নিলীমা(চতুর্থ পর্ব)
নিলীমা(চতুর্থ পর্ব)
জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
হুম!হুম! |
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি,চার দেওয়ালের এক কোণে শুয়ে আছি।সামনে টেবিলের উপর পানির বোতল,কিছু ঔষধ, সাথে গাঁদা ফুলের সুঘ্রাণ। চেয়ালের উপর নিলীমা ঘুমিয়ে আছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি,কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি মাদার তেরেসা,যীশু, ঈশ্বর, মরিয়ম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করলাম আমি হাসপাতালে। কিন্তুু আমি হাসপাতালে কেন?কিছুই মনে পড়ছে না। আমার হয়েছে'টা কী?আমি কতদিন এখানে ছিলাম? নানা প্রশ্ন মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছিল।কিছুই মনে করতে পারছিলাম না।
নিলীমার দিকে তাকিয়ে দেখি,সে এখনো ঘুমাচ্ছে!ঘুমের ভিতরে এত সুন্দর লাগে,জীবনে কল্পনা করিনি তো!শিশুর মতো লাগছে, ঘুমাচ্ছে। দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে।খেয়াল করলাম, আমি এবং নিলীমা ছাড়া কেউ নেই,কিন্তুু কেন?আমার মনে হতে থাকলো আমার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে।
আবোল তাবোল চিন্তা করতে করতে সকাল সাতটা বাজে।বার বার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।মনে মনে আওড়াতে থাকলাম,আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা....আমার কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা..কি যে আবোল তাবল বকছি?মনে করার চেষ্টা করছি, আমার কি হয়েছে?
কিছুক্ষণই পরেই দেখলাম নিলীমা ঘুম থেকে উঠেছে, হাই তুলতে তুলতে বললো,"কবে উঠেছো?"।আমি বললাম, এই তো কিছুক্ষণ আগে।কোন প্রশ্নসূচক কথা না বলেই নিলীমা বলতে লাগলো,"তুই কী পাগল?জ্ঞান হারিয়ে আমাদের কে কি বিপদেই না ফেললা।তোমার কারণে আজকের পরীক্ষা দিতে পারিনি।তোমার জন্য এত রাতে দৌঁড়াদৌড়ি, হাসপাতালে নেওয়া,কত ঝামেলার পরে তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি, তোমার জন্য রাতে ঘুমাতে পারিনি। রাতে ডাক্তার এসে দেখল সব নরমাল স্বাভাবিক আছো।আমরা ভয় পেয়েগেছিলাম,কি না কি হলো।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।আর শালা তুই, ডং করো ডং।"
আমি কি ডং করলাম বুঝতে পারলাম না!
আমি কি ডং করলাম বুঝতে পারলাম না!
আমার বলার কিছু ছিল না। আমি চুপ করে ছিলাম।হঠাৎ নিলীমা কে অজান্তেই প্রশ্ন করে ফেলি, "আমার কি হয়েছিল? "নিলীমার মুখমন্ডল রাগের আগুনে জ্বলে উঠলো, বলতে লাগলো,"এই যে ব্যাটা তোর কি হয়েছিল নিজেকেই প্রশ্ন কর!তুই কি রে এই সামান্য বিষয়ে এত নার্ভাস হতে হয়?তোর কারণে আমার পরীক্ষা দেওয়া হলো না।তোরে যদি কসাইয়া ইচ্ছামতো থাপ্পড় মারতে মারতাম,শান্তি লাগতো"।মনে মনে ভাবতে লাগলাম, প্রশ্ন করা'টা বোকামি,সেইজন্য চুপ থাকায় শ্রেয়।নিলীমা নিজে থেকেই বলতে লাগলো,"তোর বন্ধুরা রাতে এসেছিল তোকে দেখতে, আমি পাঠিয়ে দিয়েছি।তোর মেয়ে বন্ধুরাও এসেছিল, চলেগেছে। আমি রাতে একাই ছিলাম।ভেবেছিলাম আমিও চলে যাবো। কিন্তুু তোর যে অবস্থা, তুই একটা অকেজো মানুষ, ভাবলাম থেকেই যাই।"
আমাদের দুজনের কথোপকথনের মাঝে ডাক্তার এসে উপস্থিত। ডাক্তার রির্পোট দেখে বললো,"মিস নিলীমা রোগীর কোন সমস্যা নেই,আপনি ইচ্ছা করলে এখনি বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন,তেমন কোন সিরিয়াস না"।তড়িঘড়ি করে আমরা হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম,সোজা ক্যাম্পাসের দিকে।আমি বললাম, "চলো ক্যাম্পাসের বাসে যাই "।নিলীমা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,আমি পাঠাও ডেকেছি, এখনি চলে আসবে।পাঠাও চলে আসলো,প্রাইভেট গাড়ি।
হাসপাতাল থেকে বের হওয়া মাত্রই স্বর্গের সুখ, ক্যাম্পাসে যাচ্ছি আনন্দ লাগছে।আমার মুখে এক চিলতে হাসি।হাসি দেখে নিলীমা রাগের স্বরে বললো,"হাসির কি আছে?"আমরা ক্যাম্পাস যাচ্ছি না।আমি অবাক হয়ে গেলাম , তাহলে যাচ্ছি কোথায়?আমরা না ক্যাম্পাসে যাবো?নিলীমা মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো,যাওয়ার কথা বলেছিলাম, এখন যাবো না। আমরা যাবো অন্য কোথাও.........
No comments