পা পীরেন স্নাল
জা'ডিল মৃ
আবিমা আমার জমি, আমাদের জমি,আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্মের জমি। আমরা জমিকে মা বলে ডাকি। অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে জমি আবার মা হয় নাকি? তবে হ্যাঁ, জমি আমাদের কাছে মা। মা যেমন পবিত্র, সম্মানিয়, ভালোবাসা, আমাদের আগলে রাখে,বিপদ থেকে রক্ষা করে, স্বার্থহীন, ছায়া সঙ্গী, সন্তানেরর সমস্ত চাহিদা বুঝে ঠিক তেমনি জমি আমাদের কাছে মায়ের মত।মা যখন থাকে না সন্তান তার জীবন নির্ধারণ করতে পারে না। সন্তান এতিম হয়ে যায়, মাকে ছাড়া আমরা কখনো বেঁচে থাকতে পারব না।আমরা কখনো মাকে কষ্ট দিতে শিখেনি,মা কষ্ট পাক সেটা কখনো চাইতাম না।কিন্ আজ, মা নানা সমস্যার মধ্যে আছে,সমস্যা সমাধান তো দূরে থাক, প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছি।
বেঁচে থাকা বলতে সমান্য ঘুমানোর জায়গা,সামান্য খেতে পারা, সামান্য কাপড়চোপড় থাকা এই বেঁচে থাকার কথা বলছি না। আমরা জানি এই জমি,বন,নদী,গাছপালা, কি ভাবে যত্ন করতে হয়। আমরা এটাও জানি এই বন এই নদী এই জমি এই গাছপালা এই পশুপাখি যখন থাকবে না আমরা থাকব না, আমাদের অস্তিত্ব আর থাকবে না, আমরা শুধু যাদুঘরে সাজানো অতীত হয়ে রইব। আমরা জানি বলেই আন্দোলন করি,আমরা জানি বলেই আমাদের প্রাণ দিতে হয়,আমরা জানি বলেই আমরা রক্ত দিতে দ্বিধা করি না আমরা জানি বলেই তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা জানি বলেই ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য আকড়ে রাখতে চেষ্টা করি আমরা জানি বলেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, আমরা জানি বলেই পৃথিবী এত সুন্দর ।
আমরা কখনো জানতাম না জমি আমার হয়,আমরা সবসময় জেনে এসেছি আমাদের জমি,জমির কথাই বা বলছি কেন?সব জিনিসের মধ্যে আমরা "আমাদের" কথাটা খোঁজে পেতাম, কখনো "আমি"শব্দটা ব্যবহার করতাম না। আমাদের একক কোন সম্পত্তি ছিল না, এখন আধুনিকতার নামে আমি শব্দটা প্রকট ভাবে ঢুকে পড়ছে। যা আমাদের জন্য খুবই আর্তনাদের বিষয়,এই সব বিষয় আমাদের মাথায় ঘুরপাক খাই কি না আমি জানি না!
পাকিস্তান আমল থেকে এই সময় পর্যন্ত বহুবার জমির জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে,এখনো যে করতে হবে তা সরকার পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এখনো নানা ভাবে ইকোপার্ক বাস্তবায়নে ফন্দি এঁটে আছে,কোন সময় কি হয়ে যায় আমরা কেউ বলতে পারব না।যার কথা বলার জন্য সামান্য লেকচার দিলাম সে আর কেউ নয় আমাদের বীর সৈনিক পা পীরেন স্নাল,সময় পেলেই, যে জায়গায় পা পীরেন মৃত্যুর বরণ করেছে, সেখানে যায়, তার কবর খানায় যায়,আমি জানি সেটা শুধু কবর নয় সেটা শুধু মৃত্যুর জায়গা নয়, সেটা আমাদের প্রেরণা শক্তি আমাদের সংগ্রাম আমাদের অংহকার আমাদের চেতনা লুকিয়ে আছে।পা পীরেন স্নাল একটি সাদাসিধা পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেন,সাদাসিধা ভাবেই জীবন অতিবাহিত করেছিল।সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করা সুবাধে, জমির গুরুত্ব,বনের গুরুত্ব,নদীর গুরুত্ব,গাছপালার গুরুত্ব সব কিছু জানত।যখন শুনলো আমাদের জমি আর থাকবে না আমাদের জমি কেড়ে নিয়া হবে আমাদের অস্তিত্ব বিদ্যমান এই জমির উপর, তখন নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না। নিজের কাজ ফেলে ইকোপার্কের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিলেন,সেই সময় শত শত নারী পুরুষের সমাগম হল।
মিছিল যেতে লাগল গ্রাম ছেড়ে বনের দিকে যেখানে বিশাল বিশাল দেওয়াল তোলা হবে, জমি কেড়ে নিবে, গ্রাম কেড়ে নিবে,তখন সময় ছিল ২০০৪ সাল ৩জানুয়ারি গারোদের উৎসবের সময় ছিল, কিন্তু আমাদের উপর নেমে আসে সরকারের জুলুম,অত্যাচার। শান্তিপূর্ণ মিছিলে অরাজকতা সৃষ্টির কোন সুযোগ ছিল না।তা সত্ত্বেও মিছিল লক্ষ করে সরকার বাহিনীর লোক নির্বিচারে গুলি করে,অনেক লোকের উপর সরা গুলি বিঁধে যায়, এখন সেই কালো অধ্যায় বহণ করে আছে,তীব্র বেদনায় এখনো কষ্ট পায়,এখনো পা পীরেন স্নালের হত্যার বিচার চাই।কিন্তুু মনে পড়ে না আজো কোন আদিবাসী হত্যার বিচার হয়েছে, যা পা পীরেন স্নালের বেলাটেও ঘটেছে। পা পীরেন স্নাল দেহে গুলি ঢুকে যায়, গুলি বের হয়ে উৎপল নকরেক এর দেহে গেঁথে যায়। সাথে সাথে পীরেন স্নাল মৃত্যুর বরণ করে, কিন্তুু আজও উৎপল নকরেক পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছে। কিন্তুু তার সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি, পঙ্গুত্ব বরণ করেও সংগ্রাম করে যাচ্ছে আমাদের জন্য আদিবাসীদের জন্য,তার মনের সাহস এখনো কমেনি বরং আরো তীব্র হয়েছে।
পীরেন স্নাল শহীদ হয়েছে আমার সময়ে আমাদের সময়ে, কষ্টের কথা এই আমরা সংগ্রামের ইতিহাস জানি না, পা পীরেন স্নালকে চিনি না তার ইতিহাস তো অনেক দূর।আমরা জানি না তার রেখে যাওয়া সন্তান কেমন আছে?আমরা জানি না টাকার অভাবে বেতন দিতে না পারায় স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল। আমরা জানি না উৎপল নকরেক সহ যারা ভুক্তভোগী তারা কেমন আছে?আমরা জানি না কিভাবে তাদের আর্তনাদ এখনো আবিমা কেঁপে উঠে। আমরা আধুনিকতার নামে এখন দেখেও কিছু দেখি না,শুনেও কিছু শুনি না, এই এক অবস্থার মধ্যে আছি যেখানে "আমি" শব্দটা প্রচন্ড ভাবে চেপে বসে আছে। "আমি"শব্দটা বাদ দিতে সবকিছু আমাদের করতে হবে না হলে আমাদের বেঁচে থাকা তীব্র শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে যাবে।
পীরেন স্নালকে নিয়ে গানের দল মাদল জনপ্রিয় কালজয়ী গান রচনা করেছে। যা আমাদের মনের ভিতর নাড়া দেয় সেই গান মনে করিয়ে দেয় আমরা কত শান্তিপ্রিয় আমরা কত সংগ্রামী।
পা পীরেন স্নাল
পাখির স্বভাব পাখির মত উড়বে বলে
মন পাহাড়ে উড়ে উড়ে গাইবে বলে
লালসে মাটি গন্ধ বুকে পোষবে বলে
সবুজ মায়ার বাঁধ অটুট রাখবে বলে
শাল বৃক্ষের মত সিনা টান করে সে
মানুষ হয়ে বাঁচতে পীরেন জান দিয়েছে..
……………………………………………….
পীরেব স্লাল লাল সালাম।
ReplyDelete