হাজং
জা'ডিল মৃ
আমার বাবা একজন "হাজং" টাইটেলের গারো জাতিগোষ্ঠীর একজন সদস্য এবং বাবার গোষ্ঠী সবাই হাজং টাইটেলর এর সদস্য।আমি কখনো জানতাম না "হাজং" নামে কোন জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে।ফলত যখন শুনলাম, জানলাম, হাজং জাতি নামে আসলেই অস্তিত্ব বিদ্যমান, স্বাভাবিক ভাবেই থতমত খাওয়া অবস্থা।আমি খুব কৌতুহলি ছিলাম,আমি ভেবেছিলাম গারোদের হয়তো হাজং টাইটেল এর অংশ যারা নিজেদেরকে হাজং জাতি হিসাবে দাবি করে,সুতরাং গারোদের বিচূতি একটা অংশ।আরো বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য ইন্টারনেট বই ঘাটাঘাটি করলাম।জানতে পারলাম হাজং নামটা দিয়েছে গারোরা,গারো ভাষায়" হা হচ্ছে মাটি,জং হচ্ছে পোকা" অর্থাৎ মাটির পোকা।অন্যদিকে হাজংদের ভাষ্য মতে, হাজং শব্দের অর্থ প্রস্তুত হই, সজ্জিত হই, সংগঠিত হই। অর্থাৎ অতীতে অনেকবার নানান সমস্যার ফলে ছএভঙ্গ হয়েছিলেন,তবে নতুন ভাবে পুনরায় সংগঠিত হতে পেরেছিলন বলে, সেই কারণে হাজং নামের উৎপত্তি।
আসলে আমি জানি না,গারোরা নাম দিয়েছিল কিনা বা যদি দিয়েও থাকে তাহলে গারোদের মধ্যেও হাজং টাইটেল আসলো কিভাবে?নাকি বিবাহ সম্পর্কে কারণে কোন একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, চেষ্টা করেও কোন তথ্য পেলাম না,হয়তো সেটা আমার ব্যর্থতা। আমার ঠিক মনে নেই কোথায় প্রথম দেখেছিলাম তবে গজনী, হালুয়াঘাট,সিলেট প্রভৃতি স্থানে সাধারণ ভাবে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল।সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় হাজং পাড়ায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার,আমরা যে কজন ছিলাম,কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তুু প্রতিবারি ব্যর্থ হয়েছি,হয়তো অচেনা মানুষ বলে কথা বলেনি।খুব কাছ থেকে এখনো হাজং জাতিগোষ্ঠীর জীবন ধারা, আচরণ দেখা সম্ভব হয়ে উঠেনি।আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা আছে,কোন একদিন ঘুরতে যাব হাজং পাড়া বা এলাকায়, তাদের সাথে সময় কাটানো সৌভাগ্য মনে করব ।হাজংদের প্রতি আমার আবার আলাদা টান আছে হয়তো সেই টাইটেলটার কারণে,যেটা আমার জন্য বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল।
হাজং জাতি গোষ্ঠী মূলত শেরপুর জেলার অন্তর্গত শ্রীবর্দী, নালিতাবাড়ী,ঝিনাইগাতী ময়মনসিংহ জেলাধীন ধোবাউড়া, নেত্রকোণা জেলাধীন কলমাকান্দা, দূর্গাপুর সুনামগঞ্জ জেলাধীন ধরমপাশা, তাহেরপুর, বিশম্ভপুর, ও দোহারা বাজার প্রভৃতি জায়গায় বসবাস করে।শুধু মাত্র বাংলাদেশই নয় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বসবাস রয়েছে। হাজং জাতি গোষ্ঠীর সোনালী ইতিহাস আছে গর্ব করা মতো, হাতিখেদা বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, টঙ্ক প্রথা ও জমিদার প্রথা বিরোধী আন্দোলনের প্রভৃতি আন্দোলনের নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিলেন।এছাড়াও হাজং মাতা রাশিমণি, কুমোদিনী হাজং,যাদুমণি হাজং,অশ্বমনি হাজং এবং ভদ্রমনি হাজং এমনি ভাবে নাম না জানা অসংখ্য শহীদ আছে,যাদের রক্তের বিনিময়ে হাজং জাতি এখনো বেঁচে আছে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে।যাদের কারণে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে হাজং জাতি,যাদের প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই ইতিহাস।
জানা যায়, ১৯৪৬ সালের পূর্বে হাজংদের প্রায় ৪০০ টার মত গ্রাম ছিল।বর্তমানে প্রায় ১০০ মত গ্রামের খোঁজ পাওয়া যেখানে ২০ হাজার এর অধিক হাজং জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। সমাজ পরিচালনায় সমগ্র অঞ্চলটি চারটি ভাগে বিভক্ত- (১) কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি পাড়া (২) কয়েকটি পাড়া নিয়ে একটি গাঁও (৩) কয়েকটি গাঁওয়ের সমন্বয়ে একটি চাকলা গঠিত (৪) কয়েকটি চাকলা নিয়ে একটি পুরাগাঁও বা পরগনা গঠিত হয়।হাজং জাতিগোষ্ঠীর কিছু খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের ছাড়া মোটামোটি সবাই সনাতন হিন্দু ধর্ম পালন করে।তাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অন্তর্গত, পরিবার থেকে নারীর কোন সম্পত্তি পাওয়া অধিকার নেই তবে যদি দান করে সেটা ভিন্ন কথা।
হাজং জাতিগোষ্ঠীর প্রচলিত নিজস্ব ভাষা আছে, গান আছে, গীত-গীতি নাটক আছে, স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এক পূরর্ণ জাতি, কিন্তুু লিখিত কোন রুপ নেই।
এত সংগ্রাম ঐতিহ্য আন্দোলন ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও, হাজং জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন কিন্তুু ভালো নেই।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে পাকিস্তান আমল তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে।অন্যন্য আদিবাসীর চাইতে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে,দারিদ্র্যতা এখনো পিছু ছাড়েনি।যেটুকু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, যেটুকু মৌলিক অধিকার পাওয়ার কথা ছিল, হাজং আদিবাসী মানুষ সেটুকু পাইনি।অনেক কঠিন সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়, জমি দখল হয়ে যাচ্ছে,দারিদ্র থেকে আরো দারিদ্র হচ্ছে,সম্পত্তি রক্ষা করা যাচ্ছে না,দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে,সামাজিক ভাবে এখনো শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি,শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম,অধিকার থেকে বঞ্চিত, এমনি ভাবে অস্তিত্বের সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সময় যদি এমনি করে চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকবে না,এই সংকটময় সময়ে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়,তাহলে অনেক দুঃখের কারণ হিসাবে দাঁড়াবে।ফলত এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়াছে যে আদিবিসীদের অস্তিত্ব শুধু যাদুঘরে মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে সুতরাং সবার অস্তিত্ব যাতে থাকে সেই জন্য সরকারের সদিইচ্ছা থাকা দরকার এবং একে অপরের সাহায্য খুব দরকার।আমি চাই না কোন জাতি বিলুপ্ত হোক বা অস্তিত্বেরর সংকটে থাকুক।আমি বিশ্বাস করি, হাজং জাতি অতীতে যেমন মাথা উঁচু করে সংগ্রাম করে বেঁচে ছিল, সোনালী ইতিহাস রচনা করেছিল, তেমনি হাজং জাতি বেঁচে থাকবে আরো যুগের পর যুগ শত বিপদ আপদ থাকা সত্ত্বেও।
আমার বাবা একজন "হাজং" টাইটেলের গারো জাতিগোষ্ঠীর একজন সদস্য এবং বাবার গোষ্ঠী সবাই হাজং টাইটেলর এর সদস্য।আমি কখনো জানতাম না "হাজং" নামে কোন জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে।ফলত যখন শুনলাম, জানলাম, হাজং জাতি নামে আসলেই অস্তিত্ব বিদ্যমান, স্বাভাবিক ভাবেই থতমত খাওয়া অবস্থা।আমি খুব কৌতুহলি ছিলাম,আমি ভেবেছিলাম গারোদের হয়তো হাজং টাইটেল এর অংশ যারা নিজেদেরকে হাজং জাতি হিসাবে দাবি করে,সুতরাং গারোদের বিচূতি একটা অংশ।আরো বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য ইন্টারনেট বই ঘাটাঘাটি করলাম।জানতে পারলাম হাজং নামটা দিয়েছে গারোরা,গারো ভাষায়" হা হচ্ছে মাটি,জং হচ্ছে পোকা" অর্থাৎ মাটির পোকা।অন্যদিকে হাজংদের ভাষ্য মতে, হাজং শব্দের অর্থ প্রস্তুত হই, সজ্জিত হই, সংগঠিত হই। অর্থাৎ অতীতে অনেকবার নানান সমস্যার ফলে ছএভঙ্গ হয়েছিলেন,তবে নতুন ভাবে পুনরায় সংগঠিত হতে পেরেছিলন বলে, সেই কারণে হাজং নামের উৎপত্তি।
আসলে আমি জানি না,গারোরা নাম দিয়েছিল কিনা বা যদি দিয়েও থাকে তাহলে গারোদের মধ্যেও হাজং টাইটেল আসলো কিভাবে?নাকি বিবাহ সম্পর্কে কারণে কোন একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, চেষ্টা করেও কোন তথ্য পেলাম না,হয়তো সেটা আমার ব্যর্থতা। আমার ঠিক মনে নেই কোথায় প্রথম দেখেছিলাম তবে গজনী, হালুয়াঘাট,সিলেট প্রভৃতি স্থানে সাধারণ ভাবে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল।সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় হাজং পাড়ায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার,আমরা যে কজন ছিলাম,কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তুু প্রতিবারি ব্যর্থ হয়েছি,হয়তো অচেনা মানুষ বলে কথা বলেনি।খুব কাছ থেকে এখনো হাজং জাতিগোষ্ঠীর জীবন ধারা, আচরণ দেখা সম্ভব হয়ে উঠেনি।আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা আছে,কোন একদিন ঘুরতে যাব হাজং পাড়া বা এলাকায়, তাদের সাথে সময় কাটানো সৌভাগ্য মনে করব ।হাজংদের প্রতি আমার আবার আলাদা টান আছে হয়তো সেই টাইটেলটার কারণে,যেটা আমার জন্য বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল।
হাজং জাতি গোষ্ঠী মূলত শেরপুর জেলার অন্তর্গত শ্রীবর্দী, নালিতাবাড়ী,ঝিনাইগাতী ময়মনসিংহ জেলাধীন ধোবাউড়া, নেত্রকোণা জেলাধীন কলমাকান্দা, দূর্গাপুর সুনামগঞ্জ জেলাধীন ধরমপাশা, তাহেরপুর, বিশম্ভপুর, ও দোহারা বাজার প্রভৃতি জায়গায় বসবাস করে।শুধু মাত্র বাংলাদেশই নয় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বসবাস রয়েছে। হাজং জাতি গোষ্ঠীর সোনালী ইতিহাস আছে গর্ব করা মতো, হাতিখেদা বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, টঙ্ক প্রথা ও জমিদার প্রথা বিরোধী আন্দোলনের প্রভৃতি আন্দোলনের নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিলেন।এছাড়াও হাজং মাতা রাশিমণি, কুমোদিনী হাজং,যাদুমণি হাজং,অশ্বমনি হাজং এবং ভদ্রমনি হাজং এমনি ভাবে নাম না জানা অসংখ্য শহীদ আছে,যাদের রক্তের বিনিময়ে হাজং জাতি এখনো বেঁচে আছে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে।যাদের কারণে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে হাজং জাতি,যাদের প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই ইতিহাস।
জানা যায়, ১৯৪৬ সালের পূর্বে হাজংদের প্রায় ৪০০ টার মত গ্রাম ছিল।বর্তমানে প্রায় ১০০ মত গ্রামের খোঁজ পাওয়া যেখানে ২০ হাজার এর অধিক হাজং জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। সমাজ পরিচালনায় সমগ্র অঞ্চলটি চারটি ভাগে বিভক্ত- (১) কয়েকটি পরিবার নিয়ে একটি পাড়া (২) কয়েকটি পাড়া নিয়ে একটি গাঁও (৩) কয়েকটি গাঁওয়ের সমন্বয়ে একটি চাকলা গঠিত (৪) কয়েকটি চাকলা নিয়ে একটি পুরাগাঁও বা পরগনা গঠিত হয়।হাজং জাতিগোষ্ঠীর কিছু খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্মের ছাড়া মোটামোটি সবাই সনাতন হিন্দু ধর্ম পালন করে।তাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অন্তর্গত, পরিবার থেকে নারীর কোন সম্পত্তি পাওয়া অধিকার নেই তবে যদি দান করে সেটা ভিন্ন কথা।
হাজং জাতিগোষ্ঠীর প্রচলিত নিজস্ব ভাষা আছে, গান আছে, গীত-গীতি নাটক আছে, স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এক পূরর্ণ জাতি, কিন্তুু লিখিত কোন রুপ নেই।
এত সংগ্রাম ঐতিহ্য আন্দোলন ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও, হাজং জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন কিন্তুু ভালো নেই।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে পাকিস্তান আমল তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে।অন্যন্য আদিবাসীর চাইতে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে,দারিদ্র্যতা এখনো পিছু ছাড়েনি।যেটুকু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, যেটুকু মৌলিক অধিকার পাওয়ার কথা ছিল, হাজং আদিবাসী মানুষ সেটুকু পাইনি।অনেক কঠিন সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়, জমি দখল হয়ে যাচ্ছে,দারিদ্র থেকে আরো দারিদ্র হচ্ছে,সম্পত্তি রক্ষা করা যাচ্ছে না,দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে,সামাজিক ভাবে এখনো শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারেনি,শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম,অধিকার থেকে বঞ্চিত, এমনি ভাবে অস্তিত্বের সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সময় যদি এমনি করে চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকবে না,এই সংকটময় সময়ে যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়,তাহলে অনেক দুঃখের কারণ হিসাবে দাঁড়াবে।ফলত এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়াছে যে আদিবিসীদের অস্তিত্ব শুধু যাদুঘরে মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে সুতরাং সবার অস্তিত্ব যাতে থাকে সেই জন্য সরকারের সদিইচ্ছা থাকা দরকার এবং একে অপরের সাহায্য খুব দরকার।আমি চাই না কোন জাতি বিলুপ্ত হোক বা অস্তিত্বেরর সংকটে থাকুক।আমি বিশ্বাস করি, হাজং জাতি অতীতে যেমন মাথা উঁচু করে সংগ্রাম করে বেঁচে ছিল, সোনালী ইতিহাস রচনা করেছিল, তেমনি হাজং জাতি বেঁচে থাকবে আরো যুগের পর যুগ শত বিপদ আপদ থাকা সত্ত্বেও।
No comments