যেত্রা মাহারি বাড়ি,রাজাই;সুনামগঞ্জ।।গারো গ্রাম-৪।।
যেত্রা মাহারি বাড়ি,রাজাই;সুনামগঞ্জ।
জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
উনার সাথে |
বেশিদিনের কথা নয়, কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জ সিলেট থেকে ঘুরে আসলাম।অনেক ঘটনার মাঝে স্মরণীয় কিছু টুকরো স্মৃতি জমা থাকে।সেখান থেকেই একটি আবেগী সময়ের মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।আমাদের ভ্রমণের শেষের তৃতীয় দিন গারো অধ্যুষিত গ্রাম ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম। এক পর্যায়ে একটি গারো গ্রামে ঝর্ণা দেখতে গেলাম।ক্লান্ত শরীরে ঝর্ণার পানি খাওয়া মাত্র শরীরে শক্তির ভাব চলে আসলো।খেয়াল করলাম ঝর্ণার পানি এত সুস্বাদু এবং পরিষ্কার বিশুদ্ধ, না দেখলে বিশ্বাসী করবেন না।যতই পানি ফিল্টার করে খাই না কেন, সেই ঝর্ণার পানির মতো হবে না।আরো খেয়াল করলাম,আশে পাশের যতগুলো গারো বাড়ি আছে, সবাই এই ঝর্ণার উপর নির্ভরশীল। ছোট ঝর্ণার পানিতে অনেকে গোসল করলো আবার আমাদের কয়জনের গোসল করতে হবে; এমন কোন উদ্দেশ্য ছিল না বিধায়, আমরা গ্রামের গারো পরিবার দেখতে পাহাড়ের উপড়ে উঠে গেলাম ।
অনেকগুলো গারো পরিবার দেখেছি,কথা বলেছি,যথা সম্ভব খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি।আমাদের কে দেখে তাঁরা যে কত খুশি হয়েছে, তা বুঝতে পেরেছিলাম। স্বজাতি মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ মোটেও খারাপ মুহূর্ত হতে পারে না।অনেক আন্তরিকতার সাথে কথা বলেছে, আমাদের কে সময় দিয়েছে, তাঁরা কেমন আছে?কি অবস্থায় আছে? এবং মোটামোটি সবকিছু জানার সৌভাগ্য হয়।নিচের ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন কত মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম, কথা বলেছিলাম। বোধয়,আমরা একে অপরের মনের কথা বুঝতে পারছিলাম।তাঁরা যেন সবসময় ভালো থাকে এই প্রার্থনা করি।
কথা বলছিলাম |
ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি পরিবারে গিয়ে উপস্থিত হলাম।প্রাথমিক কথা বার্তা শেষে জানতে পারলাম উনি আমাদের আত্নীয়!সেকি,মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! আমাদের আনন্দের সীমা রইলো না।বিস্তারিত কথাবার্তা বলার শেষে জানতে পারলাম তিনি দূরের কেউ নন, আমাদের গোষ্ঠীর সে একজন সদস্য।আমাদের গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এইটা এক সুবিধা যেখানেই যায় যে প্রান্তে'ই যায় নিজের মানুষ কিংবা আত্নীয় পাওয়া যাবেই।
মনে মনে সংকল্প করেছি আবার যদি কোন দিন সুনামগঞ্জ যায়।তাহলে আমি সেই বাড়িতে গিয়ে উনাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে আসবোই।দেখা করে একবেলা ভাত খেতে তো সমস্যা হবে না!!কোনদিন ভাবতে পারিনি,এত দূরে গিয়ে আত্নীয়'র দেখা মিলবে।যখনি জানতে পারলাম আমাদের লোক মানে গোষ্ঠীর লোক, তখন আবেগঘন এক পরিবেশ। চোখের জল চলে এসেছিল।এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, সুনামগঞ্জ কোথায় আর মধুপুর কোথায়?কত না জানি আরো কোথাও কাছের আত্নীয় আছে?
আত্নীয়'র দেখা পাওয়া জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত বলবো,কেন না কল্পনার চিন্তার বাইরে কাছের মানুষের সাথে দেখা হওয়া, সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।আমি জানি না,তাঁরা কেমন আছে? কিভাবে বেঁচে আছে? সংসার কেমন করে চলে?
অনেক সুন্দর জায়গা
সবসময় প্রার্থনা থাকবে, তাঁরা যেন ভালো থাকে, সুখে থাকে।যে বাড়িটি'র কথা বলছিলাম,সেই বাড়ি যেত্রা বাড়ি ছিল।পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে দেখা না হলেও বাড়ির মালিকের(কর্ত্রী) সাথে দেখা হয়েছিল। কিছু সুখ দুঃখের কথা বার্তা হয়েছিল। দশ কিংবা পনেরো মিনিটের মতো ছিলাম।এত অল্প সময়ে সবকিছু তো আর বলা যায় না শেয়ার করা যায় না।যাকে বলে,শেষ হয়েও হলো না শেষ।
ভারত বর্ডার |
সবসময় প্রার্থনা থাকবে, তাঁরা যেন ভালো থাকে, সুখে থাকে।যে বাড়িটি'র কথা বলছিলাম,সেই বাড়ি যেত্রা বাড়ি ছিল।পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে দেখা না হলেও বাড়ির মালিকের(কর্ত্রী) সাথে দেখা হয়েছিল। কিছু সুখ দুঃখের কথা বার্তা হয়েছিল। দশ কিংবা পনেরো মিনিটের মতো ছিলাম।এত অল্প সময়ে সবকিছু তো আর বলা যায় না শেয়ার করা যায় না।যাকে বলে,শেষ হয়েও হলো না শেষ।
অল্প সময়ে কাছের মানুষ কাছে পাওয়া, নিশ্চিয় আফসোস লাগবে।আফসোস তো লাগবেই, এত দূর মধুপুর টু সুনামগঞ্জ। আর কোনদিন দেখা হবে কিনা বা সুনামগঞ্জ যাওয়ার সৌভাগ্য হবে কিনা বা সে আসতে পারবে কিনা, আমি জানি না।সেই জন্য কিছু ছবি মোবাইল ফোনে তুলে নিয়েছিলাম।কিছু স্মৃতি দুঃখের হলেও আনন্দ থাকে,ভালোবাসা থাকে।
আবার যদি সুনামগঞ্জ যাই,যেতে পারি, আমার আত্নীয় বাড়ি, আমি যাবোই।
No comments