কাপ্তাই লেক,রাঙামাটি।
কাপ্তাই লেক,রাঙামাটি।
জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
রাঙামাটির "কাপ্তাই লেক" দেখতে ভারি সুন্দর ,ছুটির সময় গুলো উপভোগের খুব দারুণ জায়গা।ট্রলার কিংবা স্পিড বোর্ড , থাকলে তো কথাই নেই, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়, নিমিষেই,কোন ব্যাপারি না। ট্রলারের উপর বসে থাকা কিংবা দাঁড়িয়ে থাকার মতো মজা দ্বিতীয় কোন আনন্দ নেই,ভ্রমণ সার্থক মনে হবে তখনি যখন ট্রলারে উপর বসে থেকে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পাবে ।
যখন কাপ্তাই লেকে পানি থাকে না, মানে কম থাকে, তখন হাহাকার লাগে চারিদিক, কোন কিছু সতেজ মনে হয় না কেমন যেন সবকিছু রুক্ষ লাগে।নাকি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এমন মনে হয়।
এত দূর থেকে অনেক মানুষ জন পর্যটক হিসাবে যায়,কাপ্তাই লেকের ইতিহাস কিংবা কাহিনী জানে কিনা আমি জানি না,কাপ্তাই লেকের ইতিহাস সকল মানুষকে ব্যাথিত করবে,যদি সঠিক ইতিহাস জানা থাকে এবং অনুভব করতে পারে।যার কারনে বার বার রাঙামাটি যাওয়া সৌভাগ্য হয়েছে, তার নাম না বলেই নয়।আমার মামু "অলিক চন্দ্র মৃ"যিনি আদিবাসীদের প্রতিটা অধিকার আন্দোলন সংগ্রামে লড়াই করে চলছেন।আমার কাছে মনে হয়,বর্তমান সময়ে আদিবাসী তরুণ এবং উদীয়মান নেতা যদি আপোষহীন ভাবে কাজ করে থাকে, আমাকে যদি প্রথম সারি তরুণ নেতা নির্বাচন করতে বলা হয়, তাহলে আমি এক নামেই বলবো"অলিক চন্দ্র মৃ"।কারন নিজের জায়গা থেকে, নিজস্বতা বজায় রেখে বিরামহীন ভাবে কাজ করে চলছেন।এই তরুণ নেতা ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে যাবে, আমি জানি না, তবে আমার পক্ষ থেকে সব সময় শুভ কামনা থাকবে।উনার কারনেই কাপ্তাই লেকের সাথে বার বার পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে।আমি আবার উনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই,ধন্যবাদ মামু, ভালোবাসা নিও।(তবে একটু কম কম খাইও)
চলুন একটু জেনে নেওয়া যাক, কাপ্তাই লেকের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ..
কাপ্তাই লেক মূলত সৃষ্টি হয়েছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য, তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান আমলে এই জলবিদ্যুৎ বাস্তাবায়ন করা হয়।তখনকার সময়ে পাকিস্তানি প্রকৌশলীরা ভেবেছিল,কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তাবায়ন করলে খুব কম জায়গা জলমগ্ন হবে।কিন্তুু দেখা গেল, উনাদের হিসাব উলট পালট করে দিয়ে ৫৪ হাজার একর পাহাড়, বন এবং চাষাবাদ জমি ডুবে যায়।ফলত,পরিবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্য আদিবাসী উদ্বাস্তুুতে পরিণত হয়।পানির নিচে চলে যায় হাজারো আদিবাসীর স্বপ্ন, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং চাকমা রাজার রাজ বাড়ি।তখনকার সময়ে এক লাখ আদিবাসী উদ্বাস্তুুতে পরিণত হয়।তখন আদিবাসীরা ভারতের মিজোরাম, অরুনাচল এবং ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নেয়।এই বিপুল সংখ্য উদ্বাস্তু আদিবাসীরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এবং তাদেরকে পূর্ণাবাসন করেছে কিনা, জানি না ।রাঙামাটি শহর এবং আদিবাসী গ্রামগুলো পাহাড়ে অবস্থিত কারন নিচু জমি সব ডুবে যায়।নিজের চোখে নিজের বাড়িঘর পানিতে চলে যাওয়া দৃশ্য কি করুণ হতে পারে, একটু কল্পনা করে দেখতে চেষ্টা করি।এই কাপ্তাই লেকের পানি শুধুমাত্র পানি নয়,এই পানি আদিবাসীদের কান্নার জল,একটু একটু করে চোখের পানি, বিশাল লেকে পরিণত হয়েছে।
প্রত্যক্ষ ভাবে দেখার সুযোগ হয়নি,তবে শুনেছি যে যখন কাপ্তাই লেকের পানি কমে যায় তখন আদিবাসীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।পানি থাকলে সহজেই একটা জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়।কিন্তুু পানি না থাকলে হেঁটে হেঁটে বহুদূর পর্যন্ত যেতে হয়,যা বাড়তি কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাজার করতে, স্কুল কলেজে যেতে কিংবা জরুরি রোগীদের সুচিকিৎসা জন্য নিতে, যারা পরিস্তিতির মোকাবেলা করেছে তারাই শুধু জানবে,এই কষ্ট গুলো কতটা ব্যাথার।
রাঙামাটি যেতে পারেন, কোন সমস্যা নাই,আমার একটাই অনুরোধ থাকবে কাপ্তাই লেকের ইতিহাস আগে জেনে নিবেন।কারন, কাপ্তাই লেকের ইতিহাস জানা প্রয়োজন সবার আগে, যদি না জানি তাহলে একজন আদিবাসী হিসাবে রাঙামাটি যাওয়া কি সার্থক হবে??
No comments