চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ
পরাাগ রিছিল
ময়মনসিংহ থেকে সকাল ১০টার দিকে রওনা হয়ে ঢাকা পৌঁছি বিকেলের দিকে। রাতের গাড়িতে যাব চট্টগ্রাম। অনেকের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 'সবচেয়ে সুন্দর' ক্যাম্পাস শোনা হলেও এযাবৎ দেখা হয়নি। তাই ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা- মনের ভেতর সুন্দর কল্পনা ছিল। সাড়ে আট'টা অব্দি পৌঁছে যাই ক্যাম্পাসে। দীর্ঘ ভ্রমণের পর খেয়েদেয়ে আপাত রেস্ট। দুপুর গড়ালে বেরিয়ে পড়ি। রিক্সায় চড়ে মেইন রাস্তাগুলো ধরে প্রথম দর্শন। বিকেলে হবে আসল ঘুরোঘুরি।
প্রত্যয় সেখানে আমাদের সেনাপতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, প্রগতিশীল রাজনীতির সাথেও জড়িত। সেই ভরসা, ফোন দিয়ে চলে আসতেই দেখি, সাথে একদল বন্ধুবান্ধব। প্রত্যয় দু'জনকে বলে- 'চল, আমাদের সাথে হাঁটতে বেরুবি?' হেঁটে হেঁটে কথা বলতে তাদের সাথে খুব খাতির জমে যায়। তাদের একজন লালটান পাংখোয়া, অপরজন রামটিন পাংখোয়া। রামটিনের হাতে গীটার। বলি, 'আজ আপনাদের গান শুনব'। লালটান সাংবাদিকতায় পড়ে, রামটিন ঢাকায় পড়াশোনা করে, আমাদের মতই এসেছে বেড়াতে। পাংখোয়া জাতির যাপিত জীবন জানতে আমার অপার আগ্রহ জাগে...।
উঠেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যামের বাসায়। উনি মর্ডান ল্যাংগুয়েজের শিক্ষক। উনার হাসব্যাণ্ড খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বের করেন- 'আরে, তোমরা তো দেখি ভালই জমিয়ে ফেলেছো!'
রামটিন ফিরে যাবেন ঢাকায় তাই আড্ডা একটু শর্ট হলো। গান শোনাও হল না। শেষ চা পানে দেখা হলো মুন চাকমার সাথে। আমরা মান্দিরা নিজেদের ভাষায় বকর বকর করছি। মুন যেন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে আজ! পাশে বসে আছে চুপচাপ।
ম্যামের বাসা থেকে রাত্রে বেরিয়ে পড়ি। রাত্রে আর ফিরতে পারব না জেনেও। লালটান, প্রত্যয়ের সাথে কথাই যে শেষ হয়নি! সবার থাকার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, যাক! সারারাত ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে বেড়াব, সেহেরীর টাইমে ঢুকে যাব প্রত্যয়ের ডেরায়, এই ছিল পরিকল্পনা।
মাঝে দরোজা খোলা বলে ঢুকে যাই প্রত্যয়ের ডেরায় সবাই মিলে। আড্ডা চলতে থাকে। ঘুমাই সাড়ে চারটায়।
ক্যাম্পাসের চিকাগুলো মনে পড়ে- ' বেলা তুমি বিয়ে করে ফেল, সেশন জটে আটকে গেছি!'। ডেরায় ঢুকে দেখি দেয়ালে লেখা-' কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করব'। ' তার রূপের জন্য নয়, তার গুণের জন্য নয়, আমি তারে এমনিই ভালবাসি'।
যেন ফিরে যাই ক্যাম্পাস জীবনের তারুণ্যে। পরদিন সকালে ম্যামের স্বামীসহ ঘুরোঘুরি শুরু করি মহাসমারোহে। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে যায়। ম্যাম ফোন করেন-' তোমরা কি খাওয়া-দাওয়া সব ভুলে গেলে নাকি?' সত্যি, প্রকৃতি প্রেমের কাছে খাওয়া যেন আজ নস্যি।
রাস্তায় আলোচনা চলছিল- আসলে কোন ক্যাম্পাসটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর? আমরা পেরুই পারুল ঘেরা বন কিন্তু বারবার ফুল মার্কস দেয়া থেকে বিরত থাকি। বারবার বলি, কই, লেক তো দেখলাম না? আর নিজের বলে একটা কথা আছে না!
তার পরের দিন বিদায়, শাটল ট্রেনের প্রসঙ্গ আসল, কারণ সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। গাড়িতে রওনা দিলেও একই সময় লাগবে শহরে পৌঁছার। পেপারে পড়তাম, শাটল ট্রেনের বগি দখল নিয়ে মারামারি, বিভিন্ন গ্রুপের দখলে সিট, সেসব পড়া থাকায় ভয় ভয় লাগে! ওঠার আগে প্রত্যয়কে বারবার বলি, যদি টাকা চায়, কয় টাকা দিব? প্রত্যয় বলে, না এটা তো ক্যাম্পাসের জন্যই, কেউ টাকা চাইবে না।
শেষ বিদায়ের আগে প্রত্যয় তার সিটে একজনকে বসিয়ে দেয়। আমাদেরও সৌভাগ্য প্রথমবার গিয়েই শাটল ট্রেনে চড়তে পারছি। রোজার ছুটি বলে তেমন ভিড় নেই। আহা! সামনে যে দু'জন বসা, তাদের একজনের নাম এলিশন চাকমা, বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে বাড়ি যেতে পারেনি। ট্রেন কিছুক্ষণ চলার পর ব্যাগ থেকে বই খুলে পড়া শুরু করল। তাকিয়ে দেখি, বইয়ের নাম 'সাতকাহন'।
আবারো শীঘ্রই দেখা হবে চবি ক্যাম্পাস..কারণ পুরো ক্যাম্পাসটা এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।
পরাাগ রিছিল
ছবি:পরাগ রিছিল |
ময়মনসিংহ থেকে সকাল ১০টার দিকে রওনা হয়ে ঢাকা পৌঁছি বিকেলের দিকে। রাতের গাড়িতে যাব চট্টগ্রাম। অনেকের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 'সবচেয়ে সুন্দর' ক্যাম্পাস শোনা হলেও এযাবৎ দেখা হয়নি। তাই ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা- মনের ভেতর সুন্দর কল্পনা ছিল। সাড়ে আট'টা অব্দি পৌঁছে যাই ক্যাম্পাসে। দীর্ঘ ভ্রমণের পর খেয়েদেয়ে আপাত রেস্ট। দুপুর গড়ালে বেরিয়ে পড়ি। রিক্সায় চড়ে মেইন রাস্তাগুলো ধরে প্রথম দর্শন। বিকেলে হবে আসল ঘুরোঘুরি।
প্রত্যয় সেখানে আমাদের সেনাপতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, প্রগতিশীল রাজনীতির সাথেও জড়িত। সেই ভরসা, ফোন দিয়ে চলে আসতেই দেখি, সাথে একদল বন্ধুবান্ধব। প্রত্যয় দু'জনকে বলে- 'চল, আমাদের সাথে হাঁটতে বেরুবি?' হেঁটে হেঁটে কথা বলতে তাদের সাথে খুব খাতির জমে যায়। তাদের একজন লালটান পাংখোয়া, অপরজন রামটিন পাংখোয়া। রামটিনের হাতে গীটার। বলি, 'আজ আপনাদের গান শুনব'। লালটান সাংবাদিকতায় পড়ে, রামটিন ঢাকায় পড়াশোনা করে, আমাদের মতই এসেছে বেড়াতে। পাংখোয়া জাতির যাপিত জীবন জানতে আমার অপার আগ্রহ জাগে...।
উঠেছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যামের বাসায়। উনি মর্ডান ল্যাংগুয়েজের শিক্ষক। উনার হাসব্যাণ্ড খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বের করেন- 'আরে, তোমরা তো দেখি ভালই জমিয়ে ফেলেছো!'
রামটিন ফিরে যাবেন ঢাকায় তাই আড্ডা একটু শর্ট হলো। গান শোনাও হল না। শেষ চা পানে দেখা হলো মুন চাকমার সাথে। আমরা মান্দিরা নিজেদের ভাষায় বকর বকর করছি। মুন যেন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে আজ! পাশে বসে আছে চুপচাপ।
ম্যামের বাসা থেকে রাত্রে বেরিয়ে পড়ি। রাত্রে আর ফিরতে পারব না জেনেও। লালটান, প্রত্যয়ের সাথে কথাই যে শেষ হয়নি! সবার থাকার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, যাক! সারারাত ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে বেড়াব, সেহেরীর টাইমে ঢুকে যাব প্রত্যয়ের ডেরায়, এই ছিল পরিকল্পনা।
ছবি:পরাগ রিছিল
মাঝে দরোজা খোলা বলে ঢুকে যাই প্রত্যয়ের ডেরায় সবাই মিলে। আড্ডা চলতে থাকে। ঘুমাই সাড়ে চারটায়।
ক্যাম্পাসের চিকাগুলো মনে পড়ে- ' বেলা তুমি বিয়ে করে ফেল, সেশন জটে আটকে গেছি!'। ডেরায় ঢুকে দেখি দেয়ালে লেখা-' কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করব'। ' তার রূপের জন্য নয়, তার গুণের জন্য নয়, আমি তারে এমনিই ভালবাসি'।
যেন ফিরে যাই ক্যাম্পাস জীবনের তারুণ্যে। পরদিন সকালে ম্যামের স্বামীসহ ঘুরোঘুরি শুরু করি মহাসমারোহে। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে যায়। ম্যাম ফোন করেন-' তোমরা কি খাওয়া-দাওয়া সব ভুলে গেলে নাকি?' সত্যি, প্রকৃতি প্রেমের কাছে খাওয়া যেন আজ নস্যি।
রাস্তায় আলোচনা চলছিল- আসলে কোন ক্যাম্পাসটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর? আমরা পেরুই পারুল ঘেরা বন কিন্তু বারবার ফুল মার্কস দেয়া থেকে বিরত থাকি। বারবার বলি, কই, লেক তো দেখলাম না? আর নিজের বলে একটা কথা আছে না!
তার পরের দিন বিদায়, শাটল ট্রেনের প্রসঙ্গ আসল, কারণ সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। গাড়িতে রওনা দিলেও একই সময় লাগবে শহরে পৌঁছার। পেপারে পড়তাম, শাটল ট্রেনের বগি দখল নিয়ে মারামারি, বিভিন্ন গ্রুপের দখলে সিট, সেসব পড়া থাকায় ভয় ভয় লাগে! ওঠার আগে প্রত্যয়কে বারবার বলি, যদি টাকা চায়, কয় টাকা দিব? প্রত্যয় বলে, না এটা তো ক্যাম্পাসের জন্যই, কেউ টাকা চাইবে না।
শেষ বিদায়ের আগে প্রত্যয় তার সিটে একজনকে বসিয়ে দেয়। আমাদেরও সৌভাগ্য প্রথমবার গিয়েই শাটল ট্রেনে চড়তে পারছি। রোজার ছুটি বলে তেমন ভিড় নেই। আহা! সামনে যে দু'জন বসা, তাদের একজনের নাম এলিশন চাকমা, বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ হয়নি বলে বাড়ি যেতে পারেনি। ট্রেন কিছুক্ষণ চলার পর ব্যাগ থেকে বই খুলে পড়া শুরু করল। তাকিয়ে দেখি, বইয়ের নাম 'সাতকাহন'।
আবারো শীঘ্রই দেখা হবে চবি ক্যাম্পাস..কারণ পুরো ক্যাম্পাসটা এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।
No comments