ফা ক্যাপ্টেন উইলিয়ামশন এ সাংমা



জা'ডিল মৃ





অনেক কিছুই আমাদের কাছে অজানা থেকে যায়,হয়তো কোন এক সময় জানা হয় বা হয়ে ওঠে না।আধুনিক বিশ্বে এখন আমরা সবাই নিজেদের মত করে ব্যস্ত থাকি।নিজেদের ক্যারিয়ারের পিছনে ছুঁটতে হয়,ভালো অবস্থানে যেতে হয়, ঠিক তেমনি নিজের স্বার্থ এত বেশি জরুরি হয়ে পড়ে বাদবাকি সবকিছু আমরা ভুলে যায়।আমরা ভুলে যায় আমাদের ইতিহাস আমরা ভুলে যায় সবকিছু নিজেদের স্বার্থে। তবুও কিছু কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ ছেড়ে জনগণের জন্য নিজেদের মানুষের জন্য আপন জনের জন্য কাজ করে। এমন মানুষ কমি দেখা যায়, যিনিরা সত্যিকার ভাবে কাজ করে মানুষের কল্যাণের জন্য। যাই হোক, আমরা আজকে এমন এক মানুষের কথা জানব যিনি সারাজীবন কাজ করে গেছেন নিজের জাতির স্বার্থে ,উনার সম্পর্কে  সংক্ষিপ্ত আকারে, যা অল্প কথায় শেষ করবো, পুরোপুরি বলা সম্ভব নয়, কারন লেখা দীর্ঘ হলে, আপনাদের মনে বিরক্তির ছাপ পড়ে। (অল্প কথায় শেষ করে নিজের দায় সেরে নেব আরিকি)।এই লেখায় শুধু আপনাদের হালকা ধারনা দিব তিনি কেন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং উনাকে কেন জানা দরকার।

ফা ক্যাপ্টেন উইলিয়ামশন সাংমা ১৯১৯ সালে ১৪ অক্টোবর  জম্মগ্রহণ করেন করেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত দক্ষিণ গারো হিলস অন্তর্গত বাঘমারা শহরে।বাঘমারা শহর গারো অধ্যুষিত এলাকা এবং সমৃদ্ধতম শহর নামে পরিচিত।উনার মাতার নাম নমালিনী সাংমা এবং পিতার নাম গংমিন সিনথাং মারাক।ফা ক্যাপ্টেন উইলিয়ামশন সাংমা ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিলেন ফলত লেখাপড়ায় সব সময় ভালো করতেন।কিন্তুু পরিবারে আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না, তা সত্ত্বেও আত্নীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সাহায্যে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছিলেন।১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ  চলাকালে তিনি ঢাকায় এন.সি.ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকায় ৪ বছর কমিশনার পদে দায়িত্বগ্রহণ করেন।কর্মজীবন বহু বার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজ করেছেন।এমনি ভাবে নিজের জাতির প্রতি ছিলেন সচেতন, নিজের জাতির জন্য কাজ করতে সব সময় অপেক্ষা করতেন, সবসময় সুযোগ সন্ধানী ছিলেন।ফলে ১৯৪৬-৪৭ সালে গারো ন্যাশনাল কনফারেন্স সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠেন বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।উনার মনে  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আলাদা একটা  শূর্ণ্যতা অনুভব সৃষ্টি হতো ফলে সেই কারণে আলাদা রাজ্যের স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

সেই স্বপ্ন কে বাস্তব রুপ দিতে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন।বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসেন, তিনি জানতেন শুধু গারো জাতির দ্বারা আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।সেই সুবাদে বিভিন্ন জাতির গোষ্ঠী চাহিদা পাওয়া না পাওয়া অভাব অভিযোগ  এক করে আলাদা রাজ্যের দাবিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজেদের সমস্যা চাওয়া পাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে ধরেন।আলাদা রাজ্য যে এখন সময়ের দাবী তা উপস্থাপন করতে থাকেন।সেই সাথে  দীর্ঘ আলাপ আলোচনা সংগ্রাম আন্দোলন তাঁর নেতৃত্বে কারণে বিনা রক্তপাত ও  ধৈর্যের ফলে গারো,খাসিয়া, জৈন্তীয়া আদিবাসীদের জন্য পৃথক একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার ২১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে আসাম থেকে আলাদা করে মেঘালয় রাজ্য ঘোষণা  করে।

ফা ক্যাপ্টেন উইলিয়ামশন সাংমা এমন এক মানুষ ছিলেন যিনি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন একি কাতারে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন।তিনি সব জাতিগোষ্ঠীর কাছে সমান জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন।  তিনি এমন এক সময় জম্মগ্রহণ করেছিলেন, যেন গারো জাতি সহ অন্যান্য জাতির জন্য সেই মুহূর্তটা দরকার ছিল, সম্ভবত যেটা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল।তিনি প্রথম নতুন মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।এমনো হতে পারে তিনি ছিলেন বলে, সেই সময়  আলাদা একটা রাজ্য সৃষ্টি হতেে পেরেছিল ।

মাত্র ৭১ বছর বয়সে ২৫ অক্টোবর ১৯৯০ সালে এই মহা নেতা মৃত্যুর বরণ করেন।উনার মৃত্যু আমাদের গারো জাতি ততা আদিবাসীদের অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে।উনার মতো যোগ্য সৎ নেতা দ্বিতীয়বার আমরা পাব না, উনার যোগ্য নেতৃত্বের কারনে মেঘালয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গারো, খাসিয়া,জৈন্তিয়া এছাড়াও অন্যন্য আদিবাসী নিজেদের জন্য স্বায়ত্তশাসিত এলাকা পেয়েছিল।
জানি, এমন মহান নেতা আর কোন দিন জম্মলাভ করবেন না কিন্তুু উনার সাদৃশ্যের মতো আবারো যোগ্য সৎ নেতা গারো জাতির মধ্যে জম্মলাভ করুক।এই কামনা করি।

মহানেতাকে জানাই অন্তরের ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.