আবিমা


জা'ডিল মৃ












আমার কাছে ভালোবাসার আরেক নাম হচ্ছে আবিমা।আবিমা ছাড়া অন্য কোন জায়গায় বসবাস শুরু করা, আমি কল্পনাও করতে পারি না।হাতে টাকা আর সময় পেলেই হোন্ডা নিয়ে গারো গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়ায়,এমন দিন আছে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরেছি।আমি আসলে সত্যি জানি না এটা আমার নেশা কিনা!আমি সব সময় চাইতাম নিজের চোখে  বাস্তবতা অনুধাবন করি।প্রতিনিয়ত আমাদের খুব আতঙ্গে থাকতে হয়, সরকার কোন সময় উচ্ছেদ করে বসে কে জানে?পাকিস্তান আমলে সরকার উচ্ছেদ করেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও উচ্ছেদ করেছে,ক্ষতিপূরণ তো দেয়নি; উল্টো সংঘাত সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ইকোপার্ক নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে, এখন হচ্ছে, জানি না এর শেষ কোথায়?ছোট বেলায় এলাকাতে বাঙালি কম দেখতাম, যত দিন যাচ্ছে তত বাঙালির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা গারো গ্রামে তাদের সংখ্যায় এখন অধিক। জানেন তো,বুকের ভেতর অনেক কষ্ট জমে আছে কত যে গারো গ্রাম গারোশূণ্য হয়েগেছে তার কোন ইত্তায়তা নেই, চারিদিকে তাকালে মনে হয় না আগে সেখানে গারোরা বসবাস করতো।কষ্টের কথা শুনার কেউ নেই,ভোটের সময় পা পড়ে তার পর খোঁজ নেই।আবিমার গারোরা সবচেয়ে সংগ্রামমূখর, শত কষ্ট করে হলেও নিজেদের মত করে বেঁচে আছে,কঠিনতম সংগ্রাম করে সে ভাবেই বেঁচে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।শত বাঁধা সত্ত্বেও আবিমার গারোরা বিকশিত হচ্ছে,নিজেদের কে শক্ত অবস্থানে  দাঁড় করতে সক্ষম হচ্ছে।

আমি জানি আবিমার জমি আমাদের,পূর্বপুরুষদের ছিল ,অধিকার সূত্রে ভবিষ্যত প্রজম্মেরো জমি। সেই হিসাবে ভবিষ্যত প্রজম্ম অধিকার সূত্রে জমি পাবে। আমি জানি না তাদের ন্যায্য অধিকার তারা পাবে কি না!প্রতিনিয়ত যে ভাবে জমি দখল হচ্ছে,জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে,বন ধ্বংস করা হচ্ছে, প্রাকৃতিক বন উজাড় করে বিদেশী গাছ লাগানো হচ্ছে,আবিমা ছেড়ে অন্য জায়গা যেতে বাধ্য করা হচ্ছে,ভবিষ্যৎ প্রজম্ম তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বন্ধিত হবে, সেটা ভাবলেই মন কেঁদে উঠে। আমি জানি,জমি আছে বলেই আমাদের অস্তিত্ব আছে,যে সময় জমি থাকবে না,বন থাকবে না,নদী থাকবে না,গাছপালা থাকবে না,পশুপাখি থাকবে না,সেই সময় আমরা থাকব না আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

আমি যে জায়গায়  বড় হয়েছি সেটির নাম আবিমা(গারো ভাষায় /অর্থ-মাটি কামড়ে পড়ে থাকা),আজকে আবিমার একটি অংশ নিয়েই শুধু আলোচনা করব,সবার কাছে সেটা মধুপুর নামেই পরিচিত। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি,এত সুন্দর জায়গায় সৃষ্টিকর্তা আমাকে পাঠিয়েছেন।অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন  ভাগ্যবান মনে করছি?আসলে বহুবিদ কারণ আছে। অল্প কিছু শেয়ার করতে চাই,আবিমা হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে উর্বর মাটি আছে,বন, গাছপালা, নদী,পশুপাখি, সুন্দর জায়গা,পাহাড়ি পথঘাট মাঠ,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কি নেই তাতে?  মোটামোটি সব ধরনের ফসল হয়।যেমন  কলা,আনারস,আদা,হলুদ,পেঁপে আম,কাঁঠাল, জাম,লিচু,ধান,সরিষা,পাট,ডাল,মরিচ,পেয়াজ, ইত্যাদি।এছাড়াও বন রয়েছে প্রচুর গাছপালা আছে, মনে এক প্রশান্তি এনে দেয়,এক কথায় সমৃদ্ধতম এলাকা।আবিমায় গারো ছাড়াও কোচ আদিবাসী বসবাস করে। কিন্তুু খুব দুঃখের কথা হচ্ছে তাদের নিজেদের ইতিহাস,ভাষা,সংস্কৃতি, ঐহিত্য এখন আর তেমন কোন কিছু নেই বলেই চলে। তারা এমন এক অবস্থার মধ্যে আছে যে মূলস্রোতের সাথে মিশতে পারছে না আবার নিজেদের  কে  জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না।
সেদিন ঘুরতে ঘুরতে কোচদের নিজস্ব ক্রেডিট দেখলাম মনে খুব আনন্দ অনু্ভব হল।অর্থনীতি ভাবে শক্তিশালী হওয়ার মূখ্য পথ হচ্ছে ক্রেডিট। গারোদের অনেকগুলো সমিতি আছে, সমিতি ছড়াও আমার জানা মতে শুধু গারোদেরি তিনটা ক্রেডিট এখন বর্তমানে  সচল। ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত ভাবে পরে আলোচনা করব।

 আবিমায় অনেক কিছু ঘটনা ঘটেগেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে সেটা মোটামোটি পরিষ্কার। আগেই বলেছি আবিমা এক সমৃদ্ধতম এলাকা আমি যত গারো এলাকা ঘুরেছি তার মধ্যে সব দিক বিবেচনা করে অন্যন্য গারো এলাকা থেকে আবিমাকে এক নম্বরে রাখব।পুরো আবিমায় আনুমানিক সব মিলিয়ে ৭০/৮০ হাজার গারো বসবাস করে,আমি অবশ্য সংখ্যাটা ঠিক জানি না।ভালো লাগার কথা হচ্ছে আবিমায় এখনো সাংসারেক ধর্ম টিকে আছে কামাল অনুসারী এখন বিদ্যমান
  আর কত দিন থাকবে সেটা জানি না।আবিমায় নিরব সংস্কৃতি বিপ্লব হচ্ছে,কেউও জানি কেউ জানি না।  আবিমা এলাকা নিয়ে গর্ব করা মতো অনেক কিছুই আছে, সব কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারব না তবে কিছু  বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।তবে যাই হোক, আবিমা অনেক বড় বড় নেতা জম্ম দিয়েছে, নিজের জাতির জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষ আছে,বিদ্রোহের ইতিহাস আছে, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐহিত্য,সমাজ ব্যবস্থা, নিজস্বতাবোধ এখন আছে। শিক্ষিতর হার দিন দিন  বাড়ছে, শিক্ষা নিয়ে  সবচেয়ে গর্ব করার মত আবিমা গারোরাই  একমাত্র যোগ্য, কারণ প্রাইমারি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষক আছে।  বর্তমানে সুখবর হচ্ছে প্রত্যেক পরিবারেই এখন পড়াশুনার মানুষ আছে, মোটামোটি ছোট শিশু সবাই স্কুলে যায়,শিক্ষা দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে,যদিও অন্যন্য গারো এলাকা থেকে পরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়াও প্রায় সব ধরনের পেশার মানুষ আছে, কৃষক থেকে শুরু করে দিনমজুর, সচিব, বিসিএস ক্যাডার, সরকারি  বেসরকারি চাকরিজীবী ,  শিক্ষক,সংগঠক, উদ্যোগতা,ব্যবসায়িক,ব্যান্ড, শিল্পী, কারিগর,অভিনেতা,ফিল্ম ডিরেক্ট ,নেতা,কামাল, পুরোহিত,কবি, লেখক,ব্লগার,বুদ্ধিজীবী,মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী, রাজনীতিবিদ,ডাক্তার ,আইনজীবি;  কি নেই? মোটামোটি সবকিছুই আছে।

আবিমায় এমনো অনেক এলাকা আছে, যেখানে গারো পরিবার ছাড়া অন্য  কোন জাতির পরিবার নেই।বলা যায় একবারে বিশুদ্ধ গারো গ্রাম।প্রত্যেক গারো পরিবারের নিজস্ব ঘর আছে কম হোক বেশি হোক সবারি জমি আছে। অর্থনীতি ভাবে এত শক্তিশালী না হলেও,দিন দিন আয়ের সক্ষমতা  বাড়ছে।ঘুরে বেরানোর সুবাধে একটি জিনিস লক্ষ করেছিলাম, প্রত্যেক গারো পরিবারে কোন ফলমূলে গাছ না থাকলেও লিচু গাছ আছে,আমি অবাক হয়েছিলাম,মনে মনে এই ধারণা পোষণ করলাম যে গারোদের সবচেয়ে প্রিয় ফল লিচু।

আমি এমন বাস্তবতার মধ্যে জম্মেছি যে সময় আমার অস্তিত্ব আছে, পীরেন স্নাল,চলেশ রিছিল আমার সময়ে শহীদ হয়েছে। আমি দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার শত শত গারোদের কলা গাছ কেটে ফেলেছিল,কাগজ থাকা সত্ত্বেও। সেখানে গাছ লাগানো হয়েছে,বাড়ি আঙ্গিনা উঠান পর্যন্ত বাদ যায়নি।কত স্বপ্ন নিমিষে ধ্বংস হয়ে যায়,এখনো তার পরিমাণ বহন করতে হচ্ছে।ইকোপার্ক নিয়ে এখনো গ্রামে পর গ্রাম আতঙ্গে কাটে গরম থাকে পরিবেশ,ঘটনা  বাস্তব সাক্ষী ছিলাম।
এখন স্বাভাবিক রকম ভাবে ধর্ষষণ হয়,আগের সময়  ছিল যখন একটি মেয়ে গভীর রাত পর্যন্ত একা যেতে ভয় পেত না।নিরাপত্তা সংকুচিত হয়ে আসছে,আমরা একটা জায়গার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়ছি।এমনি অনেক সমস্যা, অপ্রত্যাশিত ঘটনা দেখেছি, সব সত্ত্বেও আমরা সংগ্রাম করে বেঁচে আছি।

শত সমস্যার মধ্যে আবিমা বেঁচে আছে,আবিমা বেঁচে থাকবে আরো বহু যুগ।








No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.