গারো, আচিক, মান্দি এবং থকবিরিম


Ja'Dil Mri





1.মাতৃভাষা নিয়ে আমার আবেগের জায়গায়টা অনেক উঁচু স্থানে।মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় কথা বলা খুব একটা পছন্দ করি না।নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার যে অন্য রকম স্বাদ তা অন্য ভাষায় পাওয়া যায় না।আমি সব সময় চেষ্টা করি নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে তার পরেও অন্য ভাষা চলে আসে,অবশ্য এটা নিজের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য খুব করে চেষ্টা করছি,কথা বলার মানুষ এবং সমমানের সঙ্গী না থাকলে যা হয় আরিকি!অতীতের কিছু লেখা দেখলাম বিভিন্ন সময়ের কাজ সমূহ দেখলাম মনের ভেতর কেমন যেন কনফিউশ চলে এল অবশ্য আগে থেকেই ছিল।আজকে এই বিষয়টা একটু স্পর্শ করতে চাই।


2.পূর্বপুরুষদের কাছে(গল্প) শুনা যায়, একটা সময় আমাদের থকবিরিম(বর্ণমালা) ছিল।যখন পূর্বপুরুষরা ভারতবর্ষের দিকে আসছিল তখন তীব্র খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হলো।সব লোক ছিল প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ফলে যার কাছে থকবিরিম ছিল সে পশুর চামড়া সিক্ত করে খেয়ে ফেলেছিল।সেই পশুর চামড়ায় আমাদের মহামূল্যবান থকবিরিম লেখা ছিল, যখনি পশুর চামড়া সিক্ত করা হলো আমরা হারালাম আমাদের থকবিরিম। আমি এখন কনফিউশ আসলে কাহিনী সত্য নাকি কাহিনী বানানো।অবশ্য যুক্তি দিলে অনেক ভাবেই যুক্তি দেওয়া যায়।যাই হোক আমাদের বর্ণমালা নাই এটাই সত্য এটাই বাস্তবতা।



3.বর্ণমালা নাই, সেটা মানলাম, কিন্তুু না থাকার পরেও আবার আছে।অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,  আমাদের তো বর্ণমালা নাই কিন্তুু আছে?এটা খুব দ্বিধাজনক এক প্রশ্ন।হ্যাঁ আমাদের বর্ণমালা আছে।নিজেদের প্রয়োজনের স্বার্থে আমরা নিজেদের মত করে ব্যবহার করি। অনেকে বলবে এইটা তো অমুক সমুক,যে যাই বলুক আমার আপত্তি নাই।কারন অনেক জাতি ও দেশ আছে যাদের নিজস্ব বর্ণমালা নাই কিন্তুু নিজেদের প্রয়োজনের স্বার্থে নিজেদের মত করে ব্যবহার করছে।তাতে কোথাও শব্দের ব্যবহার কম আবার কোন কোনটা শব্দের ব্যবহার নাই।হ্যাঁ,আমি ল্যাটিন শব্দের কথা বলছি।ল্যাটিন বর্ণমালাটাই আমরা ব্যবহার করি।আমরা হয়তো অনেকে জানি ইংরেজী দিয়ে লেখা হয় বা মেঘালয় রাজ্যে ইংরেজী ব্যবহার করে।কিন্তুু প্রকৃত উৎস হচ্ছে ল্যাটিন।

4.আমিও ল্যাটিন শব্দ ব্যবহার করে মাতৃভাষায় কিছু লেখার চেষ্টা করছি।অনেকে বলে থাকে বর্ণমালা আবিষ্কার করলেই তো হয় ল্যাটিন ব্যবহার করার কি দরকার।এখানেই অনেক গুলো প্রশ্ন এসে যায়।দেশ ভাগ হওয়ার আগে আমরা ভারতবর্ষে ছিলাম। কিন্তুু এখন দুটো দেশ আবার দেশের ভেতরে বিভিন্ন জেলা বা রাজ্যে বসবাস করছি। আমাদের মানে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্যক্তি বর্ণমালা আবিষ্কার করেছে কিন্তুু কারো বর্ণমালা তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাই নাই।ভারতে আবিষ্কার হয়েছে কিনা বা চেষ্টা হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নাই।সেখানে মূলত পড়াশুনা বা লেখার ক্ষেত্রে ল্যাটিন ভাষায় ব্যবহার হয়।আমি ব্যক্তিগত ভাবে অবশ্য ল্যাটিনের ব্যবহারের পক্ষে।কথার কথা, ভারতে গারো আছে ১৪ থেকে ১৬ লাখ আর আমরা বাংলাদেশে আছি দুই থেকে আড়াই লাখ। যদি সম্ভাব মোট ধরি তাহলে ১৮ লাখ।এত বিপুল সংখ্যক লোকদের আবার নতুন করে বর্ণমালা শিখানো কী সম্ভব?সবার কাছে যে গ্রহণযোগ্যতা তাতে কী আদায় সম্ভব বা এত সময় প্রয়োজন অল্প সময়ে অনেক কিছু করতে হবে সবকিছু কী সম্ভব হবে?এছাড়াও অনেক প্রশ্ন আসে মাথায়।

আমরা অনেকে জানি আবার অনেকে জানি না আসলে আমরা কোন কোন শব্দ ব্যবহার করি আবার কোন কোন শব্দ ব্যবহার করি না।সেটা নিচে দেওয়া হলো...

A-a.           B-b.          C-c.           D-d.        E-e.          

G-g.           H-h.           I-i.             J-j.            K-k.

L-l.             M-m.         N-n.          O-o.           P-p.

R-r.             S-s.           T-t.            U-u.            W-w.


5.আমরা মূলত বিশটা শব্দ ব্যবহার করি আর বাকী যে ছয়টা শব্দ যেমন-

F-f.      Q-q.     V-v.     X-c.      Y-y.       Z-z.

তা আমরা ব্যবহার করি না। নিজেদের প্রয়োজনের স্বার্থে বা কারনেই হোক আমরা কিন্তুু বিশটা ব্যবহার করি।
আমাদের যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে এই শব্দ গুলো ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদের মাতৃভাষায় চ্যাটিং করতে পারি  লেখালেখি শুরু করতে পারি এবং আশেপাশের মানুষদের উহসাহ দিতে পারি।

6.অবশ্য এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় আমাদের (.) রাক্কা ব্যবহার জানতে হবে।আমিও ঠিক এখন রাক্কার ব্যবহারের নিয়ম বুঝে উঠতে পারি নাই।রাক্কা ব্যবহার মূলত কিছুক্ষণ থামার জন্য ব্যবহার হয়। যেমন-
A.chik
Ki.tap
Ma.drang
jo.ong
এই ভাবেই রাক্কা ব্যবহার হয়।

7.ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব কনফিউশনে আছি,সেই বিষয়টা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। অনেক লেখা লিখি পত্র পত্রিকায় দেখলাম এমকি নিজের আশেপাশের মানুষদের কাছেও শুনেছি।এমনি করে কোথাও বলে গারোদের মাতৃভাষার নাম "গারো ভাষা" আবার কোথাও কোথাও লেখা গারোদের মাতৃভাষার নাম "আ'চিক ভাষা" আবার কোথাও কোথাও গারোদের মাতৃভাষার নাম "মান্দি ভাষা"।একেক জন একেক ভাবে বলছে,যারা পড়ছে বা যারা আমার মত মানুষ তারা খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় কারন কোনটা যে বেশি গুরুত্ব দিব বা আসলে কোনটা বলা উচিত, আমি জানি না।তিনটাই ঠিক আছে কিন্তু তিন ভাবে যদি বলি একটা মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে বাধ্য।আশা করি, যদি আপনাদের জানা থাকে এই বিষয়টা আমাকে যুক্তিসংগত ভাবে বুঝালে খুবই উপকৃত হবো।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.