ভ্রমণের অভিজ্ঞতা,সুনামগঞ্জ ভ্রমণ-৩।। Blog-5।।



ভ্রমণের অভিজ্ঞতা,সুনামগঞ্জ ভ্রমণ-৩।। Blog-5।।

জাডিল মৃ( Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার



ছবি-জাডিল মৃ




"গারো গ্রামে, গারো নাই",বেমানান লাগছে?আমি কেমন তাজ্জব কথা বার্তা বলছি,তাই না! তবে বাস্তবতার নিরিখে মানতেই হবে, গ্রামে শুধু মাএ একটি গারো পরিবার রয়েছে।আছে জরাজীর্ণ জিবিসি স্কুল,তাও আবার বন্ধ।পারতপক্ষে, আমি কোথাও গেলে গারো গ্রাম বা গারো পরিবার দেখতে মিস করি না।যেখানেই যাই, যে প্রান্তে'ই ভ্রমণ করি না কেন। প্রথমে আমার মাথায় থাকে কোথাও গারো পরিবার বা গারো গ্রাম আছে কিনা?যখন শুনলাম,এখানে মানে বর্তমানে একটি মাএ গারো পরিবার "রাজাপাড়া "গ্রামে বসবাস করছে।কিসের ঘুম, কিসের দুর্বলতা, কিসের বৃষ্টি আর কিসের বারণ!!বাড়িটি দেখতে রনিত দাদার সাহায্যে চলে গেলাম,যেখানে স্বস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, একটি মাত্র গারো পরিবার।বাড়ির উঠান থেকে মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস দেখা যায়।



কথার প্রসঙ্গে জানতে পারলাম,ঘরটি "হাগিদক"মাহারির বাড়ি।আগে তিনি জিবিসি'র সদস্য ছিলেন,বর্তমানে কোন সম্পর্ক নেই।(উননাকে  নিয়ে এবং জিবিসি স্কুল নিয়ে ফিচার লিখেছিলাম,"থকবিরিম নিউজে"।চাইলে বিস্তারিত পড়তে পারেন,লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি...http://www.thokbirimnews.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a4%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%82-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b0/    ) 



উনার সাথে






মাঝে মাঝে ভাবতে খুব অবাক লাগে।গারো কোথায় ছিল না, কোথায় নেই?মেঘালয় রাজ্যের বর্ডার ঘেঁষা  বাংলাদেশের সব জায়গাতেই গারোদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। শুধুমাত্র বর্ডার বলছি কেন!দেশের ভিতরে অনেক জায়গাতেই গারোদের অস্তিত্ব রয়েছে কিংবা দেখতে পাওয়া যায়।কিন্তুু অনেক গারো গ্রাম আজ তা ইতিহাস,শুধু মাত্র ইতিহাস।এক এক করে সবাই ভারতে চলেগেছে। যারা যাইনি বা যেতে পারিনি আমরাই তাদের বংশধর।বাড়িটি'র যে গৃহিণী ছিলেন,আমাদের তিনজন কে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন।তিনি ভাবতে'ই পারেনি, আমরা হঠাৎ করে  দর্শন দিবো মানে দেখা করতে যাবো।চা নাস্তার অফার দিলেন, আমরা গ্রহণ করতে পারিনি।কেন না  বাড়িটি'তে আসার আগেই চা নাস্তা সেরে নিয়েছিলাম।আরেকটা কারণ ছিল,উনাকে কোন ঝামেলায় ফেলতে চাইনি।



জিবিসি'র স্কুল




বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম।
দীর্ঘ নিশ্বাস নেওয়া ছাড়া আমার করার কিছু ছিল না।ছোটখাটো মানুষের কিবা করার আছে?যারা বড় পর্যায়ে আছে, তাদেরি কোন নাম গন্ধ নেই,মাথা ব্যাথা নেই!বাড়ি থেকে বের হয়ে আরো সামনের দিকে হাঁটলাম। মোটামোটি খুব কাছেই বর্ডার। এক জায়গাটা'তে ঘাসের উপর শুয়ে পড়লাম।চোখের সামনে চাষাবাদের জমি,তারপর বর্ডার,তার পর মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস।দূর থেকে দেখতে খাসিয়া হিলস বেশ চমৎকার লাগছিল। কত উঁচু উঁচু পাহাড়,সেখান কার মানুষ জন কিভাবে থাকে?


বর্ডার দেখি





মাঝখানে বর্ডার, এপার ওপার ভারত ও বাংলাদেশ। বর্ডার আমাদের কে ভাগ করেছে,ভাগ করেছে অনেক কিছুই।জাতি'তে আমরা গারো হলেও একজন বাংলাদেশী আরেক জন ভারতীয়। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছিলাম,যদি বর্ডার নামক শব্দ ধ্বংশ করতে পারতাম।বাংলাদেশী কিংবা ভারতীয় বলতে কোন কিছু থাকতো না।দ্বিধাহীন ভাবে বলতে পারতাম, আমরা গারো,গারো জাতিগোষ্ঠীর একজন সদস্য।তখন কোন বাংলাদেশী কিংবা ভারতীয় পরিচয় থাকতো না।

কত স্বপ্ন,কত প্রত্যাশা,কত ধরণের আফসোস নিয়ে, এক পর্যায়ে হাজং গ্রামের দিকে রওনা দিলাম।তখনো মনের কষ্ট শেষ হয়নি,চাপা কান্না ভুলতে চেষ্টা করতে থাকলাম....



হায় বাস্তবতা!হায় গারো জাতি! হায় ঈশ্বর!


(চলবে...)


(মঙ্গলবার সকালে,৭-১০-২০১৯)

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.