নিলীমা (দ্বিতীয় অংশ)
জা'ডিল মৃ
থেকে.... জানতে চাইলো আমি কে?মুখ ফসকে বলেই ফেললাম আমি জুমাং।মধুর কন্ঠে বলে উঠলো"আচ্ছা তুমি। কেন ফোন দিয়েছো"?
আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না,ওই দিনের মত আর কোন কথা হয়নি।আমি খুব ঘেমে গিয়েছিলাম,আমার বন্ধুরা খুব হাসতে লাগলো, আমি ভয়ে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোন দিন এমন পরিস্তিতির স্বীকার হতে হয়নি,আজকে এমন পরিস্তিতি আমাকে হতবাক করে দিলো।আমার জানা ছিল না শুধু মাত্র একটি মেয়ের সামনে এমন পরিস্তিতি স্বীকার হতে হবে। কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়নি,আমি বোকা বনে গিয়েছিলাম।
বন্ধুদের জোরাজোরিতে পরের দিন আবার ফোন দিলাম, চা খাওয়ার দাওয়া দিলাম।সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিলো,মনের ভেতর খুব কষ্ট পেলাম, প্রথম বলেই আউট!তেমন কোন দিন আর ফোনে কথা হয়নি।ফেইবুকে আমার নামে বন্ধুরা মেসেজিং করতো,আমি শুধু চেয়ে থাকতাম,তাদের অনুরোধে ৫০০ টাকার চকলেট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।কিন্তুু সে খেয়েছে নাকি খাইনি, আমি জানি না।দিন এমনি করে চলতে লাগলো, প্রায় প্রতিদিন ক্যাপাসে ভেতর দেখা হতো কোন কথা বলতাম না।আমি শুধু চেয়ে থাকতাম,মনে হতো তাকে ছাড়া বাঁচব না, তাকে আমার প্রয়োজন,তাকেই জীবন সঙ্গীনি হিসাবে আমি চাই।
সেই চাওয়াটাতেই আটকে থাকা, এখনো আমি তার পথ চেয়ে বসে আছি।কত মেয়ে প্রস্তাব দিলো,কত মেয়ে কাছে আসতে চাইতো,এখনো চাই।কেমন জানি সামান্যটুকু ও ভালো লাগা কাজ করে না, আমি শুধু চাই নীলিমা কে ।
নীলিমা, নীলিমা, নীলিমা!
অনেক দিন পরে যখন সহ্যের সীমা রইলো না, তখন কাছের বান্ধবীর মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠালাম যে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন।সেই একি অবস্থা সেদিন রাতেও আমার ঘুম হলো না।মনের ভেতর খুব জটফট শুরু হয়েছিল। কি আসে প্রস্তাবেরর উত্তর,মনের ভেতর নানা রকম প্রশ্ন ঘুরবাক খেতে লাগল।একবার ভাবি উত্তর ইতিবাচক হবে আরেক বার ভাবি নেতিবাচক।
মাথার মধ্যে হ্যাঁ - না
ঘুরপাক খেতে লাগলো।মনগুলো খুব অস্থির অস্থির লাগছিল,কোন মতে টেনশন দূর করতে পারছিলাম না।বন্ধুদের অনুরোধে প্রথম হাতে সিগারেট খেয়েছিলাম তখন বাজে রাত ২ টা।চারিদকে নিরব মানুষ জন নেই,সেই সুযোগটাই বেছে নিয়েছিলাম।এক কাপ চা হাতে সিগারেট চাঁদের আলোয় কেমন যেন এক প্রশান্তি পেয়েছিলাম।
কোন কিছু চিন্তা করে কোন ভাবেই শান্তি পেলাম না,সারারাত মনের ভিতর ইতিবাচক নেতিবাচক করেই কাটিয়ে দিলাম।সকাল বেলাতেই শুনি আমার ভাগ্য খারাপ,তার প্রেমিক আছে,অনেক দিনের প্রেম, তার পক্ষে সম্পর্ক করা সম্ভব না।আমি আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম,মনের ভেতর সাইনক্লোন শুরু হয়ে গেল।কোন দিন কোন মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়ারর প্রয়োজন মনে হয়নি,এতদিনের সাধ্যনার ফলাফল শূন্য।আমি প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলাম।
"না" শব্দটা প্রচন্ড রকম ভাবে আঘাত করলো, আমি থমতম খেয়ে গেলাম।আমার মধ্যে কি নাই ?সেটাই বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।আমার সাথে সম্পর্ক না হওয়ার কোন কারন খুঁজে পেলাম না, আজও খুঁজে পাইনি।মনে মনে শপথ নিলাম কোন মেয়েকে আর প্রস্তাব দেওয়া যাবে না।বন্ধুদের মধ্যে খুব জানাজানি হয়ে গেল, লজ্জায় আমার মুখখানা লাল হয়ে গেল।প্রায় এক সপ্তাহ মতো আমি বেহুশেরর মত পড়ে রইলাম।কোন কিছু করলাম না শুধু শুয়ে থাকি মোবাইল দেখি,কোন কিছুতে মন বসছিল না।আমি হতাশায় ডুবে গেলাম, কোন দিন এমন হবে কল্পনা করতেই পারছিলাম না।
নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল, মনে হচ্ছিল আমার পৃথিবী শূন্য, আমি একা পড়ে আছি।
বিকেল বেলা, হঠাৎ করেই আমার রুমের দরজার সামনে বন্ধুটি দাঁড়িয়ে আছে।আমার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো,আমি খুব থমতম খেয়ে গেলাম।কি এমন হয়েছে যে হাসি থামছে না, আমার মগজে খুঁজে পেলাম না কি হতে পারে!বন্ধুটি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো, "ওর তো প্রেমিক নাই"।আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, "ওর" মানে কে?তখন বন্ধুটি রাগে মাথায় বলতে লাগলো,"নেকামি করস,বুঝস না কেডা,নীলিমা, ব্যাটা"।
মনে হলো,মাথার মধ্যে কে যেন আঘাত করেছে।আমি এমন কথা শুনার জন্য প্রস্তুুত ছিলাম না, আমি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।আশার প্রদীপ আবার জ্বল জ্বল করে উঠতে লাগলো,সঙ্গে সঙ্গে চায়ের দোকানে চলে গেলাম। সুখবরটি দেওয়ার জন্য বন্ধুটির জন্য দোকানটিকেই রির্জাব করলাম।যত খুশি যত ইচ্ছা খেতে পারবে। মনের খুশিতে চায়ের সাথে দ্বিতীয় বারের মতো আবার সিগারেট টান দিলাম।নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছিল,মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার উপর দিয়ে বইছে...
অনেক কিছু পরামর্শ নিলাম,কিছু কৌশল পন্থা অবলম্বন করলাম।চারদিকে খোঁজ খবর বাড়াতে লাগলাম।কোথায় যায়, কি করে, কার সাথে থাকে, কি পছন্দ করে,কেমন প্রমিক চাই ইত্যাদি ইত্যাদি।সবকিছু অনুসরণ করতে লাগলাম।প্রত্যেক বিকালে পিছু পিছু হাঁটতে যেতাম,যতই পরীক্ষা থাকুক কোন দিন আড্ডাখানা মিস করতাম না,এখনো করি না।আমাদের মধ্যে কোন দিন আজ পর্যন্ত কথা হয়নি। সে যেখানেই যাক সেখানেই আমার উপস্থিতি থাকবে, সেটা না বললেও সবাই জানতো।
এমনি করে দিন যায়,ক্যাম্পাস ছুটি হয়,খোলে,সময় সময়ের মত করে চলতে থাকে। সবকিছু কেমন যেন পরির্বতন হতে থাকে, সবাই নিজের মত করে চলতে থাকে। আড্ডা দেওয়া এক কাপ চা খাওয়া কারোর এখন সময় হয়ে উঠে না।সবাই নিজেদের মত করে চলতে শুরু করেছে। আমি আগের মতই ছিলাম,তবুও নিজেকে খুুব পরিবর্তন মনে হচ্ছিল।তাকে আকৃষ্ট করতে অনেক কিছুই শিখে নিয়েছিলাম,অনেক কষ্টটে গিটার কিনেছিলাম।ক্যাপাসের ভেতরে মোটামোটি নাম ডাক ছিল,প্রচুর বই পড়তাম,বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম,ইতিমধ্যে কিছু বই বের হয়েছিল,প্রচুর লেখালেখি করতাম।সবকিছু মিলিয়ে হাত খরচ চলতো,ভালো দিনকাল চলছিল। এছাড়াও সে যেই সংগঠনে থাকতো আমিও সেখানে থাকতাম।সবকিছুর পরেও ভালোবেসেই চলছিলাম,কেমন করে যেন দিন যায়,
সময়টা অনার্স শেষের দিকে ঘটনা,
ইদানিং খুব দেখা হতো আমাদের,যেখানেই যায় চোখে চোখ পড়তো। যেভাবে তাকিয়ে থাকতো, নিজেরি লজ্জা হতো,নিজের কাজের জন্য অপরাধী মনে হতো, আমি আগে যেভাবে তাকিয়ে থাকতাম সেটার জন্য । আগের মতো এতটা তাকিয়ে থাকতে সাহস পেতাম না,মনে হতো এই বুঝি বকা দিবে, এই বুঝি কিছু একটা করে ফেলবে, কেমন যেন অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হতো ।তারপর কিছু দিন গেল,ক্যাপাসে ভিতরে একদিন খুব মজা করে একা চা খাচ্ছিলাম, বেনসন সিগারেট যেই আস্তেে করে সুখের একটান দিলাম;হঠাৎ করেই একটি মেয়ে এসে হাজির...ভালো মতো তাকিয়ে দেখলাম দেখি" নীলিমা"। আমি খুব ঘাপড়ে গেলাম, আমি অপ্রস্তুত ছিলাম নিলীমা এমন অসময়ে দেখব কল্পনাততেও আসেনি।খুব আশ্চর্যের কথা হলো হচ্ছে, কোন কিছু না বলে বলতে লাগলো"তুই সিগারেট এখনি ফেলে দে"আমি কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম মানে হতবাক।খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম,সিগারেট কি ফেলে দিব নাকি টান দিব!
আবার বলতে লাগলো "আমি বলছি ফেলে দে এখনি"।
কেন এত খবরদারি,বুঝতেই পারলাম না, মগজ শূণ্য হয়ে গেল।
No comments