চু; জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি!!


Ja'dil Mri


চু(Chu)




চু এমন একটি শব্দ যা আমাদের কাছে অপরিচিত কোন শব্দ নয় বা কারোর অজানা থাকার কথা না। চু নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে সেটা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক ।চু কারো কাছে পবিত্র জিনিশ আবার কারো কাছে দুর্গন্ধযুক্ত কোমল পানীয়। চু নিয়ে আমাদের মধ্যে দুটো পক্ষ কাজ করে বা পক্ষপাতী। কেউ কেউ চু এর পক্ষে কথা বলে, আবার অনেকে চু'র বিপরীত। দুটোপক্ষের কিছু সুন্দর সুন্দর যুক্তি আছে, আমার কাছে যুক্তিগুলো ঠিক মনে হয়। আমাদের সমাজ কে এখন দুটো ভাগ করতে পারি। এক,যে সমাজে চু খাওয়া হয়।দুই,যে সমাজে চু খাওয়া হয় না।আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি আমার বেড়ে উঠা দুটো সমাজেই।খুব কাছ থেকে দুটো সমাজকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।দুটো সমাজের পরিবেশ দুই রকম স্বাদ পাওয়া যায়,একটার সাথে অন্যটার কোন মিল নেই।

আমরা হয়তো জানি, চু কেন খাওয়া হয় আবার হয়তো অনেকে আসল কাহিনী জানি না। চু এটা কোন মাদক বা নেশা করার জন্য না,অনেকে চু'কে না জেনেই মাদক বা নেশাজাতীয় কোমল পানীয় বলে থাকে কিন্তুু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই কথাগুলো যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে চু নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি রকমের পর্যায়ে চলেগেছে।এখন অনেকে চু খাই নেশার জন্য বা মাদক হিসাবে ব্যবহার করে; আবার অনেকে খাই এক ধরনের ফ্যাশন করার জন্য বা বন্ধুদের তাড়নায়।কিন্তুু চু খাওয়ার যে প্রকৃত নিয়ম বা ব্যবহার তা হয়তো এখন মানা হয় না।এখন নিয়ম কানুনের বালাই নাই।আমার সাথে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারে এই ভেবে যে, চু খাইতে আবার নিয়ম কানুন লাগে নাকি?খাইতে পারলেই হইসে।কবি মিঠুন রাকসামের একটি কবিতা মনে পড়ল,

গারো মদ ও প্রেম-১


গারো মদ আস্তে আস্তে ধরে
প্রেমের পড়ার মতো
গোলাপি নেশা পর্যন্ত ভালো
পাড় মাতাল হলে বিপর্যয়
গ্লাশ ভরতি গারো মদ
এক ডজন প্রেমিকার কথা
স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে
চুমুক নিচ্ছি
নাম দিচ্ছি
গোলাপি নেশা হচ্ছে...
মদ আর প্রেম
একটি রঙিন স্বপ্ন
চুমুক দিচ্ছি...
      চুমুক দিচ্ছি...
মন ভরে না!

তাহলে আমরা একটু জেনে আসি চু কোন সময় খাওয়া হতো,আমরা কিছুক্ষণ অতীতে ফিরে যাই।প্রকৃতপক্ষে সাধারণত চু সবসময় খাওয়া হতো না,সারাদিন কাজ করে যখন নিজের বাড়িতে ক্লান্ত শরীর আর চলতে চাইতো না, কেমন জানি শরীর দুর্বল দুর্বল লাগতো,সবকিছু মন দেহ অবশ মনে হতো, শরীর চাঙ্গা করতে একটু আরাম আমোদ পাওয়ার জন্য চু খাওয়া হতো।সবসময় যে খেতো এমনটা না,খাওয়ার মধ্যেও সীমাবদ্ধতা থাকতো।কিন্তুু বর্তমানে এর কোন সীমাবদ্ধতা নাই,যে যেমন খুশি পাই তেমনি খাই।যত পাই ততই খাইতে থাকে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে, নতুন ফ্যাশনের চু খাওয়ার যে পদ্ধতি তা একেবারেই সমর্থ করি না।অবশ্য আমার সমর্থ করা বা না করা দিয়ে কি আসে যায়।আমার কাছে মনে হয় এটা অনেকের ভুল ধারণা যে,চু খাইলে ঐহিত্য বা সংস্কৃিত রক্ষা হয়;এটা আমি কোনমতে বিশ্বাস করতে পারি না।আমরা যদি সত্যি সত্যিই ঐহিত্য বা সংস্কৃিত রক্ষা করতে চাইতাম তাহলে অন্য ভাবেও সেটা করা যায়।


একটা সময় ছিল চু যখন আমাদের অপরিহার্য এক জিনিশ ছিল।এখনো চু এর প্রয়োজনীয়তা আছে, তবে আমার কাছে মনে হয় প্রয়োজনীয়তা আগের মত তেমন প্রখর নয়।এমন সময় ছিল, যখন জম্ম থেকে মৃত্যু অবধি চু আমাদের অপরিহার্য এক জিনিশ ছিল।একটি শিশুর জম্ম নেওয়ার আগ থেকে চু রান্না করে রাখা হতো,যাকে বলে চু-জাঙ্গি, শিশুটি জম্ম নেওয়ার পরে  Dikka থেকে প্রথম যে বিচ্চি পাওয়া যেত, সেই বিচ্চি এক ফোঁটা শিশুটিকে মুখে দিয়ে বরণ করা হতো।আবার মৃত্যুর শেষ বিদায় পর্যন্ত চু দিয়েই সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।যে সমাজে চু খাওয়া হয়,সেখানে যে অনুষ্ঠানি হোক যেমন-বিবাহ,শ্রাদ্ধ, জম্মদিন,মানসা,দাওয়াত,অতিথি বরণ, সাংসারেক ধর্মের কোন অনুষ্ঠান  হলে, ইত্যাদি সকল আয়োজনে চু থাকবে এবং চু প্রধান কোমল পানীয় হিসাবে কাজ করে,চু ছাড়া কোন অনুষ্ঠান কল্পনা করা যায় না।

একটা সময়ে প্রকট ছিল যখন চু অপরিহার্য ছিল"চু;জম্ম থেকে মৃত্যু অবধি"।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.