গারো তাঁত শিল্প "আসকিপাড়া"।
গারো তাঁত শিল্প "আসকিপাড়া"।
জাডিল মৃ
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
![]() |
কাজের জায়গা |
বর্তমানে গারোদের তাঁত শিল্প বা হাতে বুনা কাপড় নেই বললেই চলে।তবে, একেবারেই যে নেই, এমনটা বলা যাবে না।কারণ ইতিপূর্বে "গারোদের তাঁত শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে" লেখায় তিনটি জায়গার নাম উল্লেখ্য করেছিলাম।যেখানে বর্তমান সময়েও তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বিরাজমান।এখন তাঁত শিল্প কতদিন চলবে বা টিকে থাকতে পারবে, সেটা সময় বলে দিবে।আমার বলার বাইরেও আরো, গারোদের তাঁত শিল্প থাকতে পারে, তবে আমার জানা নেই।বর্তমান সময়ে তাঁত শিল্প পণ্যের চাহিদা কিন্তুু প্রচুর এবং সম্ভাবনার একটা জায়গা বটে!যেটা কিনা সত্যিই ইতিবাচক। তবে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলেই তাঁত শিল্পে সফল হওয়া সম্ভব। প্রথমে অনেক পরিকল্পনা থাকা দরকার এবং বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। তবে যে কেউ চেষ্টা করলে উদ্যোক্তার পথ খুলে যেতে পারে।তাঁত নিয়েও বিস্তর গবেষণা করা দরকার ,যা আগের লেখাটিতেও বলেছি।নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার আইডিয়া হতে পারে এই তাঁত শিল্প।
![]() |
সুতা |
আইপিডিএস এবং একশএড এর প্রোগ্রামের সুবাধে আসকিপাড়া গ্রামে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়।এর আগের বার দুইবার গিয়েছি,তবে তৃতীয় বারে মাথায় তাঁতের সন্ধান পেয়েছি মানে নিজের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।যারা সেখানে কাজ করছিল ব্যক্তিগতভাবে নিজে গিয়ে কথা বলেছি এবং কিছু সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে।উনাদের সাথে মেশার জন্য আমার কিছুটা বেগ পেতে হয়। প্রায় দশ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, উনাদের কাজগুলো দেখেছিলাম। সময়ের সাথে সাথে, আস্তে আস্তে প্রশ্ন করতে থাকলাম, তবে আমি সুবিধা করতে পারছিলাম না।অনেকক্ষণ কাজ করার পরে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বিশ্রামের জন্য এক কোণায় চলে গেল,সাথে সাথে আমিও সেই জায়গাটাই চলে গেলাম।প্রথমে সুবিধা করতে না পেরে, পরের ধাপে আমার উত্তরী দেখানোর প্রস্তাব করলাম এবং উনি সাথে সাথে রাজি হয়েগেল। উত্তরীটা ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর, খাগড়াছড়ি থেকে উপহার পেয়েছিলাম। সবকিছু বর্ণনা দেওয়ার শেষে জিজ্ঞাসা করলাম, বানাতে পারবে কিনা?উত্তরে বললো,"পারবে, তবে এইটা করতে জিনিস লাগবে, আমাদের কাছে তা নেই"।এইতো আড্ডা বেশ জমে গেল।
তখন টুুপটাপ বৃষ্টি পড়ছিল, মাঝে মাঝে ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে ঝাঁকুনি দিচ্ছিল।
নিজের মতো করে প্রশ্ন করতে থাকলাম,উনারা উত্তর দিতে লাগলো।উনাদের উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
নিজের মতো করে প্রশ্ন করতে থাকলাম,উনারা উত্তর দিতে লাগলো।উনাদের উত্তরগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
আপাতোত, এখানে আমরা তিন জন কাজ করছি।আগে অনেক জন কাজ করতো,অনেক কিছুই তৈরি হতো।এখন সীমিত আকারে কাজ করতে হয়।যখন অনেক মানুষ ছিল তখন এখানে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ ছিল।এই কাজের পরিশ্রম অনেক বেশি,এত কষ্টের কাজ কে করতে চাইবে?আগে যারা কাজ করতো তারা অনেকে ঢাকা চলেগেছে। আমরা আছি, নিজের সংসারে কিছুটা সাহায্য হয়,তাই করছি।বাড়িতে এমনি বসে থাকার চেয়ে কাজ করাটা ভালো না?মেয়েছেলে লেখাপড়া করছে, সংসারের টুকিটাকি জিনিস কিনতে হয়,তাই করছি।আমাদের বেতন নির্দিষ্ট, কাজের চাপ থাকলে বাড়তি সময় দিতে হয়।আর আমাদের রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে,যদি বেশি সমস্যা বা ঝামেলা থাকে, তখন ছুটি নিতে পারি।আমাদের কাজের বয়স অনেক বছর হলো কারোর পনেরো, আটারো কিংবা বিশ বছর।
আমাদের কাজ আস্তে ধীরে করতে হয়,তাড়াহুড়ো করলে কাজের মান ঠিক থাকে না, তাই সময় নিয়ে করতে হয়।এই কাজে অনেক ধৈর্য লাগে,ধৈর্যহীন মানুষ এই কাজ করতে পারবে না।এই কাজ শিখবে এমন মানুষ আর নেই।সবাই আরাম আয়েশ চাই,এত কষ্ট কে করবে?আমরা যখন থাকবো না,এই কাজগুলো থাকবে কিনা, আমি জানি না।নতুন কেউ যদি হাল না ধরে হয়তো কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।আমাদের তাঁত হারিয়ে যাবে।
আমাদের কাজ আস্তে ধীরে করতে হয়,তাড়াহুড়ো করলে কাজের মান ঠিক থাকে না, তাই সময় নিয়ে করতে হয়।এই কাজে অনেক ধৈর্য লাগে,ধৈর্যহীন মানুষ এই কাজ করতে পারবে না।এই কাজ শিখবে এমন মানুষ আর নেই।সবাই আরাম আয়েশ চাই,এত কষ্ট কে করবে?আমরা যখন থাকবো না,এই কাজগুলো থাকবে কিনা, আমি জানি না।নতুন কেউ যদি হাল না ধরে হয়তো কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।আমাদের তাঁত হারিয়ে যাবে।
![]() |
কাজগুলো-১ |
![]() |
কাজগুলো-২ |
![]() |
কাজগুলো-৩ |
উনাদের কথার সাথে আমি একমত,নতুন কেউ যদি হাল না ধরে হারিয়ে যেতে আর বেশিদিন নেই।সেখানে যারা কাজ করছে,তারাও তো সারাজীবন কাজ করতে পারবে না।প্রত্যেক কর্মে বা বিষয়ে যেমন শুরু আছে তার শেষও তো আছে।সেই হিসাবে নতুনত্ব কিংবা নতুন'রা না আসলে তাঁত শিল্প, নাই হয়ে যাবে।যতটুকু এখন দেখছি,গারো পণ্য পাচ্ছি,তখন কোনটাই পাবো না।
![]() |
সুতা |
তরুণ উদ্যোগতা বা যারা চিন্তা করছেন কাজ করতে হবে,যারা তাঁত নিয়ে আগ্রহী সময় নষ্ট না করে কাজ শুরু করে দেওয়াটাই উত্তম।
মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে বর্তমানে আমরা কি করছি তা দিয়েই।
No comments