সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না।। জাডিল মৃ।।রিভিউ-১।।

সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না
জাডিল মৃ(Jadil Mri)


জাডিল মৃ
ছবি-লেখক।



"সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না", বইটি অনেক প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান একটি বই। আমি মনে করি,প্রত্যেক গারো যুবক যুবতীর(সবার কাছে) কাছে এই বইটি থাকা আবশ্যক। কেন না হয়তো আবার কেউ ভুলে বলতে পারে, আমাদের দেবতার নাম "সাংসারেক", সেই জন্য আমরা ওয়ান্না পালন করি!!

আমাদের কতটুকু ব্যর্থতা আছে,নতুন প্রজন্মের কাছে কী শিক্ষা দিতে পারছি,তা বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।দিন দিন ইতিহাসের শিক্ষা থেকে যে বরং পিছিয়েই যাচ্ছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।আমাদের ইতিহাসের সাথে সংম্পৃক্ত, বই পড়ার যে অভ্যাস, জানার আগ্রহ যে নেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই।এই বইটি অজানাকে জানার জানালা খুলে দিয়েছে।

যাইহোক, বইটি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার আগে বইটি'র নাম সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন ।কারণ বইটির নাম সম্পর্কে জানা থাকলে আপনা আপনি বইয়ের বিষয়বস্তুু সম্পর্কে ধারণা চলে আসবে। আমরা জানি বইটির নাম  “সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না” তবে
এখানে প্রথমেই বুঝতে হবে, সাংসারেক মানে কি? মান্দিরাংনি মানে কি?এবং ওয়ান্না মানে কি?


প্রথমত,"সাংসারেক", হলো গারো জাতির আদি ধর্ম।যে ধর্ম স্মরণাতীতকাল থেকে এখন পর্যন্ত গারো জাতি নিজস্ব ধর্ম নিয়ে বেঁচে আছে।যদিও খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ফলে সাংসারেক ধর্ম অনুসারী লোকসংখ্যা কমেগেছে তাই বলে যে হারিয়েগেছে এমনটা বলা যাবে না।সাংসারেক ধর্মের অস্তিত্ব কিংবা অনুসারী এখনো আছে।

দ্বিতীয়ত,মান্দিরাংনি বলতে গারোদের/ গারো জাতির লোকদের বুঝায়।গারো জাতির লোকজন নিজেদের কে পরিচয় দিতে মান্দি শব্দ ব্যবহার করে থাকে।যখন অপরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে পরিচিত হতে চাই বা নিজেদের কে নিজেদের মধ্যে পরিচয় দিতে আ’চিক মান্দি বা মান্দি শব্দ ব্যবহার করে। মান্দি শব্দের বাংলা অর্থ মানুষ আবার আ’চিক মান্দি অর্থ পাহাড়ের মানুষ।

তৃতীয়,সময়ের পরিক্রমায় ওয়ান্না  ত্রখন ওয়ানগালা নামেও অধিক পরিচিত।ওয়ান্না মূলত জুম চাষ বা হা’বাহুআ কেন্দ্রিক এক ধর্মীয়- সামাজিক-সাংস্কৃতিক কৃত্য ও কৃত্যকেন্দ্রিক উৎসবের নাম।ওয়ান্না উৎসবটি এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হয়। যদিও সাংসারেক নিয়মঅনুযায়ী পালন করা হয় না।
 
যদি আমরা বইটি দেখি তাহলে দেখতে পাবো ”সাংসারেক মান্দিরিাংনি ওয়ান্না” বই প্রথম প্রকাশিত হয় ০৯ আগস্ট ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ।যদিও বইটি লেখা শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে । যখন  খ্রিষ্টধর্মের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে  চুনিয়া গ্রামের সাংসারেক খামাল জনিক নকরেক এর অদম্য ইচ্ছায় তার উদ্যোগেই প্রায় চল্লিশ বছর পরে আবারও ২০০৩ সালের ২২-২৪ নভেম্বর টানা তিনদিন ধরে সাংসারকদের ওয়ান্না উপযাপিত হয়। এই ভাবেই আবার আদি র্ধম সাংসারেক এর ওয়ান্না উৎসব শুরু হয়। এই দীর্ঘ বিরতির কারণ ছিল মূলত একটি ধর্ম থেকে আরেক ধর্মের প্রতিস্থা্পন ,একটি জীবন বিশ্বাস থেকে আরেকটি জীবন বিশ্বাসে গমন ।

সাংসারেক ওয়ান্না বইটি সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত।মূলত ওয়ান্না বা ওয়ানগালা সম্পর্কে বলা হলেও গারো জাতির সাথে সংস্পৃক্ত অনেক কিছুই এখানে বলা হয়েছে এবং প্রক্রিয়ার কথাও বলা হয়েছে ।যা সত্যই একজন গারো হিসাবে জানাটা জরুরি।


বইটি যে সত্যিই অতি মূল্যবান সম্পদ তা বলার অপেক্ষা রাখে না্। আমি বিশ্বাস করি গারো জাতি সম্পর্কে যে কোন গবেষণা /অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বইটি লাগবে তো লাগবেই ।কারণ বইটিতে ওয়ান্না সম্পর্কে কিংবা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে যেভাবে  পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ বিশ্লেষণ করে লেখা রয়েছে তেমন অন্যান্য লেখা বা বইয়ে নাই।আমি এক কথায় বলবো সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না বইটি অসাধারণ এবং গারো জাতির জন্য ঐতিহাসিক অমূল্য সম্পদ । 


সাংসারেক ধর্ম সম্পর্কে জানতে হলে,গারো জাতি সম্পর্কে জানতে হলে,ওয়ান্না সম্পর্কে জানতে হলে, অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।যেহেতু ছবিসহ বইয়ে সবকিছু দেওয়া আছে,সেহেতু অতি সহজেই আপনারা যে বিষয়ে জানতে চান তা সহজেই বুঝে যাবেন।



প্রকাশনী-থকবিরিম প্রকাশনী
বইটির মূল্য-৪৫০ টাকা (মাত্র)
সংগ্রাহক ও সংকলক 
পরাগ রিছিল এবং জুয়েল বিন জহির।

এই বইটি পাওয়া যাবে ,
"অপসান"(অনলাইন) এবং থকবিরমি প্রকাশনী ।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.