ভালোবাসার আরেক নাম "উৎপল নকরেক"
Jadil Mri
ভালোবাসার আরেক নাম "উৎপল নকরেক"
![]() |
ছবি:-Nikseng Ghagra |
আজ আমি এমন একজনের কথা বলছি, যার অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারবো না কখনো..
আমাদের জাতির জন্য নিশ্চিয় অনেকে অনেক ভাবে কাজ করে,সবাই সবার জায়গা থেকে ঠিক।কাজ করে কেউ হয়তো মূল্যায়িতত হয় আবার কেউ হয়তো সেইরকম মূল্যায়ন পায় না।আমার কাছে উৎপল নকরেক এক ভালোবাসার নাম।অনেক বার গিয়েছি কিন্তুু তেমন কথা বার্তা হয়নি।কিন্তুু ডকুমেন্টারিরর করার নামে অনেক গল্প করেছি আড্ডা মেরেছি।যতটুকু পারি খোলাখুলি ভাবে কথা বার্তা বলার চেষ্টা করেছি, যদিও আমাদের থেকে বয়সে অনেক বড়।তবুও বন্ধু মতো যে মেলামেশা দারুণ ভাবে আমায় নাড়া দিয়েছে।
উৎপল নকরেক এর বয়স এখন আনুমানিক ৩৫/৩৬। চিরদিনের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।কিন্তুু কেন এই পঙ্গুত্ব, কেন এই বেঁচে থাকার সংগ্রাম, কি হবে এই জীবন নিয়ে,যুবকদের কাছে কি আশা প্রত্যাশা..! এই গুলোই ছোট আকারে বলার চেষ্টা করেছি।
আমি আমার মতো করে চেষ্টা করবো বলতে,আমি যে কথা গুলো বলবো সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত।আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলার চেষ্টা করেছি হয়তো কারো মতের সাথে নাও মিলতে পারো।আমি যখন উৎপল নকরেক এর কথা গুলো শুনছিলাম ভয়ে আমার গায়ের লোম খাড়া ভাবে উঠে গিয়েছিল। আমি অবিশ্বাস্যের মতো তাকিয়ে ছিলাম, এত যন্ত্রণারর মধ্য দিয়ে উৎপল নকরেক এর সময় গিয়েছে কল্পনা করতেই আমার অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল।সবকিছু তো আর বলা সম্ভব না, ইচ্ছে করেই অনেক কিছু বলিনি।যদি কারো আগ্রহ থাকে বা জানার প্রয়োজন মনে করো,তাহলে তার সাথে গিয়ে সরাসরি দেখা করতে পারো বা দেখা করলে ভালো হয়।তার কাহিনী গুলো তার কাছ থেকে শুনা
, অন্য রকম অনুভূতি হবে।উৎপল নকরেক এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী বলবো..
, অন্য রকম অনুভূতি হবে।উৎপল নকরেক এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী বলবো..
উৎপল নকরেক এই পঙ্গুত্ব বরণের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে ফিরে যেতে হবে ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি। ৩রা জানুয়ারি আমাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, যদিও সময়ে কারনে দিনগুলো ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।মনে রাখা বা সময় দেওয়ার মতো আমাদের হাতে সময় নাই,নিজে বাঁচলে বাপের নাম আরিকি! এই অবস্থা। যাই হোক,আসল কথায় আসি,৩ জানুয়ারি ছিল নির্ধারিত সময়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বা মিছিল।আমরা কমবেশি সবাই জানি ইকোপার্ক আমাদের জন্য কোনদিন সুফল বয়ে আনবে না।ইকোপার্ক আদিবাসীদের জন্য কোন দিন আর্শীবাদের কারন হয়ে দাঁড়ায় নাই। যত বার ইকোপার্ক সৃষ্টি হয়েছে তৈরি হয়েছে, তত বার আমাদের জন্য চরম অভিশাপেরর কারন হয়ে দাঁড়িছে।সেদিন শান্তিপূর্ণ মিছিল ছিল, কোন রকম যেন সমস্যা সৃষ্টি না হয় ঝামেলা সৃষ্টি না হয় সবাই সেদিকে সর্তক ছিল।কিন্তু সব সর্তক থাকা সত্ত্বেও খারাপ সময় চলে আসে,এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়।
শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল চলছিল আমার শুনা মতে অনেক গুলো ব্যানার ছিল ব্যানারের সামনে ছিল ছোট মেয়ে ছেলে তার পর ছিল মহিলা তার পর ছিল যুবক এবং মুরুব্বিরা।হঠাৎ করে ফটকার মতো শব্দ বেজে উঠলো। অনেকে ভাবলো হয়তো কেউ ফটকা ফাতাছে। কিন্তুু সেইটা ফটকা ছিল না, ছিল গুলির শব্দ।গুলির শব্দ বুঝতে পেরে যখন সবাই যার যার মতো ছুটাছুটি করছিল একজন মানুষ পড়ে গেল সাথে সাথে তার পর পরে গেল আরেক জন , সেই ব্যক্তিই ছিল উৎপল নকরেক।যে আগে পরে গিয়েছিল সেই পীরেন স্নাল। পীরেন স্নাল সেই জায়গাতে মৃত্যু বরণ করে কিন্তুু ভাগ্য ক্রমে পরে যাওয়া উৎপল নকরেক বেঁচে যায়।
প্রথমে পীরেন স্নালকে পরে উৎপল নকরেক কে গাড়িতে উঠিয়ে রসুলপুর নিয়ে যাওয়া হয়।যখন দেখলো উৎপল নকরেক বেঁচে আছে সাথে সাথে মধুপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।সিরিয়াস অবস্থা দেখে টাংগাইলে নিয়ে যাওয়া হয়।প্রতিটি মিনিট ছিল উৎপল নকরেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং চরম কষ্টের।যখন উৎপল নকরেক কে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তার অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতেতে হয়েছিল, কারন রাস্তা ভালো ছিল না সাথে যেখানে শুয়েছিল সেখাসে টিনের মত ঢেউ খেলানো অবস্থায় ছিল, আর গাড়ি এত জোরে চলছিল সুস্থ মানুষেও অসহ্য হয়ে উঠবে।শীতের কারনে উৎপল নকরেক কাঁপছিল, যখন দেখল অবস্থা চরম খারাপ কোথা থেকে যেন খেড় এনে সারা শরীরের বিছিয়ে দিয়েছিল।টাংগাইলে যখন পৌঁছালো তখন সাথে সাথে অপারেশন জরুরি দরকার ছিল।কিন্তুু সেই সময় ডাক্তার ছিল না।অবস্থা এমনি খারাপ রোগীর অবস্থা সময় কে সময় খারাপ অবস্থা হচ্ছিল,বার বার মনে হচ্ছিল যে এই বুঝি জীবন এখানেই শেষ, মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছে।গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সে সময়ে মধুপুর-ধনবাড়ি আসনের এমপি হস্তক্ষেপে প্রায় রাত তিনটায় ডাক্তার এসে অপারেশন করে গুলি বের করে।
গুলি বের করাও এত সহজ কাজ ছিল না কারন গুলি কোন দিকে আছে দেখার জন্য বার বার উৎপল নকরেক কে ডাক্তার দাঁড় করাছিল। বার বার উৎপল নকরেক পরে যাচ্ছিল কারন তার পা অবশ ছিল, সে পায়ে বা কমড় পর্যন্ত কোন কিছু বুঝতে পারছিল না। উৎপল দার কমড় গুলি লেগেছিল ফলত কমড় থেকে পা পর্যন্ত সবকিছু অবশ হয়ে যায়।।সে সময়ে তাকে দেখতে অনেক মন্ত্রী এসেছিল,অনেক এমপি এসেছিল। উৎপল নকরেক অনেক চিকিৎসা পরেও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনা সম্ভব হয়নি।
সে সময়ে অনেকে অনেক ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেছে।বিভিন্ন সংগঠন থেকে আশ্বাস দিয়েছিল, অনেক নেতৃত্ববৃন্দ দেখতে গিয়েছিল,অনেক আশ্বাস দিয়েছিল।কিন্তুু আজ উৎপল নকরেক কেমন আছে কত জন খোঁজ খবর নেয়? কত জন জানে উৎপল নকরেক কিভাবে বেঁচে আছে?
উৎপল নকরেক কাদের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, আমরা কি অস্বীকার করবো আমাদের জন্য করেনি?
যদি আমাদের জন্যই হয়, তাহলে কেনন আমরা জানি না? উৎপল নকরেক কেমন আছে?কি ভাবে বেঁচে আছে?
যদি আমাদের জন্যই হয়, তাহলে কেনন আমরা জানি না? উৎপল নকরেক কেমন আছে?কি ভাবে বেঁচে আছে?
উৎপল নকরেক.. আমার কাছে ভালোবাসার এক নাম।কারন এত কিছুর পরেও কারোর উপর কোন ক্ষোভ নেই রাগ নেই চাওয়া নেই।যেমন আছে যেমন যাচ্ছে দিন কাল তেমনি নিজেকে সুখী মনে করে...
নিজের জীবন জাতির জন্য বিলিয়ে দেওয়া এক অম্ভব ব্যাপার...
নিজের জীবন জাতির জন্য বিলিয়ে দেওয়া এক অম্ভব ব্যাপার...
উৎপল নকরেক বেঁচে থাকবে যতদিন সংগ্রামী মানুষ বেঁচে থাকবে,অনুপ্রেরণা আরেক নাম উৎপল নকরেক।
উৎপল নকরেক, লাল সালাম।
No comments