আমি একজন "গারো"

Ja'Dil Mri







আমি একজন গারো জাতিগোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে নিজেকে সব সময় গর্ব করি।গর্ব    করি এই জন্য যে, আমি একজন গারো, কারন এমন কিছু আমায় আকর্ষণ করেছে যেটা কিনা আমি  কখনো অনুশোচনা বা লজ্জা মনে করিনি বরং বার বার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে,বার বার প্রেমে পড়েছি।অনেক বাঙালি বন্ধুকে মুখে বলতে শুনেছি, "তুই তো উপজাতি ব্যাটা,বাঙালির একটা অংশ,নিজেকে বাঙালি মনে করিস না?"তাদের কথা শুনে থতমত খেয়ে যেতাম।আরে আমি কাদের সাথে মিশছি?এরা কারা যাদের কে এতদিন বন্ধু ভেবে এসেছিলাম!বরং তাদের কথায় আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাতাম, এখনো করি ভবিষ্যতেও করবো,নিজেকে গারো হিসাবে জাহিড় করতে নিছক সময় ব্যয় করি না। আরে বাবা লজ্জার কি আছে?বরং সব চাইতে তো আমাদেরি বেশি গর্ব করা উচিত, যদিও বা আমাদের কিছু সমীবদ্ধতা রয়েছে,আমরা চাইলেও অনেক কাজ করতে পারি না, আমাদের লোকসংখ্যা কম,তা সত্ত্বেও গর্ব করা বাদ দেওয়া যাবে না।

যারা নিজেদের কে আধুনিক মনে করি এমন কী কতক মানুষ নিজেকে গারো পরিচয় দিতে লজ্জায় মুখ ফ্যাকাসে হয়ে  যায়, মনে হয় যেন সে একটা বর্বর মানুষ।অনেকে আবার ঠিকি গর্ব সহকারে নিজেকে গারো হিসাবে পরিচয় দেয়, কিন্তুু শেষে কি হলো!নিজের মাতৃভাষা পারে না,নিজেদের সম্পর্কে কোন ধারণা নাই,যেহেতু নিজের সম্পর্কেই ধারণা নাই সেহেতু সমাজ,সংস্কৃতি, ইতিহাস,রাজনীতি,অর্থনীতি,মাতৃতান্ত্রিক,ধর্ম,সমাজ ব্যবস্থা, প্রচলিত আইন প্রভৃতি এই সব বিষয়ে তো কোন ধারণার বালাই নাই,তখন নিজেকে বোকা বানানো ছাড়া কোন কিছুতে নিজেকে জাহিড় করতে পারে না।আমি জানি, সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে আস্তে আস্তে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন হতে থাকবে। তাই বলে এমন না যে গা ভাসিয়ে দেব,স্রোত যে দিকে যায় সেই সেদিকেই যেতে হবে(বিশেষ ক্ষেত্রে যাওয়া যায়)।নিজেকে গারো হিসাবে পরিচয় দেওয়া যেমন গর্বের আলাদা একটা স্বাদ আছে, তেমনি গারো হিসাবে পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে জানা সবচেয়ে বড় জরুরি।সব সময় আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে,যদি ভাবনাটা করতে না পারি গারো জাতির জন্য কিছু করতে পারব না।অবশ্য আমাদের  চিন্তা ভাবনার মানুষের অভাব নেই(আলতু ফালতু চিন্তা), কিন্তুু কর্মঠ মানুষের বড়ই অভাব।এমন কিছু ভাবতে হবে চিন্তা করা দরকার সবকিছুই যেন  সময় উপযোগী হয়,যার সুবাধে সময়ে তালে তালে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়।

"গারো" নামটা বিশেষ ভাবে আমার ভালো লাগার একটি শব্দ।শুনা কথা, সেটা হচ্ছে ঘারুয়া থেকে গারো শব্দটি সৃষ্টি।যদিওবা শুনা কথা তবে আমার খুব পছন্দের।কারণ ঘারুয়া হচ্ছে যে ঘাইরা বা জেদি।আমরা এমন জেদি ছিলাম যে যেটা করবে তো করবেই, যতই বাঁধা আসুক যেটা বলেছে সেটা করেই ছাড়বে।সব ক্ষেত্রে যে নিজের বা জাতির মঙ্গল জনক হতো সেটা কিন্তুু নয়।তবুও আমার কাছে গারোদের প্রায় সস্তত কিছুই ইতিবাচক।অনেক ক্ষেত্রে একটু ব্যাঘাত ঘটে,চারপাশের পরিবেশের চাইতে সেটা খারাপ বলে মনে হয় না।যেটা বলছিলাম,নিজেকে গারো হিসাবে পরিচয় দেওয়া আমি লজ্জার কোন কিছু দেখি না বরং  নিজেকে গারো হিসাবে পরিচয় না দেওয়া সেটাই লজ্জাজনক মনে করি এবং একটা অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সেটা কিভাবে লজ্জা এবং অপমানের,সেটা নিয়েই একটু আলোচনা করি কী বলেন?

প্রথমে, নিজেকে যদি জানতাম আমি কে?আমি কার ধারণ বাহক? আমার বা আমাদের কি আছে?আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, ইতিহাস সংস্কৃতি,আন্দোলন,সংগ্রাম, এবং আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের অবস্থান,সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ যদি আমাদের ধারণার মধ্যে থাকত তাহলে আমাদের এই রকম লজ্জা পাওয়ার কথা, আমি সেটা মনে করি না।লজ্জা সেই পাবে যে নিজেকে জানে না নিজেদের জানে না,জানার চেষ্টা করে না।ফলত না জানাই সম্মানেরর বিষয় নয়,নিজেদের অস্তিত্ব নিজেদের কেই জানতে হবে, অন্যের কাছে নিজের অস্তিত্ব জানা সেটা অপমান আর লজ্জা ছাড়া কিছু হতে পারে না।

আমরা অনেক সময় সংকোচবোধ করি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি গারো শব্দটি নিয়ে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এখানে দ্বিধা বা সংকোচেরর কোন কারন নাই।তুমি যদি গারো হয়ে থাকো, গর্বের সাথে বলবা।প্রশ্ন হচ্ছে, কেন গর্বের সাথে বলবা?সেটা নিয়ে  অনেকে চিন্তায় পড়ে যাবে।চিন্তার কোন কারন নাই।আমি একজন "গারো" সেটাই আসল কথা,আগে পিছে কি আছে দেখার সময় নাই।

সব সময় গর্ব করি আমি একজন "গারো"।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.