গারো বিউটিপার্লার মালিক ও কর্মী নিয়ে ভাবনাযুক্ত - লেখা ।।জাডিল মৃ।।
গারো বিউটিপার্লার মালিক ও কর্মী নিয়ে ভাবনাযুক্ত - লেখা ।।জাডিল মৃ।।
জাডিল মৃ(Jadil Mri)
(সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত)
১.
দেশের সবচাইতে বিউটিপার্লারে কর্মী হিসাবে কাজ করে গারো জাতিগোষ্ঠী(আদিবাসী) থেকে।আবার উল্লেখ্যযোগ্য পার্লারের মালিকও রয়েছে।কিন্তুু এই করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারণে পার্লার কর্মী ও পার্লার মালিকের অবস্থা ভালো নেই।সত্যিই ভালো নেই।পরিচিত অনেক পার্লার কর্মী ও মালিক কে গ্রামে চলে আসতে দেখেছি। কারণ কোন ইনকাম নাই বলে।আবার অনেকের পার্লার বন্ধ হওয়ার উপক্রম,জমানো টাকা কিংবা পুঁজি শেষ হয়েগেছে। অনেকের আবার পুঁজি শেষের দিকে।অন্যদিকে অনেক কর্মীর চাকরি চলেগেছে।লকডাউনের পর অনেকে বেতন পেয়েছে বা অর্ধেক পেয়েছে আবার অনেকেই কোন বেতন পাইনি।আদিবাসীদের মধ্যে গারো জাতিগোষ্ঠী থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতো পার্লারে। যা আজ খুবই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।কবে এই সংকট শেষ হবে কারো জানা নেই।
২.
অনেক পরিবার আছে; গ্রাম আছে।যারা মেয়ে সন্তান হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়/হতো।কারণ হতে পারে,এক-একটু বড় হলে পার্লারে কাজ করতে পাঠাবে।মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দিবে।দুই-কামাই করে তো খাওয়াবে সাথে মেয়ের জন্য জামাই আনবে।প্যারাহীন জীবন।ছেলে সন্তান হলে পার্লারে পাঠাতে পারবে না, পড়াশুনা করাতে হবে খরচ আছে। কিন্তুু মেয়ে সন্তান কে লেখাপড়া না করিয়ে পার্লারে পাঠাতে পারবে।
অবশ্যই আরেকটা কারণ আছে যাদের পরিবারের অবস্থা শোচনীয় থাকে, তারা পাঠায়।আবার অনেকেই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অসচেতনতার কারেও পাঠাই আবার নিজের ইচ্ছাতেও অনেক মেয়ে চলে যায়।
৩.
সরকার সম্প্রতি সৌন্দর্য থাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে।তাতে পার্লারে চাহিদা কমবে না বরং আরো বাড়বে, বেড়েই চলবে।সে-দিক দিয়ে কাজের চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি কাজের লোক দরকার।আগের চাইতে গারোদের পার্লার কর্মী হিসাবে যাওয়া কমেছে।সে কারণে কর্মী সংকট দেখা দিবে।মেয়েদের পড়াশুনা করাচ্ছে,অভিভাবকরা পড়াশুনার দিক দিয়ে সচেতন হচ্ছে ।কিন্তুু এখন নতুন ট্রেন চালু হয়েছে,যে ট্রেনে চড়ে বর্তমানে যাচ্ছে বা পাঠাচ্ছে নার্স হতে।যে সময় যে বাও,আরিকি!সবাই একি পেশায় যুক্ত হলে পরে প্রকট সমস্যা তৈরি হয় কি?
৪.
এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাস্তবেদেখছি,যারা চলনসই তাদের(পার্লার কর্মী) স্বামী কাজ করছে মাঠেঘাটে। আবার যাদের কাজ না করলেই নয় এক সাথে স্বামী স্ত্রী তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে।যেহেতু চাকরি নাই, ইনকামও নাই। কিন্তু এখানে কথা আছে যারা ছোটবেলা থেকে পার্লারে কাজ করে। যাদের বেতন এখন ২৫ হাজার, ৩০ হাজার,৪০ হাজার (কমবেশি হতে পারে) তাদের দ্বারা কী মাঠেঘাটে কাজ করা সম্ভব!!যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।আবার যারা ইতিমধ্যে দুই,তিন কিংবা তারও অধিক বছর হলো পার্লারে কাজ করছে। তাদের দ্বারাও কাজ করা সম্ভব বলে মনে করি না। তাহলে উপায় কি?উপায় তো বের করতে হবে আমাদের, এই সময়ে...নতুন করে ভাবনা ও সামাধান দরকার।
৫.
আবার অনেক পরিবার আছে যারা নিজেরা কাজ করে না মেয়ের বেতনের উপর নির্ভর করে সংসার চলে।যা এই করোনাকালে আপনাদের অদ্ভুত এক ধরনের সত্য বাস্তব গল্প শুনাবো-মেয়ে ছোটবেলা থেকে পার্লারে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।আজ পর্যন্ত নিজের জন্য কিছু করা হয়নি। সংসারে যা প্রয়োজন যেটা প্রয়োজন একটু একটু করে জমানো টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে।মোটা অংকের ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা শোধ করতে হয়েছে।যখন সব টাকা শোধ হলো তখন আবার তার মা ঋণ তুলতে চাই।কেন জানেন?সে-ই ঋণের টাকায় নিজের জন্য সোনায় বাঁধানো কানের দুল,চুরি,মালা বানাবে তাও আবার এই করোনাভাইরাসের সময়ে।মানুষ কত বিলাসিতা হতে পারে কিংবা এই সময়ে কত ধরণের বিলাসি চিন্তা ভাবনা করতে পারে।আমার কাছে ব্যাপারটা অনেক অদ্ভুত লেগেছে।অবশ্যই বিষয়টা চিন্তার বিষয়।ঋণ করতে দিবে না বলার কারণে মেয়েকে আজ অপমানিত হতে হয়েছে।মেয়ের সাথে সংসার করবে না, একসাথে খাবে না,কত কী বাহানা; অদ্ভুত!! কত ঘটনা যে ঘটে আশেপাশে,একেক'টা গল্প।সেই মেয়েটি করোনার কারণে ভুক্তভোগী যেহেতু কোন ইনকাম নেই।
৬.
গারো পার্লার কর্মীর অনেক না বলা কথা রয়েছে, যা ভাবনার বিষয়।এই সংকটাপন্ন মুহূর্তে তা আরো প্রকট রুপ নিয়েছে।সবাই যেমন করুণ অবস্থায় আছে ঠিক তেমনি পার্লার কর্মীরাও ভালো নেই।তাই তো প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকাতে পার্লার কর্মীদের নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে।আরো অন্যান্য নিউজগুলোতেও নিউজ করা হয়েছে।
৭.
এখানে দু'টো বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
আমার কাছে মনে হয়েছে যেহেতু সৌন্দর্য থাতকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করেছে।সেহেতু কর্মীর চাহিদা বাড়বে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রসার ঘটবে।সেই জন্য (১) কত সংখ্যক গারো পার্লার কর্মী আছে তা সঠিক তথ্য আমাদের জানা প্রয়োজন।(২) গারো পার্লার কর্মীদের শক্তিশালী মালিক ও কর্মীর সংগঠন থাকা আবশ্যক। কেন না আমরা প্রায় কর্মীদের অভিযোগ, অত্যাচার বিভিন্ন ধরণের সমস্যা শুনি।হয়তো আরো বিষয় থাকতে পারে যেমন- তহবিল গঠন,সমিতি,মাতৃকালীন ছুটি,বেতন প্রক্রিয়ার ধাপ,সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুুুুটি,এককালীন অবসরভাতা, বিনোদন ছুটি ইত্যাদি।পার্লার কর্মীদের নিয়ে অনেক সংগঠন ইতিমধ্যে কাজ করেছে।কিন্তু তা আরো প্রয়োজন আছে বলে তা মনে করি।এবং গারো পার্লার কর্মী ও মালিকদের শক্ত সংগঠন ও সংঘটিত দরকার।হয়তো এমন সংগঠন থাকলে এই প্রাদুর্ভাবের সময় অনেক উপকার হতো, সংগঠন হলে ভবিষ্যতেও হবে।
৮.
পার্লার কর্মী ও মালিকদের কে নিয়েও আমাদের ভাবনার দরকার আছে।কারণ পার্লারের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ওতপ্রোতভাবে অনেক মেয়ে জড়িত ছিল বলেই কারো সংসার চলেছে,পড়াশুনা করিয়েছে,সংসারে সাহায্য করেছে,কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে,কাজের নিশ্চিয়তা পেয়েছে,অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে,টাকা পয়সা হয়েছে,আবার কেউ নতুন জীবন পেয়েছে ... প্রভৃতি।
সুতরাং, ভাইরাসের কারণে আবার নতুন করে ভাবতে হবে।হয়তো কেউ এগিয়ে আসবে,নতুন কিছু সমাধান দিবে,পার্লার কর্মী ও মালিকদের জন্য কাজ করবে এই প্রত্যাশা করি।
খুব ভালো লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। জাদিলের লেখার হাত ভালো। এগিয়ে যাও অনেক উঁচুতে পৌছে যাবে।
ReplyDeleteখুব ভালো লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। জাদিলের লেখার হাত ভালো। এগিয়ে যাও অনেক উঁচুতে পৌছে যাবে।
ReplyDelete