ হয়ে যায় এটা পুরো গারো জাতি এবং জিবিসি সদস্যদের  জন্য মর্মান্তিক  দুঃখজনক।জানি না কখনো আবার এক হবে কিনা? তবে সব সময় চাইব, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা থাকবে, জিবিসি যেন আগের অবস্থানে ফিরে যায়।






বাগাছাস 





দুই,

২.বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন(বাগাছাস)প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গারো জাতি তথা আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে, লড়াইয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে,  আন্দোলন করে যাচ্ছে ।বাগাছাস সংগঠনের এক উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে এবং সংগ্রাম,ঐতিহ্য,আন্দোলনে নামের পাশে সবার আগে বাগাছাস  নামটি চলে আসে।গারো জাতির ন্যায্য অধিকার আদায়ে কোন দিন পিছবা হয়নি এবং সফল ভাবে গারো ছাত্র যুবকদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহ কাঁচিঝুলি হোস্টেলে ১৯৭৯ সালে সংগঠনটি জম্ম লাভ করে। যুগ যুগ ধরে গারো জাতি  তথা আদিবাসীদের ন্যায্য  অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে আসছে ।কিন্তুু জাতির জন্য এমন দুভার্গ্য  যে ২০১৭ সালে এসে দুটো দলে  বিভক্ত হয়ে পড়ে।বাগাছাস নামটা একি আছে কিন্তুু দুটো গ্রুপ হয়ে যায়।বর্তমানে একটি গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটি আছে, অন্য গ্রুপের এখন কোন সম্মেলন হয়নি। আমি জানি না কোন দিন আবার এক হতে পারবে কিনা?এক সাথে আন্দোলন করবে কিনা?তবে বিশ্বাস রাখি জাতির স্বার্থে যত মতাদর্শ ভিন্ন হোক জাতির সংকট মুহূর্তে এক সাথে কাজ করবে।





গাসু




তিন,

৩.গারো ছাত্রদের আরেকটি সংগঠনের নাম হচ্ছে, গারো  স্টুডেন্ট ইউনিয়ন(গাসু)।১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, প্রষ্ঠিতালগ্ন থেকে গারো জাতি তথা আদিবাসীদের  ন্যায্য  অধিকার আদায়ে সব সময় আন্দোলন করে আসছে।সংগ্রাম আন্দোলনে গাসুর অনেক সফলতা রয়েছে এবং কোনদিন ন্যায্য অধিকার আদায়ে আপোস করেনি।  কিন্তুু আমাদের এমন দুভার্গ্য যে ২০১৭ সালে এসে গাসু একাংশ নেতৃত্ববৃন্দ বের হয়ে গিয়ে নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলে।তাদের নেতৃত্বে নতুন এক ছাত্র সংগঠন জম্মলাভ করে,  গারো স্টুডেন্ট  ফেডারেশন(জিএসএফ)।প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জিএসএফ নিজের জাতি এবং আদিবাসীর জন্য কাজ করে চলছে।নতুন ছাত্র সংগঠন হলেও ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় এবং শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পেরেছে।


অবশ্যই স্বীকার করতে হবে ছাত্র সংগঠন বাগাছাস এবং গাসু জাতির জন্য অনেক দিয়েছে।আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতেও একি ভাবে জাতির সংকটে কাজ করবে। তবে সবচাইতে কষ্টের কথা হলো বিভক্তি, দুইটি ভাগ।বিভক্তি বা ভাগ না হলে অবশ্যই  আমাদের জাতির  জন্য মঙ্গল জনক ছিল।আমি জানি না, এর সমাধান কি?আপনাদের যদি জানা থাকে কমেন্টে জানাবেন ।






চাঁর

৪.এখন আমাদের মোট ৪টা গারো ছাত্র সংগঠন রয়েছে।প্রত্যেক সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ 
গ্রামে বা এলাকায়(আ'বিমায়)গিয়ে এক, দুই,তিন বা চারটি  গ্রাম নিয়ে একটি করে আঞ্চলিক শাখা তৈরি করছে।আমরা একটু চিন্তা করি,একটি গ্রামে প্রতিটি সংগঠনের যদি কমিটি থাকে,তাহলে  সংগঠনের আন্দোলন বা কমিটি বা শক্তি কোন কিছু কি জোর পাবে?এত বিভক্তি কি জাতির জন্য কল্যাণকর?  যদি সংগঠন একটি মাত্র থাকতো, তাহলে শক্তি কতই না মজবুত হতো। এমনিতেই আমাদের জনসংখ্যা কম, এর মাঝে যদি আমাদের মধ্যে বিভেদ থাকে, সংগঠনের ভাগ থাকে,তাহলে সেটা আমাদের জাতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে কিনা?


 এই বিষয়গুলো আমাকে মানে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক কষ্ট দিয়েছে।আমি বলব  ২০১৭ সাল ছিল গারো জাতির জন্য অভিশাপের একটি বছর কেন না একি বছরে তিনটি বৃহৎ সংগঠনগুলো ভাগ হয়ে যাওয়া চারটি খানি কথা নয় !নিশ্চিয়ই, আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি এমন করে সংগঠন গুলো ভাগ হয়ে যাবে।আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, "একতাই বল"।

নতুন প্রজম্মের কাছে আমার আহ্বান থাকবে,নিজের জন্য, জাতির জন্য, একটু চিন্তা করি এবং যুক্তিসংগত সিদ্ধাতে উপনীত হই কেন না পুনরায় যেন এই রকম গ্রুপ বা ভাগে সম্মুখীন হতে না হয়।









No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.