আমার আবিষ্কৃত গারো গ্রাম"সাতাইরা"।।গারো গ্রাম-১।।
আমার আবিষ্কৃত গারো গ্রাম"সাতাইরা"।
জাডিল মৃ
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
ছবি:সফরসঙ্গী |
আজকে, এমন একটি গারো গ্রামের কথা বলতে চাই,যে গ্রামটি আমার আপনার কাছে অজানা একটি গ্রাম।এত সুন্দর গ্রাম ;পরিপাটি ছিমছাম পরিবেশ,যদি কোনদিন যান নিশ্চয় আপনাকে মুগ্ধ করবে।সত্যি বলছি,মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে,গারো কোথায় ছিল না? আনাচে কানাচে সব জায়গাতেই খোঁজ পাওয়া যায়।ইতিহাস কথা বলে।
আ'বিমা(মধুপুর)এলাকায় এমন একটি গ্রাম আছে, যার খোঁজ আ'বিমা এলাকার মানুষ তো বটেই আ'ফাল বা আরঙার মানুষ তো জানবেই না।তথাকথিত গারো গ্রামের বাইরেও যে আরো কতগুলো গ্রাম ছিল, বর্তমান সময় পর্যন্তও বিদ্যমান আছে।যা খুবই আশ্চর্যের বিষয়। অনেকে থাকতে পারে সাতাইরা গ্রামে গিয়েছে ও দেখেছে। তবে বেশি ভাগ লোকজন বলবে, "গ্রামটি সম্পর্কে জানি না, দেখি নাই,নাম শুনি নাই,আছে নাকি''?হ্যাঁ, সত্যিই সাতাইরা গ্রামের অস্তিত্ব বিরাজমান রয়েছে।চাইলে আপনিও আমার মতো ঘুরে আসতে পারেন, দেখে আসতে পারেন।গ্রামের পরিধি এত বিশাল না হলেও গ্রামের ছোঁয়া সবি আছে।
আবিষ্কৃত গ্রাম বলতে এমন না যে আমিই প্রথম ব্যক্তি যেকিনা সবার আগে গ্রামটি আবিষ্কার করেছি।অনেকদিন আগেই গ্রামটির কথা শুনেছিলাম,নির্দিষ্ট করে জানতাম না, কোথায় গ্রামটি অবস্থিত। ভুল ক্রমেই হোক বা অজানা ভাবেই হোক, প্রথম বার গ্রামে গিয়ে মনে হলো আমিই সর্বপ্রথম গ্রামের আবিষ্কারদাতা।গ্রামটি নিজের চোখে দেখে পরোক্ষ করে মনে হয়েছিল গ্রামটি আগেও দেখেছি ঘুমন্ত স্বপ্নে। গ্রামের অবকাঠামো বা দৃশ্য দেখে মনে হলো আমার আত্না ঘুরে এসেছে একবার।তাই কোথায় কি আছে ঘুরে দেখতে সমস্যা হয়নি ।আ'বিমা এলাকার এক কোণে নিশ্চুপ কোলাহলহীন ছোট গ্রাম হিসাবে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে "সাতাইরা" গারো আদিবাসী গ্রাম।বিশ্বাস করা যাই!!অজান্তেই কত বছর ধরে মানুষের আড়ালে লুকিয়ে ছিল, কে জানে?
(সম্ভবত লুকিয়ে থাকবে না,সেখানে গারো বা গ্রাম আছে তা মানুষ জানতো না)
(সম্ভবত লুকিয়ে থাকবে না,সেখানে গারো বা গ্রাম আছে তা মানুষ জানতো না)
গ্রামটি আবিষ্কারে গল্প বলি...
ডিসেম্বর মাসে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যস্ততম সময় পার করতে হয়।একদিন বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি সিএনজিতে করে।পঁচিশমাইল থেকে সিএনজিতে করে আমি সামনে বসেছি, পিছনে একজন মহিলা এবং দুই জন চাঁর পাঁচ বছরের বাচ্চা।আমি ভেবেই নিয়েছিলাম হয়তো গুরুসত্য(গারো হিন্দু ধর্ম অনুসারী)বা হিন্দু বা কোচ বা মান্দাই টেলকী কিংবা রাজবাড়ি গ্রামেই নেমে যাবে।কিন্তুু অবাক করার মতো বিষয় আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে তাঁরা নেমে গেল গাবতলীর পৌঁছানোর আগেই।যখন তাঁরা নেমে টাকা দিচ্ছিল মনের চাপা প্রশ্নগুলো সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম।
Nasong Mande ma?(আপনারা গারো কিনা?),তখন উত্তর আসলো,Hoie,Chinga mande(হ্যাঁ, আমরা গারো)।আমি পুরোপুরি তাজ্জব হয়ে গেলাম।প্রচন্ড জানার আগ্রহ থেকে প্রশ্ন করলাম গারো গ্রাম আছে কিনা?মহিলাটি বললো, "আছে তো, অনেক আচিক মান্দি(গারো) আছে"।তারপর চলে আসি ক্যাম্পাসে।ক্যাম্পাসে আসা মাত্রই সিদ্ধাত নিলাম যে ভাবেই হোক সেই গ্রামে যেতে হবে।যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলনা। শেষ পর্যন্ত গ্রামে গিয়েছি,গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলেছি, ছবি তুলেছি, যতটুকু পারা যায় প্রত্যেকটা বাড়ি দেখার চেষ্ট করেছি।খুবই অবাক হয়েছি যে দশ পনের মিনিট অবস্থান কালেই অনেক গুলো দাওয়াত পেয়েছি,হিসাব নিকাশ করতে করতে নিজের আত্নীয়'র বাড়ি পর্যন্ত পেয়েগেছি। খুব চমৎকার পরিবেশ এবং আবেগের জায়গা হয়ে উঠে যখন অপরিচিত গ্রামে নিজের আত্নীর সন্ধান পাওয়া যায়।
গ্রামমটি'তে যাওয়ার পেছনে যার বিশাল অবদান রয়েছে তাঁর কথা না বললেই নয়,আমার বন্ধুবর শৌভন ম্রং এবং ছোট ভাই জ্যাক হাজং,তাদের কারণেই আমার গ্রামটি'তে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। আমার সফরসঙ্গী হিসাবে তাঁরা ছিল এবং সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগীতা করেছে ও আমাকে গ্রামটি পরিদর্শনে কিংবা গ্রামটি পর্যবেক্ষণে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছে।
গ্রামটি উত্তর রসুলপুর,৭নং ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদ, মুক্তাগাছা উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত।
গ্রামটিতে ২৫/৩০টির মতো বাড়ি রয়েছে।জানা যাই,প্রতিটি বাড়িতে ২/৫ টি করে পরিবার রয়েছে যারা আলাদা করে বাড়িঘর বানাইনি।গ্রামে থাকে এবং গ্রামের বাইরে কাজ করে এমন লোক সকলকে মিলিয়ে গ্রামের গারোদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মতো।গ্রাম ছোট হলেও বাড়িঘর একটু দূরে দূরে তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।গ্রামে একটি গীর্জাঘর এবং একটি স্কুলঘর রয়েছে।আরো খেয়াল করলাম গ্রামে দুুুুইটি চায়ের দোকান আছে। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়।জানার জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন মাহারি সবচেয়ে বেশি বা কোন মাহারি'রা আছে গ্রামে। তারা বললো,"রেমা,ম্রং, মানখিন,স্নাল,রিছিল,চাম্বুগং,ঘাগড়া,চিছাম,দফো,সিমসাং,রংদি "প্রভৃতি।
গ্রামটিতে ২৫/৩০টির মতো বাড়ি রয়েছে।জানা যাই,প্রতিটি বাড়িতে ২/৫ টি করে পরিবার রয়েছে যারা আলাদা করে বাড়িঘর বানাইনি।গ্রামে থাকে এবং গ্রামের বাইরে কাজ করে এমন লোক সকলকে মিলিয়ে গ্রামের গারোদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মতো।গ্রাম ছোট হলেও বাড়িঘর একটু দূরে দূরে তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।গ্রামে একটি গীর্জাঘর এবং একটি স্কুলঘর রয়েছে।আরো খেয়াল করলাম গ্রামে দুুুুইটি চায়ের দোকান আছে। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়।জানার জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন মাহারি সবচেয়ে বেশি বা কোন মাহারি'রা আছে গ্রামে। তারা বললো,"রেমা,ম্রং, মানখিন,স্নাল,রিছিল,চাম্বুগং,ঘাগড়া,চিছাম,দফো,সিমসাং,রংদি "প্রভৃতি।
কিছু ছবি দিলাম..
গ্রামের মহিলা |
গ্রামের বাড়ি |
স্কুল ঘর |
গীর্জাঘর |
মুরব্বি |
আম্বি |
গ্রামের দোকান |
(বেশি লম্বা হয়েগেল তাই আর লিখলাম না)
২২ ডিসেম্বর, ২০১৯।
তা ঠিক।
ReplyDelete