গারোদের ঐতিহ্যবাহী ও প্রিয় খাবার "নাখাম"।।জাডিল মৃ।।

গারোদের ঐতিহ্যবাহী ও প্রিয় খাবার "নাখাম"।

জাডিল মৃ(Jadil Mri)


Nakam
Nakam-নাখাম




১.
আজকে হঠাৎ করেই "নাখাম" নিয়ে একটু চিন্তা করলাম।আমার সাথে আপনাদের চিন্তার দ্বিমত থাকতে পারে তাতে কোন সমস্যা নেই।তবে আসুন একটু খোলাখুলি আলোচনা করি।আলোচনার সুবির্ধাতে আমি "নাখাম" নিয়ে কোন লেখা,লোককাহিনী,গবেষণা কিংবা কারো আগ্রহের বিষয় বস্তু হতে পারে কিনা তা ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম ।তবে দুর্ভাগ্যক্রমে কোথাও কোন ধরণের সাহায্য আমি পাইনি।তাই নিজের মতো করে যা আমি ভাবছি ও চিন্তা করছি তা নিয়েই আপনাদের সাথে একটু শেয়ার করতে চাই।


তিন পার্বত্য চট্রগ্রামের "নাপ্পি'র" সাথে "নাখামে'র" সমতুল্য হবে কিনা,জানি না।তবে গারোদের জন্য নাখাম এবং তিন পার্বত্য চট্রগ্রামের আদিবাসীদের জন্য নাপ্পি প্রযোজ্য। 

২.
গারোদের ঐতিহ্যবাহী ও প্রিয় খাবার "নাখাম",যা নিঃসন্দেহেই বলা যাই।"নাখাম" খাবারের উপকরণটি গারো জাতির সাথে এমন ভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, যদি গারো জাতির প্রধান খাদ্য বা খাদ্যাদির কথা বলতে হয় তাহলে প্রথমেই "নাখামের" কথাটি উঠে আসবে।আমি বলবো "নাখাম"গারো জাতির প্রধান ও ঐহিত্যবাহী খাদ্য উপকরণ।যা গারো জাতির গর্বে বিষয়,আমি তো রীতিমতো গর্ব করি।গারোজাতির মধ্যে গুটিকয়েক মানুষ পাওয়া যাবে যারা নাখাম পছন্দ করে না বা খেতে চাই না।তাঁদের না খাওয়া মধ্যে বহুবিধ কারণ থাকতে পারে তবে না খাওয়াটা যে অপরাধ সেটাও বলা যাবে না।তবে একজন গারো হিসাবে নাখাম খাওয়া কতটুকু প্রয়োজন কিংবা তাঁর খাওয়া উচিত কিনা সেটা যে খেতে পারে না বা যাদের খাওয়ার জন্য অনীহা তাঁরাই বা সে-ই বলতে পারবে।ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইবো গারো জাতির প্রত্যেক সদস্যের নাখাম খাওয়া উচিত।তার কারণ কী!! গারো জাতির মূল্যবান খাদ্য উপকরণ ,ঐতিহ্যবাহী খাবার,ইউনিক খাদ্য উপকরণ এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী।


৩.
আমার কাছে মনে হয় গারো জাতির অপরিহার্য খাবার উপকরণ হচ্ছে "নাখাম"।"নাখাম" থাকলে নামিদামী শাক-সবজি কি লাগবে?এই যে ভাইরাস, লকডাউন,ইনকামের পথ বন্ধ,শাক-সবজি,মাছ-মাংস চড়া দাম আবার শাক-সবজি সরবরাহ কম তাতে কী!"নাখাম" থাকলে "নাখাম ভর্তা","নাখাম ভাজি","নাখাম চাটনি","নাখাম সেদ্ধ","নাখাম খারি","নাখাম বি.চ্চি,"নাখাম গব্বা" আবার "নাখাম সু.য়া" প্রভৃতি বানিয়ে খাওয়া যায়।যেখানে শুধুই নাখাম লাগবে,সয়াবিন তেল বা সরিষা তেলের কোন কারবার নাই।অন্যান্য শাক-সবজি থাকলে তো কথাই নেই।তবে গ্রামের বাড়ির আশেপাশে বা জঙ্গলে বা নদীর ধারে প্রচুর শাক-সবজি আছে। যা হালকা নাখাম দিলেই পেট ভরে খাওয়া যাই।আমার কাছে মনে হয়,গারোদের কাছে "নাখাম"  থাকলে  সাত /দশদিন এমনেই পার করে দিতে পারবে।অনেকর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বা সন্দেহ হতে পারে এইটা সম্ভব কিনা!  আমি বলবো/ মনে করি সম্ভব।


Nakam
Nakam-নাখাম'২




৪.
প্রথমেই নাখামের গুণগান গাইলাম, তা সত্য।তবে সবেচেয়ে বড় সত্য কথা যে,যে নাখাম আমরা খাই তাতে গারো "নাখাম" উৎপাদকারী কতজন আছে কিংবা ব্যবসার সাথে জড়িত আমরা তা জানি না।কেউ জানো কি?অবশ্যই জানি বা জানি না।তবে আমি যতদূর জানি ব্যবসার উদ্দেশ্যে গারো জাতির সদস্যগণ কেউ নাখাম উৎপাদন করে না। কারা করে?তা সত্যিই প্রশ্ন করা উচিত,কারো না কারো নতুন করে চিন্তা করা উচিত।আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার, আমাদের গর্ব,আমাদের খাবারের অপরিহার্য অংশ অথচ তা উৎপাদন করে কারা, যারা খাই না, যারা অ-গারো,তারাই উৎপাদন করে।কাদের বলছি বুঝেছো তো!!সত্যিই গর্বে বুক পেটে যাই,তাই না!!!ছোটবেলা থেকে দেখছি,এমন কোন গারোকে আমি গ্রামে গ্রামে গিয়ে নাখাম বেচতে দেখিনি।যাদের দেখেছি যারা বেচতো এখনো বেচে তারা সবাই অ-গারো ছিল/আছে(অবশ্য গারোদের দোকানে পাওয়া যায়)।তাদের বেচা নাখাম আর নিজেদের বানানো নাখাম আকাশ পাতাল তফাৎ। অত্যন্ত যে উপাদানটি আমাদের দখলে থাকার কথা ছিল,সেটাও আমাদের হাতে নেই।ফলে সহজেই অনুমেয় ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা কতটা পিছিয়ে আছি।সবাই শুধু চাকরি চাকরি!!নিজেদের প্রয়োজনীয় বস্তুু উপাদানের দিকে তাকালে অনেক কিছুই করা যেতো,সে-ই অপেক্ষায় রইলাম।যদি কেউ কিছু করে আরিকি!আমি স্বপ্ন দেখি,একদিন একজন আ'চিক মান্দি নাখাম উৎপাদন করবে, যা সারা বাংলাদেশে বসবাসরত গারো জাতির সদসদ্যগণ তা সংগ্রহ করবে ও তৃপ্তি নিয়ে খাবে।আ-হা, আমাদের প্রিয় ঐতিহ্যবাহী নাখাম।যা পূর্বপুরুষদের কথা মনে করিয়ে দিবে।


৫.
বলা রাখা ভালো, আমরা যে নাখামটি খাই মানে অ-গারো যারা নাখাম উৎপাদন করে তাদের উৎপাদিত নাখামের বয়স থাকে তিন থেকে চার মাস।কিন্তুু আ'চিক মান্দিদের উৎপাদিত নাখাম হতে লাগবে প্রায় একবছর।অ-গারো যারা নাখাম উৎপাদন করে তারা ব্যবসার জন্য বেশি লাভের আশায় আমরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করি তা করে না।তাহলে বুঝতেই পারছো,নাখামের কি অবস্থা হতে পারে।বিশ্বাস না হলে একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারো।বাজারে নাখাম ২৮০/৩৮০/৪০০/৮০০ টাকা কেজি।আবার নাখামের গুণাগুণ কিংবা স্থানভেদ কমবেশি হতে পারে।এত টাকা দিয়ে খাবো যদি স্বাদটাই না থাকে তাহলে তৃপ্তি আসবে কোথা থেকে?


৬.
কিছুকিছু পরিবার আছে যারা নিজেদের উৎপাদিত নাখাম খেয়ে থাকে।যে ছবিটি দিয়েছি সেটা একটি গারো পরিবারের উৎপাদিত নাখাম।যা উৎপাদন করতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।কিন্তুু ব্যবসার জন্য বেশি লাভের আশায় তারা তা করে না।নিজেদের পরিবারের প্রয়োজনে  তাঁরা উৎপাদন করে ফলে বাইরে থাকে নাখাম কিনে খেতে হয় না।যা সত্যিই, তাঁদের কে প্রশংসা না করে পারা যাই না।


৭.
লকডাউনে বসে একটু চিন্তা করতে পারো, আসলে নাখাম আমাদের জন্য অতি প্রয়োজন কিংবা অপরিহার্য কেন?নাখাম উৎপাদনে কারোর এগিয়ে আসা উচিত কিনা!!কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে!!স্বপ্ন দেখি, একদিন কোন এক গারো নাখাম উৎপাদন করে বিক্রি করছে।স্বপ্ন সত্যি হবে তো?নাকি সবি মরীচিকা?আমার প্রশ্ন- উত্তরটা আপনাদের কাছে রেখে গেলাম.....






No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.