'হারিয়াকোনা' গারো গ্রামের সাথে কথোপকথন।। গারো গ্রাম-১০।। জাডিল মৃ।।
'হারিয়াকোনা' গারো গ্রামের সাথে কথোপকথন।। গারো গ্রাম-১০।। জাডিল মৃ।।
জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
ছবি-হারিয়াকোনা |
হারিয়াকোনা গারো গ্রাম।এক কথাই প্রকৃতির দান। অসম্ভব সুন্দর একটি গারো গ্রাম।ইতিপূর্বে লোকে মুখে শুনেছি গ্রামের কথা, সৌন্দর্যের কথা,বিশালতার কথা এবং মানুষের কথা।সেই কথা গুলো থেকেই হারিয়াকোনা গ্রামের প্রতি আলাদা ভালোলাগা শুরু হয়। গ্রামে যাবার আকর্ষণ বোধ করি।আমাকে যেতেই হবে দেখতেই হবে হারিয়াকোনা গ্রামের সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির দান। হারিয়াকোনা গ্রামে যাবার পরে আমাকে মুগ্ধ করেছে অনেক কিছুতেই যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
হারিয়াকোনা এবং বাবেলাকোনা গ্রামটি একে অপরের সাথে যুক্ত।মানে বাবেলাকোনা গ্রাম পার হয়ে হারিয়াকোনা গ্রাম যেতে হয়।যদি ভবিষ্যতে যান দু'টো গ্রাম এক সাথে দেখা হয়ে যাবে।গ্রামটি শেরপুর জেলা,শ্রীবর্দী উপজেলা, ১নং সিংগাবরুনা ইউনিয়নে অবস্থিত।উপজেলা থেকে গ্রামে যেতে পথ পাড়ি দিতে হবে ২০ কি.মি।দুই কি.মি কাঁচা রাস্তা,সিএনজি,অটো,রিক্য্রা, হোন্ডা বা পায়ে হেঁটে সহজেই পৌঁছে যাবেন।
ছবি-হারিয়াকোনা ২. |
গজনীর রাস্তা দিয়ে যেতে হবে বিধায় রাস্তার সৌন্দর্য দেখাও উপভোগের বিষয়।প্রথমেই রাস্তার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।যেতে যেতে সেখাকার স্থানীয় শয়তান বাজার থেকে ডানে মোড় নিয়ে চলে গেলেই বাবেলাকোনা ও হারিয়াকোনা গ্রামে সহজেই যেতে পারবেন।রাস্তা খারাপ হলেও গ্রামের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৌন্দর্যমন্ডিত গ্রাম মানুষের আন্তরিকতা দেখে এমনিই মুগ্ধ হয়ে যাবেন।শরীরে ক্লান্তি এক নিমিষেই মুছে দিবে সৌন্দর্যমন্ডিত গ্রামটি।যাওয়ার সুযোগ থাকলে মিস না করাই শ্রেয়।
গ্রামের ব্যাখ্যা কিভাবে দিবো বুঝতে পারছি না।তবুও আপনাদের জন্য যতটুকু পারি সৌন্দর্যসৃষ্টির ব্যাখ্যা দিলাম।
হারিয়াকোনা গ্রামে যাওয়ার রাস্তার দুইপাশে উঁচুনিচু পাহাড়ে রবার গাছের দ্বারা আবৃত।সেখানে প্রচুর রবার গাছ আছে। রবার গাছগুলো রাস্তার দুইপাশে পাহাড়ের পাদদেশে লাগানো বিধায় দেখলে মন জুড়ে যায়।দেখতে সুন্দর হলেও রবার গাছ কিন্তুু ক্ষতিকর।গাছগুলো দেখে মনে হলো অনেক দিনের পুরানো বাগান।আঁকাবাঁকা ইট বিছানো পথ। একটু কষ্ট হলেও যাওয়া যায়।
ছবি-হারিয়াকোনা ৩. |
গ্রামের শুরুতে দোকানপাট আছে। সব দোকানগুলো আ'চিক মান্দিদের(গারো)।এই দোকানগুলোর অবস্থান প্রথমেই আপনাকে মুগ্ধ করবে।মনে হবে আপনি হয়তো বান্দরবান কিংবা রাঙামাটি চলে এসেছেন।এতটা উপভোগের জায়গা,যা আপনাকে আগে বান্দরবান কিংবা রাঙামাটি দেখতে হবে।তারপর না হয় ফিল পাবেন,আমি কী বলতে চাইছি,তা বুুঝতে পারবেন!দুই পাহাড়ের মাঝখানে গ্রামটি অবস্থিত।খেলার মাঠ আছে,স্কুল ঘর আছে,গীর্জাঘর আছে,আবাদী জমি আছে,ধানক্ষেত আছে,বসে থাকার জায়গা আছে,সাথে ছোট জলধারা আছে(মেঘালয় থেকে পানি আসার ধারা)।নদী বলবো নাকি কী বলবো বুঝতে পারছি না।ঘরবাড়ি গুলো দুই পাহাড়ের মাঝখানে এবং পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। গ্রামটিতে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা, সুপারি গাছ,লেবু গাছ,কুল বরই বাগান,লেচু গাছ প্রভৃতি আছে।জানতে পারি গ্রামটিতে বন্য হাতির আনাগোনা আছে।গ্রামটিতে পাঁচটি মাহারি-যেমন,ম্রং,মৃ,জেংচাম,চিরান,রাংসা বেশি সংখ্য আছে।গ্রামটি দেখে আরো আশ্চর্য হয়েছি যে, গ্রামের পানি খুব সুস্বাদু। কলের পানি চাপ দিতে হয় না।এমনেই কল থেকে অবিরত পানি পড়তে থাকে।মনে হয়,গ্রামটি কে ঈশ্বর প্রচুর পরিমাণে আর্শীবাদ করেছেন।গ্রামের মানুষের সখ্যতা ও আন্তরিকতা দারুণ উপভোগ করেছি।গ্রামটি অনেক বড়, পায়ে হেঁটে হেঁটেই আপনাকে উপভোগ করতে হবে।
উত্তর হাড়িয়াকোনা, মধ্য হাড়িয়াকোনা, দক্ষিণ হাড়িয়াকোনা এবং কুমার ঘাটিসহ ৪টি পাড়া নিয়ে গঠিত হাড়িয়াকোনা গ্রামটি।গ্রামে ১৫০ এর অধিক গারো পরিবার রয়েছে।যে পরিবার গুলো ছিমছাম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় আছে।গ্রামে বিশেষত্ব হচ্ছে গ্রামের মানুষগুলো মাতৃভাষায় কথা বলে বেশি মানে বাংলার চাইতে মাতৃভাষার ব্যবহার অত্যাধিক।যা সত্যিই আমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য ও সু-সংবাদ বটে!
ছবি-হারিয়াকোনা ৪. |
আমার বলার চাইতে কত যে সুন্দর সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।সুতরাং ছটফট দেখে আসুন হারিয়াকোনা গ্রামটি।আমি নিশ্চিত নিরাশ হবেন না,টাকা জলে যাবে না।আপনাকে গ্রামের সৌন্দর্য চোখে তৃপ্তি এনে দিবে..মনে শান্তি এনে দিবে,আনন্দের খোরাক যুগাবে.....শুধু একবার যাবেন, তারপর আবার যেতে মন চাইবে.....
হারিয়াকোনা গ্রামের সাথে কথোপকথনে, আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।
ছবি-হারিয়াকোনা ৫. বি:দ্র-সব ছবি রাংস নেংমিনজার ক্রেডিট। |
No comments