আমার ছোটবেলার সিনেমা হল



আমার ছোটবেলার সিনেমা হল

জাডিল মৃ(Jadil Mri)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার


ছবি-তরুণ লেখক এবং ব্লগার 







চারিদিকে উৎসবের আমেজ,সনাতন ধর্মবলাম্বী প্রধান উৎসব দূর্গাপুজো পালিত হচ্ছে।আজকে আমার বন্ধু জীবন ম্রং এর ছেলের জন্য নাম দিয়েছি,এই প্রথম বার কারো জন্য নাম দিলাম।সবারি বেশ লেগেছে পছন্দ করেছে (.) রাক্কা নামটি। এই মনের খুশিতে দূর্গাপুজো'র জিলাপি খেতে দোখলা মেলাতে গেলাম।বাহ্, জিলাপি খেতে বেশ চমৎকার লাগছিল।দোকানটি  মান্দি দোকানদের ছিল,সেই দোকানদার কে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি।তার জীবনকাহিনীর সম্পর্কে "থকবিরিম নিউজ" পোর্টালে ফিচার হিসাবে অতি শীঘ্রয় লেখা আসবে।জিলাপি খেতে খেতে অতীতের স্মৃতিগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা দিতে লাগলো, মনের স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলাম দশ /এগারোর বছরের ছোটবেলার  সময়ে,তখন ক্লাশ তৃতীয় নাকি চতুর্থ  শ্রেণীতে পড়ি।



এক সময়ে MP3 কিনার অনেক শখ ছিল, গ্রামের অনেক যুবক হাতে কোমড়ে নিয়ে নিয়ে ঘুরতো,খুবই আপসোস লাগতো।মনে মনে চিন্তা করতাম, যদি আমারো একটা MP3 থাকতো।আমিও ওদের মতো করে গান শুনে শুনে ঘুরে বেড়াতে পারতাম।এর পর আসলো MP4। এইটা দেখো তো আরো পাগল হয়ে গেলাম।গান শুনা যায় সাথে ভিডিও দেখা যায়, একটা মারাত্মক ব্যাপার।MP4 কিনার জন্য সব সময় মন উতলা হয়ে থাকতো,টাকা পয়সা জমানোর চেষ্টা করতাম।কিন্তুু আমার সামর্থ্য ছিল না, ফলে MP3 বা MP4 কোনটাই কেনা হয়ে উঠেনি।



এখন যে খুব দামি ফোন ব্যবহার করি তেমন'টি নয়, শুধুমাত্র খুব সাধারণ ফোন কেনার সৌভাগ্য হয়েছে।তবে,একটা ব্যাপার আছে,MP3 কিংবা MP4 দুটোই এক সাথে আছে, সাথে ফোন করা যায় আরো অনেক কিছুই তো করা যায়।ছোটবেলায় এত আপসোসের দিন কাটতো, এখন আমার হাতের মুঠোয়। এখন ভাবি,এই সামান্য জিনিসের জন্য এত আপসোস ছিল,এত আকাঙ্ক্ষা জম্ম নিয়েছিল, এখন মনে পড়লে খুব হাসি লাগে।মনে হয়,এখন যা হাসি মনে হয়, তখনকার সময়ে কতই না প্রযোজ্য ছিল।

এত লম্বা কাহিনী কেন বলছি,কারন আমার জীবনের কাহিনী সম্পর্কে একটু হলেও আপনাদের জানাতে চাই..



তখন,স্মার্টফোন বলতে চোখে দেখিনি, নকিয়া ১২০০ প্রচলনি ছিল সর্বেসর্বা। স্মার্টফোন আসার সাথে সাথে কত কিছুই না পরিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে।যেহেতু আমার ফোন বলতে কোন কিছু ছিল না, ছিল না MP4 বা MP3, সেহেতু ভিডিও দেখার আগ্রহ সব সময়'ই ছিল  স্বপ্নের জায়গা।টিভি থাকা সত্ত্বেও সিনেমা দেখারর প্রবণতা ছিল সবেচেয়ে বেশি,যার ফলে সিনেমা দেখার জন্য জীবনে কত কিছুই না করেছি।



ছোটবেলায় দূর্গাপুজো মানে বিশাল কিছু,অনেক মজা লাগতো,কারন সিনেমা দেখতে পেতাম। প্রতি বছর সিনেমা দেখার জন্য দূর্গাপুজো'র জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। দূর্গাপূজো'র সময় অনেক গুলো সিনেমা হল তৈরি হতো, একটি রুমে সারাদিন তো বটেই, গভীর রাত পর্যন্ত সিনেমা দেখানো হতো।চাঁর কিংবা পাঁচদিনের জন্য সিনেমা হল জমজমাট থাকতো।বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হলিউড বলিউড সিনেমাও চলতো।তবে, যেখানে মারামারি অ্যাকশন সিন থাকবে মানে ডিভিডি'র কাভার দেখে লোকজন সিনেমা দেখতো।আমিও যতগুলো সিনেমা দেখেছি সব ছিল অ্যাকশন সিনেমা।যেহেতু অ্যাকশন সিনেমা'র কদর ছিল বেশি টিকিটের দাম থাকতো একটু বেশি,আবার কোন কোন সময় টিকিটে'র দাম থাকতো কম।সিনেমা হল তৈরি  হতো একটি রুমে,সামনে থাকতো টিভি এবং ডিভিডি প্লেয়ার,  মজার ব্যাপার হচ্ছে বসার জায়গা'টি ছিল মাটিতে, তবুও সবসময় মানুষ ভর্তি হল রুম থাকতো।



আমার প্রথম সিনেমা হল,যেখান থেকেই ৫০ বা ৭০ জনের সাথে বসে এক সাথে সিনেমা দেখেছি।এমনো দিনগেছে দিনে দুই'টার অধিক সিনেমা দেখেছি।আজ এই সব নেই,সবার হাতেই স্মার্টফোন। ইচ্ছো করলেই নের্ট থেকে কিংবা শেয়ার এর মাধ্যমে সিনেমা আদান প্রদান করা যায়।এই আদান প্রদান সহজের ফলে ছোট বেলার সিনেমা হল আর নেই।



আমার সিনেমা হল এখন ফ্যাকাসে ফ্যাকাসে আবছা স্মৃতি, স্মৃতির ঘোরে কবে যে জিলাপি খাওয়া শেষ হয়ে গেল,খেয়াল ছিল না।


এখন মনে হচ্ছে,

আজ যা বর্তমান,কাল তা অতীত।
আজ যা অবাস্তব বা অক্ল্পনীয়,কাল তা বাস্তব।

৪ অক্টোবর ২০১৯..



অন্যান্য লেখা-https://jadilmree.blogspot.com/2019/10/the-last-of-songsarek.html?m=1

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.