মলাজানী গারো গ্রাম;আছে,সাতটা(৭) পরিবার!।। গারো গ্রাম-৬।।


মলাজানী গারো গ্রাম;আছে,সাতটা(৭) পরিবার!

জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরিণ লেখক এবং ব্লগার


মলাজানী গ্রাম




'মলাজানী' গারো গ্রাম, আমাদের গ্রাম থেকে বহুদূরে অবস্থিত । সেই গ্রামে প্রয়োজন ছাড়া যাওয়া হয়ে উঠে না।অনেকদিন বাদে আবার মলাজানী গ্রামে গিয়েছিলাম।যতবার গ্রামে গিয়েছি, ততবার মনে হয়েছে। এই যেন গারো গ্রাম নয়!যেন গারো শূণ্য বিস্তৃণ এলাকায় জমিজমা, আবাদি ফসল, ঘরবাড়ি পড়ে আছে । কারণ গ্রামে মানুষ জন নেই,কোলাহল নেই,নিশ্চুপ,শব্দহীন, নিস্তব্ধতা বেড়াজালে আটকে থাকে সময়।তবে এই বার মনে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত আঙ্গসিক হলেও আমি "মলাজানী" গ্রাম কে গ্রামের মতো দেখতে পেয়েছি।মলাজানী গ্রামের যে ইতিহাস তা কিছুটা হলেও জানি ফলে অতীত এবং বর্তমানের সাথে কোন মিল নেই। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আবার 'মলাজানী মাতৃ মন্ডলীতে' বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।গারো ব্যাপ্টিষ্ট কনেভেনশন(জিবিসি),
মলাজানী সার্কিটের অন্তর্গত 'মলাজানী মাতৃ মন্ডলীতে' তিন দিনব্যাপী  বার্ষিক অধিবেশন শুরু হবে, ১৭-১৯ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।বার্ষিক অধিবেশনের
প্রাক-প্রস্তুুতির কাজকর্ম দেখতে আমি এবং জ্যাক হাজং গিয়েছিলাম মলাজানী গ্রামে।গ্রামের  শুনশান নিরব পরিবেশ থেকে হয়ে উঠেছে কোলাহলপূর্ণ গ্রাম।মলাজানী গ্রামের পাশের গ্রাম টিয়াখালী এবং নালিখালী গ্রামের মানুষ জন নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজকর্মের সহযোগীতা করছেন।
বার্ষিক অধিবেশন জন্য প্রস্তুতকৃত 

বার্ষিক অধিবেশন জন্য প্রস্তুতকৃত

 




আমরা যখন গ্রামে যাই,তখন দেখি অনেক মানুষজন এইটা সেইটা নিয়ে ব্যস্ত, কাজ করছেন।আমার মনে হয় "মলাজানী "গ্রাম;নতুন রুপে আবার নিজেদের ঐহিত্যে ফিরে আসছে।মলাজানী গ্রামের মানুষ জন নতুন করে আবার পুনরুজ্জীবিত লাভ করছেন।মলাজানী গ্রামের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। এই দীর্ঘ ইতিহাসের বেড়াজাল আমি ভেদ করতে পারিনি।যদি ভবিষ্যতে সুযোগ আসে হয়তো সেই ইতিহাস আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।



মলাজানী গ্রামের পরিচয়..
মলাজানী গারো গ্রাম অবস্থিত  ৭ নং ওয়ার্ড,১ নং দুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ,মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। অতীতে ফিরে তাকালে দেখবো, মলাজানী একটি বৃহৎ গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল।যা বর্তমানে মলাজানী গ্রাম থেকে ভাগ হয়ে তিন থেকে পাঁচ গ্রামে পরিণত হয়েছে।মলাজানী গ্রামে শতশত গারো পরিবার ছিল এবং পাশের গ্রামেও শত শত পরিবার ছিল।কিন্তুু সময়ের পরিক্রমায় কিংবা বাস্তবতায় আজকে সাতটি পরিবারের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাবো।জানতে পারি, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়,১৯৬৪ সালের দাঙ্গা,স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালে এবং বিভিন্ন সময়ে গ্রামের মানুষ ভারতে চলে যাই।যে পরিবারগুলো এখনো আছে তাঁরা যাইনি।ফলে সেই পরিবারগুলো এখনো টিকে আছে স্বগর্বে ।বর্তমানে মলাজানী গ্রামে সাতটি পরিবার আছে। তবে পরিবারগুলো যৌথ পরিবার।যৌথ পরিবারের কারণে বাড়ির মালিকদের যে মেয়ে-ছেলে কিংবা নাতি-পুতি তাঁরা এখনো ঘরবাড়ি তোলেনি।ফলে একটি পরিবারে কমপক্ষে সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০  জনের অধিক হবে।তাহলে আমরা যদি আনুমান করতেই পারি, ২১০-২৫০ জনের মধ্যে গ্রামের সদস্য সংখ্যা হবে।গ্রামের মানুষ জন দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে বিধায় গ্রামে মানুষ থাকে না।গ্রামে থাকে পরিবারের কিছু সদস্য বিশেষ করে বৃদ্ধ- বৃদ্ধা(বুড়াবুড়ি)।গ্রামের বেশিভাগ পরিবার "ম্রং" মাহারির বাড়ি, কিছু "চিরান" মাহারির বাড়ি রয়েছে।


মলাজানী ব্যাপ্টিষ্ট মন্ডলী



আপনারা জেনে অবাক হবেন যে,গ্রাম এত বড় ছিল। যার কারণে  বড়দিনের(যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিন)সময় ২৪ তারিখ সকাল থেকে কীর্তন শুরু হয়ে ২৭ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো। অনেক সময় কীর্তন শেষ হতো আবার হতো না।এইসব কথা আজ শুধুমাত্র ইতিহাস।
যাইহোক,আমরা আশা করতেই পারি এই সাতটা পরিবার থেকে আরো পরিবার হবে।আগের মতো না হলেও নতুন করে মলাজানী গ্রাম আবার নিজেদের ঐহিত্যে ফিরে আসবে।গারো গ্রাম হিসাবে আবার প্রশংসিত ও সমাদৃত হবে।



মলাজানী গ্রামে বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে।সেই জন্য জানাই শুভকামনা। মলাজানী গারো গ্রাম দীর্ঘজীবী হোক,মলাজানী গ্রামে গারোদের সংখ্যা বাড়ুক,বংশবিস্তার হোক।
বেঁচে থাকলে আবার মলাজানী গ্রামে যাবো। আনমনে কোন একদিন....
১৫ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.