কবি মতেন্দ্র মানখিন
জা'ডিল মৃ
ছবি:কবি এবং উনার স্ত্রীর সাথে আমরা।
মাথায় বৃষ্টি নিয়ে ভিজতে ভিজতে প্রিয় কবি মতেন্দ্র মানখিন কে দেখতে গিয়েছিলাম।
অনেক দিন যাবৎ ময়মনসিংহ হাসপাতালে যাওয়া হয়নি ফলত প্রায় বিশ ত্রিশ মিনিটের মত ঘুরাফেরা করে ৮ নাম্বার ওয়ার্ড ১৭ নাম্বার বেড খুঁজতে লাগলাম।পরিশেষে কবির দেখা পায়, গিয়ে দেখি তিনি বেডে বসে আছেন। খুব আশ্চর্যের কথা হলো,আমার ডানিয়ে ত্রিপুরা(বুনিং)বলেছিল,উনার শার্টে একটি কলম আর একটি টুকরো কাগজ দেখেছিল।আমি অবশ্য এত কিছু খেয়াল করিনি।অসুস্থটার মধ্যে থেকেও কেমন জানি এক ধরণের শক্তি পান, কবিতা লিখতে চিন্তা করতে। আমার দ্বারা বোধয় সম্ভব নয়।আমরা হয়তো এই থেকে বুঝতে পারছি তিনি কেন এত জনপ্রিয়, এত মানুষ কেন পছন্দ করে।
ছোটবেলায় অনেক কবিতা পড়েছি।কিন্তুু মানুষটি কে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি।অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল একদিন প্রিয় কবির সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবো।সেই দেখা সাক্ষাৎ আর হয়ে উঠেনি। শুধু উনার নামি শুনে গেছি,তিনি এতটা জনপ্রিয় আসলে আমরা প্রধান টপ লিস্ট যদি করি, তাহলে উনার নামি আগে আসবে।
উনাকে প্রথম দেখাতেই আমার পছন্দ হয়ে যায়,আসলে ব্যক্তিগত পছন্দে অনেক কিছু বিবেচনা করা হয়। আমিও বিবেচনা করেছি, আসল কথা হচ্ছে উনাকে পছন্দ না করে থাকতে পারা যায় না।
উনার সাথে প্রথম দেখা হয় ময়মনসিংহ কারিতাস আয়োজিত "শত প্রাণের সামাবেশ ২০১৮ "তার পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, আদিবাসী ছাত্র সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত "আদিবাসী দিবস ২০১৮"।প্রথম দেখাতে তেমন কথা বার্তা হয়নি,আসলে কথা বলার কোন সুযোগ ছিল না।সবসময় দূর থেকে দেখেছি, ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল পারিনি।কিন্তুু দ্বিতীয় বার দেখাতে সুযোগ হাত ছাড়া করিনি।উনার সাথে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করেছি,আড্ডা দিয়েছি, ছবি তুলেছি,খুব সুখের একটা সময় ছিল।তিনি যদি অসুস্থ না হতেন, হয়তো এত তাড়াতাড়ি আবার দেখা হতো না।যখন জানতে পারি তিনি অসুস্থ ময়মনসিংহ মেডিকেলে আছেন। তখন থেকে মন খুব জটফট করছিল, কবে দেখতে যাব কবে দেখতে যাব। আমার ডানিয়েল ত্রিপুরা(বুনিং) কে শুধু মাত্র একটি বার বললাম "চল যাই হাসপাতালে "।কোন কিছু জিঙ্গাসা না করে রাজি হয়ে গেল। হয়তো আগে থেকে জানতো আমাদের প্রিয় কবি অসুস্থ।
বিকালের দিকে প্রচুর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে আরম্ভ করলো,তবুও দমে যায়নি, মনস্থির করে রেখেছিলাম যে ভাবেই হোক কবি কে দেখতে যেতে হবে।যেই ভাবা সেই কাজ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গিয়েছিলাম।আমাদের সাথে দিপু দাও যোগ দিয়েছিল।আমরা তিন জনে মিলে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম।উনার স্ত্রী আমাদের সঙ্গ দিচ্ছিল, মাঝে মাঝে প্রিয় কবি কথা বলতো কিন্তুু অসুস্থতার জন্য এত কথা বলেননি,হয়তো বলার অনেক ইচ্ছা ছিল,কিন্তুু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বলতে পারেননি । তার পরেও আমাদের মাঝে অনেক কথা হয়েছিল।অনেক মজা করেছিলাম,কেমন কেমন জানি সম্পর্কের রক্ত খুঁজতে খুঁজতে আত্নীয় হয়ে গেলাম। প্রচন্ড রকম ভাবে কাছে মানুষ হয়ে গেলাম,আপন জন হয়ে গেলাম।কিন্তুু মনে মনে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম কবির জন্য আমরা কোন কিছু নিয়ে যেতে পারিনি না ফলমূল না খাবার দাবার।
তিনি এমন একজন মানুষ শুধু মাত্র গারো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই শুধু মাত্র জনপ্রিয় নন,তিনি জাতীয় পর্যায়ের কবি।তিনি সমান তালে সমার কাছেই জনপ্রিয়, যারা উনাকে চিনে বুঝে এবং উনার বই গুলো পড়েছে,প্রত্যেক জনি বলতে বাধ্য হবে তিনি একজন উঁচু মানের কবি।তিনি শুধু মাত্র কবি নন একা ধারে তিনি গান লিখেন,গল্প লিখেন এবং প্রবন্ধ লিখেন।উনার অনেক বই আছে যদি কারো আগ্রহ থাকে তাহলে সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারেন।শুনে ভালো লাগলো উনার যাবতীয় চিকিৎসার খরচ সরকার বহণ করবে।আসলে একজন উঁচু মানের লেখকের জন্যই সেটাই করা উচিত এবং উনার সেটা ন্যায্য প্রাপ্য। উনি আপাততো সুস্থ আছেন আগের চাইতে।
আমি অনুরোধ করবো আমাদের যদি সময় থাকে তাহলে একবার দেখে আসি আমাদের প্রিয় লেখক কে,তিনি শুধু মাত্র গারো জাতিগোষ্ঠীর সম্পদ নন তিনি সবার সম্পদ।উনার কর্ম এবং সৃষ্টিশীল চিন্তা আমাদের সমৃদ্ধ করে চলছে।উনাদকে আমাদের অনেক প্রয়োজন, উনার গুরুত্ব আমাদের কাছে অপরিসীম । উনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
No comments