রাজনীতি

জা’ডিল মৃ


আদিবাসী দিবস ২০১৮ উপলক্ষে,ঢাকা মহানগর শাখা গাসু  এর "জাসেঙা" ম্যাজিনের জন্য লেখা।





আমরা শত চেষ্টা করেও ভালো থাকতে পারি না,  গারোসহ অন্যন্য আদিবাসীরা কেউ ভালো নেই,এখন   প্রশ্ন হতে পারে কেন ভালো নেই?দেশ উন্নত হচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে, মাথা পিছু আয় বাড়ছে,অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে,শিক্ষার প্রসার হচ্ছে,ফোর জি থেকে ফাইজি হবে এত কিছুর পরেও কেন ভালো নেই?আদিবাসীদের জন্য বিশেষ  ভাতা দেওয়া হয়, কোটার ব্যবস্থা আছে,এনজিও ,সরকারের আলাদা বাজেদ আছে,পার্বত্য চট্রগ্রাম মন্ত্রনালয়ন আছে.. ইত্যাদি ইত্যাদি। এত কিছু থাকার পরেও আমরা ভালো নেই,আসলে বার বার প্রশ্ন আসে  কেন আমরা ভালো নেই?সত্যি বলতে কি  ভালো না থাকার বহুবিদ কারণ আছে।অবিশ্বাস লাগতে পারে,  আমরা প্রতিনিয়ত  চেষ্টা করি ভালো থাকতে, কিন্ত ভালো থাকা আর হয়ে উঠে না,সম্ভবত   ভালো থাকা উনাদের সহ্য হয় না,আমরা যেন ভালো না  থাকি,সেই জন্য কত জঘন্য  কৌশল প্রয়োগ করে, কত সমস্যা সৃষ্টি করে, প্রতিনিয়ত আমাদের দৌঁড়ে উপরে রাখে।অনেকের কাছে কথাটাগুলো গ্রহণ যোগ্য  নাও হতে পারে,তাদের কে আদিবাসী এলাকা ঘুরে দেখার আহ্বান জানাই।

যখন ভাবছিলাম কি নিয়ে লিখব! তখন শুনলাম খাগড়াছড়িতে চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া ৯ বছরের ত্রিপুরা মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল,এতটুকু বাচ্চা যৌবন সম্পর্কে এতটুকু ধারণা হয়নি, যৌনকামনা সম্পর্কে যার এখন পরিচিত হওয়া সুযোগ হয়নি, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।ধর্ষণ করেই শান্ত হয়নি,তাকে শোচনীয় ভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমনভাবে হত্যা করা হয়েছে মধ্যযুগীয় পর্যায়ে চলে যেতে বাধ্য।প্রায় এমনি ভাবে প্রতিদিন  ধর্ষণের খবর থেকে শুরু করে জমি দখল,গ্রামে হামলা,মিথ্যা মামলা,হুমকি দেওয়া,ধর্ষণের চেষ্টা,বৈষম্য , রির্জাব ফরেস্ট, ইকোপার্ক,হয়রানি ইত্যাদি   আদিবাসীদের খবর র্সোসিয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা হয়ে যায়।এত কিছু সুবিধা থাকার পরেও কেন ভালো নেই তা দ্বিতীয় বার বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।


 অনেকে চিন্তা করেন আদিবাসীদের অনেক সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়, তার পরেও তারা কেন ভালো নেই,ভালো না থাকার অভিনয় করে নাকি?অনেকে ভাববে,   যত দেই আরো তত চাই। বিষয়টা ঠিক তেমনটা না, আমরা শুধু আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই।আমাদের মূল যে সমস্যা বৃহত্তম অংশ  উনারা বুঝতে চান না,চেষ্টা করেন বলে মনে হয় না ।আমরাই শুধু জানি আমাদের কত অসুবিধা,   কষ্ট, যন্ত্রণা কত সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু বলা সত্ত্বেও, উনাদদেরকে আর কি্ ভাবে বলা যায়,আমি বুঝতে পারি না,বলেও কিলাভ শুনেও না শুনার ভান করে।সব সমস্যা মাথায় নিয়ে না চাইতেও   নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়,আমাদের বাধ্য করে আমরা বাধ্য হই।


রাজনীতি শব্দ শুনেই অনেকের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাবে। রাজনীতি কথা শুনলেই মারামারি, কাটাকাটি,ঝগড়া বিবাদ,মিথ্যাচার, দুর্নীতি, শক্তি প্রয়োগ,আধ্যিপত বিস্তার,হুমকি,গুন,গুম ইত্যাদি নানা রকম নেতিবাচক বিষয়গুলো চোখে ভেসে উঠে। আমরা ঠিক রাজনীতির সাথে অভ্যস্ত নই।সবাই চাই যত পারি রাজনীতি থেকে দূরে থাকি,অভিবাবক উনারাও চান নিজেদের সন্তান রাজনীতি থেকে দূরে থাকুক, নিজের ক্যারিয়া দিকে মনোযোগ দিক,নিজের জীবনের জন্য ভালো কিছু করুক।ফলে,শের্ষ পর্যন্ত নিজের উন্নতি হয় ঠিক,নিজের আরাম আয়েশ হয় ঠিক,নিজের ভবিষ্যত সিওর থাকে সেটাও ঠিক, কিন্তু শুধু জন্য নিজের জন্য করে,  আপনজন এর কথা চিন্তা করব না,সেটা তো অন্যায় । অনেকে ফেইবুকে আই ডোন্ট লাইক পলিটিক্স,আই হেইন্ট পলিটিক্স, ফাকিং পলিটিক্স,নর্থ ইন্টারেসস্টেট ইত্যাদি লিখে রাখে।আমরা যারা তরুণ বা অভিবাবক  বেশিরভাগি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চাই,মনে করি এটা একটা বাড়তি ঝামেলা ,সমস্যা সৃষ্টি করে,  নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তা চলে আসে।রাজনীতি শব্দ শুনলেই বার বার নেতিবাচক চিন্তা চলে আসে,কিন্তু রাজনীতি দৃষ্টিকোণ আপনার উপর নির্ভর আপনি কি্রভাবে নিবেন বা নিতে চান  ।অন্যদিকে এটা বুঝি না যে পলিটিক্স আমরা সবাই করি।অবশ্য,কে  কাকে কি বুঝায়?অর্থাৎ আমরা কেউ জেনে বুঝে শুনে রাজনীতি করি,আবার অনেকে না বুঝেই করে। শেষ পর্যন্ত দাঁড়াল সবাই পলিটিক্স করে।আমার কথা হচ্ছে,যদি আমরা পলিটিক্স করে থাকি কেন তাহলে না বুঝে করব? জেনে রাজনীতি করা কি  আমাদের জন্য খারাপ হবে? আমরা যা কিছু করি না কেন,যা কিছুই খাই না কেন,যা কিছুই পরিধান করি না কেন,যে অবস্থানেই থাকি না কেন, সব কিছুর পিছনে  বিদ্যমান কিন্তু রাজনীতি। তাহলে বুঝায় যায় আমরা যতই পলিটিক্সকে না বলি না কেন পলিটিক্স আমাদেরকে হ্যাঁ বলবে,আমরা চাই বা না চাই।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ল,যখন কোন জায়গায় ঘুরতে যেতাম হঠাৎ করে মাঝে মাঝে  কাঁটা পায়ের পাতায় বিঁধে যেতে,তখন কি করতাম বড় কাটা দিয়ে ছোট কাঁটা বের করতাম।তো কাঁটা দিয়ে কাটা বের করতাম,যেমন মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজা সেই রকম আরিকি!আমরা সবাই নিজেদের কে আদিবাসী হিসাবে দাবি করি।কিন্তু আমাদের নিজেদের কাছেই আদিবাসী বিষয়টা পরিষ্কার না,অন্যদের তাহলে কি ভাবে বুঝাবে, বড় বড় কথা বলে আড্ডা জমায়, বড় বড় লেকচার দেই,মারাত্মক মারাত্মক চিন্তা করি,পরিকল্পনা করে দুনিয়া উল্টপাল্ট করে দেয়।মুখে কত কি যে করে ফেলি তার কোন ইয়ত্তা নেই।আমরা যা কিছু করি না কেন আমরা যতই আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি জানাই না কেন? পলিটিক্স ছাড়া কোন   কিছু সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।যে সমস্যা রাজনীতি সেটা রাজনীতি ভাবেই সমাধান করতে হবে যেমটা বলেছিলাম কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলা,মাছের  তেল দিয়ে মাছ ভাজা।আমরা যতই রাজনীতি বিমূখ হব ততই আমাদের অধিকার, জাতির সংকট,অস্তিত্বে সংকট তত আমরা পিছনের দিকে যেতে থাকব,সামনে আগানোর কোন সুযোগ নাই ।

আমাদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য,অস্তিত্বের সংকট সমাধানের  জন্য,জাতির উন্নতির স্বার্থে,আদিবাসী স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য,এমনি  কি সবকিছুর জন্য রাজনীতি ছাড়া কোন বিকল্প নাই।শেষ পর্যন্ত আমাদের রাজনীতি করেই টিকে থাকতে হবে।আমরা সবাই জানি, বর্তমান সময় খুব সংকটময়,যত দিন যাচ্ছে আমাদের অবস্থা আরো   শোচনীয় হচ্ছে এবং আদিবাসীদের জন্য বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জ।  এখন যদি বলি রাজনীতি ভালো লাগে না, ইচ্ছা হয় না, হুদায়,অমুক সমুক কত কি?আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলব,যদি সরাসরি রাজনীতি করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে রাজনীতি সচেতন হন। সবাইকে যে সরাসরি রাজনীতি করতে হবে, মাঠে কাজ করতে হবে এমন  তো কোন কথা নাই।ফলত আমাদের সবাইকেই রাজনীতি সচেতন হতে হবে নিজেদের প্রয়োজনের স্বার্থে।

আমাদের বর্তমানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো রাজনীতি।যতদিন পর্যন্ত আমরা রাজনীতিভাবে শক্তিশালী হতে পারব না,যত দিন পর্যন্ত আন্দোলনের মাত্রা তীব্র হবে না,যতদিন পর্যন্ত একত্র হতে পারব না, ততদিন পর্যন্ত আমাদের অধিকার আমরা পাব না।সকল তরুণদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে রাজনীতির সাথে যুক্ত হোন,রাজনীতি ছাড়া মু্ক্তি বা অধিকার অসম্ভব।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.