মাতৃতান্ত্রিক সমাজ
জা'ডিল মৃ
(উত্তরা বালবামিদ্দিং আচিক সোসাইটি কতৃক প্রকাশিত স্মরনিকা ১ রংচুগাল্লা ২০১৮ , ২৪ আগস্ট)
১.আমি একজন গারো জাতিগোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে নিজের গর্ব হয়।গর্ববোধ সৃষ্টির পেছনে নানাবিধ কারন আছে। আজকে শুধু একটা কারন নিয়েই আলোচনা করতে চাই,যেটা খুব অল্প মানুষের কাছে এলার্জির একটা কারন হয়ে দাঁড়িয়ে,আবার উনাদের কাছে খুব সাংঘাতিক একটা বিষয়, মনে ভেতর খুটখুটানি থাকে সবসময় । উনারা নিজেদের কে ধারুণ পুরুষত্ব পরিচয় দিয়ে নাম কুড়িয়েছেন,আমার কাছে মনে হয়েছে যা, এটা খুব লজ্জার বিষয়,যদি লজ্জাবোধ থাকতো, মনে প্রশান্তি পেতাম।একজন গারো হিসাবে নিজেদের মান সম্মান রক্ষা করা,আমাদের যেমন দায়িত্ব তেমনি কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, মান সম্মান ডুবানো নয়।কিন্তুু এমন বর্তমান অবস্থা ও পরিস্তিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য করা বাদ দিয়ে, নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ জায়গা দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ। আমি সেটা স্বার্থবাদী হিসাবেই দেখব,কারন স্বার্থ থাকার ফলেই, এই সমস্ত কাজের উৎসাহ পাচ্ছে।আমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়,মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে "উনারা কী আসলে গারো! গারো জাতির সদস্য "? সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়ে যায় যখন কর্মের দর্শন পায়।
যাই হোক মূল কথায় আসি, খুব সম্প্রতি আমাদের মাঝে খুব বিতর্কিত একটা বিষয় হয়ে উঠেছে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।যেটা নিয়ে বিতর্কের কোন বিষয় বস্তুু দেখি না আমি,বরং গর্ববোধ হয়।গর্ববোধ করি এই জন্য যে আমার সমাজ মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হয়েছে তাতে তো কি হয়েছে?সেটা কি লজ্জার বিষয় নাকি? উনাদের এত জ্বলে কেন বুঝি না?আমাদের দেশে দুটো জাতির গোষ্ঠীর মধ্যেই শুধু মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান।প্রথমত, খাসিয়া জাতিগোষ্ঠী এবং দ্বিতীয়ত গারো জাতিগোষ্ঠী।আমরা যদি দেখি প্রাচীন কালে সব সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক বা মাতৃসূত্রিয় সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে ছিল, যেখানে নারী কর্তৃত্ব সর্বোপরি বেশি ছিল, কিন্তুু কর্তৃত্ব আস্তে আস্তে তলানিতে গেছে, বেশি দিন বোধয় টিকেনি,এই বর্তমান যুগে এসেও এই দুটো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা এখনো মোটামোটি সচল।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রান্তে এখনো কিছু কিছু জাতিগোষ্ঠী মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। আমরা যদি দেখি,তাহলে দেখতে পাব নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় উনারা ব্যাপক সচেতন। কিছু জাতিগোষ্ঠীর নাম নিচে দেওয়া হল।
২.মিনাংকাবাউ(ইন্দোনেশিয়া) চার মিলিয়ন লোক সংখ্যা নিয়ে পৃথিবীর বৃহৎতম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।এখানে মায়ের কর্তৃতত্ব বেশি বিদ্যমান, মায়ের পরিচয়ে সন্তান বড় হয় এবং সম্পত্তি সব মায়ের হাতে থাকে।বিয়ের পর ছেলে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে।ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা সত্ত্বেও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা চলছে।
মায়ের নেতৃত্বে বড় হয়ে উঠে এবং মায়ের পরিচয়ে নিজেদের পরিচয় হয়,নারীরা নিজের মতামত নিদ্বিধায় দিতে পারে,পৃথিবীর বহু দেশে নারীদের চার দেওয়ালে আবদ্ধ করে রাখা হয় কিন্তুু মোসুও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সমাজে নারীর প্রভাব থাকার কারণে রাস্তাঘাটে প্রচুর নারী দেখা পাওয়া যায়। মোসুও(চীন) জাতিগোষ্ঠী এখনো নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে চলছে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন বলেছিলেন যে, “মোসুও সমাজে নারীরা হলো মূল্যবান। যখন একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তখন দেখার মতো উৎসব হয় পরিবারে। আর যদি ছেলে শিশু জন্ম নেয় তাহলে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়, ব্যাপার না, একেও আমরা ভালোবাসবো”।মেয়ে সন্তান জম্ম নিলে আন্দন ধারা বয়ে যায়,এমন না যে ছেলে সন্তান হলে পরিবারে দুঃখ আসে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে দুটো সন্তানি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তুু আমার জানা মতে প্রথমত মেয়ে সন্তান আগে কামনা করে,বহুবিধ কারণে।
চাম জাতিগোষ্ঠী কম্বোডিয়া,ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বসবাস করে। তাদের মধ্যে এখনো মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান। কিন্তুু সমাজে কিছু কিছু পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে তবুও শিকড়টা টিকে আছে।
৩.ইদানিং মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বিলুপ্ত ঘোষণা,অনেকে কাছে অতি প্রত্যাশিতত চাওয়া,আবার কারো কাছে স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা বটে ।কিন্তুু স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেরা বা অন্যরা কতটুকু প্রস্তুত বা আদৌ সময় হয়েছে কিনা সেটা মনে হয় নিজেদেরি জানা নাই।শুধু মাত্র চাওয়া দিয়েই কী সবকিছু হয়,যুক্তি তর্ক বাস্তবতার কী কোন মূল্য নাই?নাকি অতীতে কি হয়েছে বা ভবিষ্যতে কী হবে সেটা ভাবার সময় নাই।অনেক বার দেখেছি,ফালতু ভাবে
নানা রকম প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে দেয়,কি সব শক্ত শক্ত বাণী প্রচার করে বুঝতে খুব কষ্ট হয়।চোখের সামনে আঙুল দিয়ে দেখায় মাতৃতান্ত্রিক সমাজের কুফল কু ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত ভাবে আমিও চাই সমাজের কিছু আইন ব্যবস্থা বা নিয়ম কানুন পরিবর্তন হোক, সংস্কার দরকার।কিন্তুু ঢালাও ভাবে পরিবর্তনে ডাক দেওয়া বড়ই অদ্ভুত লাগে বটে,এটা থেকে অতি সহজে স্বার্থের সংজ্ঞা পরিষ্কার হয়ে যায়।
৪.বেশ কিছু বিষয় মাত্র আলোচনা করব,যদি বিস্তারিত আলোচনা করতে যাই লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে যাবে।
আপনার কথাই ধরি নারী পুরুষের সমান অধিকার দিতে হবে পুরুষের নামেও সম্পত্তি লিখে দেওয়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।আমাদের সমাজে নারী পুরুষের কি সমান অধিকার দিতে হবে বুঝি না!যদি বলতো নারীদের কে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না,সেটা না হয় আলাদা কথা।সেটাই বাস্তবতা যা অধিকার বাস্তবায়ন দরকার,কিন্তুু তার বদলে উল্ট কাজ করছি,যা ছিল সব ছিনিয়ে নিতে চাইছি।ব্যাপারটা খুব হাস্যকর।
আমি বিশ্বাস করি না আমাদের মাঝে সেই সার্মথ্য সৃষ্টি হতে পেরেছে যেটা কিনা দুই সত্তার বৈষম্য দূর করতে পারবে।আমাদের চিন্তা শক্তি,চিন্তার আধুনিকতা এমন জায়গায় পৌঁছাই নাই, যেখানে বৈষম্য থাকবে না।বর্তমানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করেও প্রতিনিয়ত আমরা এই পুরুষরাই নারী সত্তাকে অবজ্ঞা করি।যতই আমরা ভালো যুক্তি দেখাই না কেন ভালো চিন্তার ফসল ফলায় না কেন গরম চায়ের আড্ডা জমায় না কেন প্রগতির কথা বলি না কেন,শেষ পর্যন্ত আমরা কোন না কোন ভাবে চেতন মনে হোক অবচেতন মনে হোক নারী সত্তাকে অবজ্ঞা করে যাই।ফলত এই মুহূর্তে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিলুপ্তির কোন প্রশ্নই আসার কথা না, তার পরেও সেই প্রশ্নটা বার বার ঘুরে ফিরে আসে।
৫.মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হলো এমন এক সমাজ ব্যবস্থা যেখানে পরিবারের দায়িত্ব থাকে একজন নারী,নারীর মাধ্যমে বংশের দ্বারা নির্ধারণ হয়, নারী দিক থেকে সম্পত্তি দায়িত্ব বর্তায় মা থেকে মেয়ের কাছে এবং বিয়ের পর নারীর বাড়িতে পুরুষ স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে যাই।তবে পরিবারের সিদ্ধাত, রাজনৈতিক,সামাজিক সিদ্ধাত নির্ধারণ করে মূলত পুরুষরা,এটাই হলো মাতৃতান্ত্রিক সমাজের অধিকার সুষম বন্টন।একদিকে যেমন নারীর অধিকার আবার অন্যদিকে পুরুষের অধিকার।অধিকারের ভারসাম্য কিন্তু বিস্মকর ।আমার দেখা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ। আমি যদিও মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বড় হয়েছি তা সত্ত্বেও মূলত পুরুষরাই সবচেয়ে বেশি অধিকার বা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে,যদি আমরা সর্বোপরি চিন্তা করি।একটি পরিবারে সব সময় প্রত্যাশা থাকে মেয়ে সন্তান সেটার নানাবিধ কারণে চাই,সবসময় চাওয়াটা বিদ্যমান, কিন্তুু বিষয়টা এমন না যে ছেলে সন্তান চাই না। আমি কখনো দেখেনি ছেলে হয়েছে বলে কোন দিন অবহেলার শিকার হয়েছে। ফলে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে মেয়ে হোক ছেলে হোক দুই সন্তানি গুরুত্ববহন করে।এমন এক সমাজ ব্যবস্থা পেয়েছি নিজেকে হাজার বার গর্ব করি আমি একজন গারো আমি মাতৃতান্ত্রিক সমাজের একজন সদস্য।
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কে বিলুপ্তি বা অবজ্ঞা করা কোন প্রশ্ন আসেই না।আমরা জানি, আমাদের চারপাশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বিদ্যমান বা পুরুষশাসিত পৃথিবী। প্রতিনিয়ত আমরা দেখি নারীদের অবস্থা কতটা শোচনীয়, অধিকার বলতে কোন বালাই নাই।মাতৃতান্ত্রিক সমাজ সত্ত্বেও নারীদের বৈষম্য কিন্তুু কম নয়,আমাদের সমাজে যা প্রচন্ড রকম ভাবে জেঁকে বসে আছে।বৈষম্যের ধারা কমাতে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের কোন বিকল্প নাই।আমি চাই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বেঁচে থাকুক,বৈষম্য হীন সমাজ গড়ে উঠুক।
৬.আমি নিজেই একজন উদাহারণ, আমাদের পরিবারে আমিই বড় ছেলে, ছেলে বলে কোন দিন মনে হয়নি আমি অবহেলার শিকার হয়েছি।একজন সন্তান কে মা বাবা যতটুকু দেওয়া উচিত আমি তার চাইতেও বেশি পেয়েছি।কিন্তুু আমার বোন আমার মত স্বাধীনতা সুযোগ সুবিধা পাবে কিনা সন্দেহ!যদিওবা মাতৃতান্ত্রিক সমাজে আছি,মাতৃতান্ত্রিক সমাজের একজন সদস্য।কেন সুযোগ সুবিধা পাবে না?কেন এত সন্দেহ?কারণ চারপাশে সব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ,আমাদের সবার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব।আমাদের সমাজেও পুরুষতান্ত্রিক প্রচন্ড রকম ভাবে জেঁকে বসে আছে।আমার তো ভয় হয় যে সামান্যটুকু নারীরা অধিকার স্বাধীনতা ভোগ করতো, তাও কিছু মানুষ কেড়ে নিতে চাইছে।যদি সেটাও কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে নারীদের অবস্থা কতটা যে শোচনীয় হবে বলা মুশকিল।
লেখক বাবুল ডি নকরেকের একটা লেখা পড়েছিলাম, যেখানে তিনি মাতৃতান্ত্রিক সমাজে গারো নারীকে রাষ্ট্রপতি এবং পুরুষকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন।বিষয়টা আমার কাছে ভাবনার খোরাগ জুয়েছিলো,জানার চেষ্টে করেছিলাম আসলে কেন তিনি এমনটা বলেছিলেন,আমার মনে হয় আমি বিষয়টা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলাম।উনার কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত পোষণ করি,আমাদের সমাজে নারীদের অধিকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও চারদিক থেকে বেঁধে রাখা হয়েছে।যা অধিকার দেওয়া না দেওয়া সমান কথা। আমার তো প্রচন্ড রকম ভাবে ভয় হয়, আমাদের নারীরা এখনি যদি আওয়াজ না তুলে, অন্যায়ের প্রতিরোধ না করে তাহলে অল্প মানুষরাই একদিন জিতে যাবে, তখন সামান্যটুকু অধিকার সুযোগসুবিধা ছিল তাও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
৭. (১)যাইহোক, দুটো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি সেটা নের্ট থেকে নেওয়া:
১।মাতৃতান্ত্রিক গারো সমাজে নারীদেরকেই বেশি মূল্য বা প্রাধান্য দেই ।
আমি এই প্রশ্নের তীব্র নিন্দা জানাই।আমি মানি প্রশ্ন করার সবার অধিকার আছে। কিন্তুু বিষয় বস্তু না বুঝে উপলদ্ধির জায়গাটুকু স্বচ্ছ না হয়ে এমন প্রশ্ন করা সহ্য করা যায় না।
এখন যদি দেখি,আমাদের সমাজে বর্তমানে নারীরা কোন কোন দিক থেকে সুবিধা পাচ্ছে।টাইটেল এবং সম্পত্তিরর ক্ষেত্র ছাড়া আমি কোন সুবিধা দেখি না।অন্যদিকে গুরুত্বপূরর্ণ বিষয় রাজনীতিক,সামাজিক, পরিবারের সিদ্ধাত,অর্থনীতি, চাষবাস, হোন্ডা সাইকেল,খেলাধুলা, বাণিজ্য, রাত জাগা,ভার্জিন, প্রভৃতি সব সেক্টরে নিজেদের কর্তৃত্ব। সবকিছু পুরুষের দখলে, পুরুষরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে,নারী নয়।যতটুকু সুবিধা বা অধিকার দেওয়া আছে সেটাও যদি কেড়ে নেওয়া হয়।তাহলে নারীর অবস্থা কোন পর্যায়ে যাবে এক বার যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে এমন করে কথা বলার কথা না। উপরের প্রশ্ন দেখেই হাসি পায়,কত অবুঝ হলে এই রকম প্রশ্ন করতে পারে।
আমি উনাকে বাস্তবতার সাক্ষী হতে বলব এবং কিছু বই পড়তে বলব।আমার বিশ্বাস বই গুলো কাজে দিবে..
১.হূমায়ুন আজাদ -নারী
২.সিমোন দ্য বোভোয়ার-দ্বিতীয় লিঙ্গ
৩.রেবতী বর্মন-সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ
৪.আনু মুহাম্মদ -মানুষের সমাজ
৫.আনু মুহাম্মদ -নারী, পুরুষ ও সমাজ
৬.রাহুল সাংকৃত্যায়ন-নতুন মানব সমাজ
৭.মার্কস.এঙ্গেলস.লেনিন.স্তালিন-নারী মুক্তির প্রশ্নে
৮.তসলিমা নাসরিন-নারীর কোনও দেশ নেই
৯.এম.আর.চৌধুরী-আবশ্যকীয় শব্দ-পরিচয়
(বৈজ্ঞানিক ও মার্কসীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি)
১০.রেবতী বর্মন -সমাজের বিকাশ
এছাড়াও আমি অনেক বইয়ের কথা বলতে পারি, যা উনাদের পড়া উচিত।কোন কিছু না বুঝে প্রশ্ন করা সহ্য হয় না।যদি বই গুলো পড়তো জানার চেষ্টা করতো, বুঝার চেষ্টা করতো উপলদ্ধির জায়গাটুকু যদি থাকতো। আমার মনে হয় না তাহলে এই রকম প্রশ্ন করতো।মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হয়েছে তো কি হয়েছে? মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হলেও নারীরা যে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিতত, সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তা মগজে খেলে না।নিজের সুখী বড় সুখ, অন্যের সুখের কথা চিন্তা করি না।আমি মানি আমিও কোন না ভাবে নারীদের অবহেলা, অবজ্ঞা দৃষ্টি তে দেখি চেতন মনে হোক অবচেতন মনে হোক,চারপাশে এমন সমাজ রয়েছে এমন সমাজে বসবাস করছি এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।কিন্তুু এই বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে চেষ্টা করছি,আমিও পেরে উঠতে পারিনি তবুও চেষ্টা অব্যাহত,চেষ্টা করে যাব প্রতিনিয়ত।
৭.(২)মাতৃতান্ত্রিক গারো সমাজে, মেয়েরা বাবা মায়ের সম্পত্তি পাই.ছেলেরা পাই না।
বর্তমানে এই রকম প্রশ্ন করা, জ্ঞানহীনতার সামিল কারন এখন গারো ছেলেদেকেও সম্পত্তি দেওয়া হয়,যদিও প্রচলিত আইনে দেওয়ার নিয়ম নাই, ভালোবেসে দিলে সেটা আলাদা ব্যাপার। আগেই বলেছি মেয়ে হোক ছেলে হোক দুটো সন্তানি সমান সুযোগ সুবিধা পাই,অন্যন্য সমাজের চাইতে।ছেলেরা যেহেতু জামাই যাই সেহেতু সম্পত্তির কোন প্রশ্নই আসে না, এমন না যে সে সম্পত্তিহীন হবে।বউ এর যে সম্পদ সেটাই তো ভোগ করে, সবকিছুই পুরুষের দখলে সম্পত্তি শুধু নামে নাম মাত্র।বাস্তবতা এই যে, গারো ছেলেরা সম্পত্তি রক্ষা করতে পারে না।অনেকে বলে মেয়েরা সম্পত্তি মাগনা পাইয়া বেচে দেয়,কিন্তুু এটার পিছনে যে পুরুষ দায়ী সেটা কেউ দেখে না,তেমনি শুশুর এর জমি সব বেচে নিঃস্ব হওয়ার ঘটানাও প্রচুর। আমি আমার জীবনে কখনো দেখেনি নারীরা জমি জমা বেচে নিঃস্ব হয়েছে।কিন্তুু আমি বহু পুরুষ দেখেছি যারা জমির বাড় সইতে না পেরে একটু একটু বেচে সব বেচে দিয়েছি।বাস্তব কাহিনী বলি,
জমিদারের মত মৃ গোত্রের অনেক জমিজমা ছিল। সেটি মূলত মৃ গোত্রের নিজস্ব সম্পত্তি ছিল।প্রচলিত আইন অনুসারে ছেলে সম্পত্তি পাওয়ার কথা না।তবুও ভালোবেসে যেটুকু জমি দিয়েছিলো সেটা কিন্তুু কম ছিল না,বলা যায়, না চাইতেই বৃষ্টি।শেষ পর্যন্ত এক টুকরো জমিও ধরে রাখতে পারনি।যে ছেলে মাইক্রোবাস গাড়ি নিয়ে ঘুরত,বেনসন সিগারেট ছাড়া কোন কোম্পানি বুঝতো না।উনার এখন বিড়ি পর্যন্ত জুতে না, বেনসন তো দূরের কথা।এমনি রকম ভাবে অনেক প্রমাণ দিতে পারব যে সম্পত্তি রক্ষা করতে পারে নাই।কিন্তুু মেয়েরা আবার ঠিকি পেরেছে,যেটুকু ছিল তার অধিক আরো সম্পত্তি বৃদ্ধি করতে পেরেছে।শুধু সম্পত্তির কথাই বলছি কেন,সবক্ষেত্রে নারীর অবদান অস্বীকার্য। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হলেও পুরুষের আধিপ্যত কিন্তুু কম নয়,সমাজে নারীর ক্ষমতা বললেও মূলত ক্ষমতাহীন।
এখন যদি সমান সমান সম্পত্তি দেওয়া হয় বা পুরুষদের অধিকারে চলে যায়। বৈষম্যেরর যে সামান্যতম ভারসাম্য সেটা আর থাকবে না।এমনেই যে পুরুষদের সুযোগ সুবিধা আধিপ্যত, এই সব বিষয় গুলো স্বীকৃত হলে তো,পুরুষরা আরো বেপোরোয়া হয়ে যাবে,নাগাল পাওয়া যাবে না।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রচলিত গারো আইন পড়ার জন্য, উপলদ্ধির জন্য অনুরোধ জানাব।
১.সুভাষ জেংচাম-গারো আইন
২.JLR MARAk-Garo customary laws
আমি উনাদের অনুরোধ জানাব ভাই, বই পড়েন বুঝার চেষ্টা করেন বাস্তবতা উপলদ্ধি করেন।তাহলে বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে,যদি গাইরামি করে বসে থাকেন,নিজের যুক্তি ঠিক ভেবে বসে থাকেন,সেটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।কিছু শিক্ষার চেষ্টা করেন,সেটাই উত্তম হবে।
৮.কেউ যদি কোন প্রশ্ন করে! এমন কোন প্রশ্ন করা উচিত নয় যার কারণে অন্যরা বিরক্তবোধ হয়।কোন বিষয় অযথা না বুঝে হুদায় হুদায় প্রশ্ন করা কোন মানে হয় না।আমি বিশ্বাস করি যিনিরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বিপক্ষে কথা বলে,উনাদের বুদ্ধির উদয় হোক,আলোর পথ দেখুক,বাস্তবতা বুঝুক,জানার চেষ্টা করুক।
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ দীর্ঘজীবী হোক,মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বেঁচে থাকবে আরো কয়েক শত বছর, শত শত যুগ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন....
'এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
প্রচুর স্ববিরোধী কথা।অবশ্য হিজরারাদের(গালি হিসেবে নিবেন না)লেখা এমনই হয়।
ReplyDeleteপ্রচুর স্ববিরোধী কথা।অবশ্য হিজরারাদের(গালি হিসেবে নিবেন না)লেখা এমনই হয়।
ReplyDelete