২০০৭ সালের ইতিহাসের সাক্ষী আমি!

Jadil Mri





সমাহিত স্থান






২০০৭ সালের  ইতিহাসের সাক্ষী আমি!


আমি ইতিহাসের সাক্ষী, আমি দেখেছি এর ভয়াবহতা। ২০০৭ সাল, আমি মোটামোটি বড় হয়েগেছি। তখন এত কিছু না জানলেও আমি এর সাক্ষী,আমি ইতিহাসের কালো অধ্যায়েরর সাক্ষী।আজ সারাদিন ফা চলেশ রিছিল এর মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা অনেকে জানি না বা ভুলে গেছি ফা চলেশ রিছিল কে?আমাদের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিল ফা চলেশ রিছিল।বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ এই আদিবাসী নেতা, আমার একেকটা অনুপ্রেরণা।
আমি পুরো কাহিনী বলতে পারবো না আমার কাছে এখনো অনেক কিছু ঝাপসা রয়েছে।২০০৭ সালে অনেক  ঘটনা ঘটেছে,তার মধ্যে দুটো বিষয় বেশ স্মরণে আছে।আমি দুটো বিষয় নিয়ে আলোপাত করতে চাই।

এক,

আমি যখন বাড়িতে যাই আমার কাছে যখন বাইক থাকে সময় পেলেই আমি ফা চলেশ রিছিলের সমাহিতে যাই।আমি কেন যাই? আমার ব্যক্তিভাবে অনেক কারন আছে,অনেক যুক্তি আছে।অনেকের বারণ সত্ত্বেও আমি যাই, জোর করেই যাই। আজকে তা নিয়ে আলোচনা করব না।আমি প্রায় সময়ই যাই, কোন প্রোগ্রাম না থাকা সত্ত্বেও।কিন্তুু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও  উনার মৃত্যুবার্ষিকীতে যেতে পারি না, সেটা আমার আপসোস লাগে।আজ উনার মৃতু্বার্ষিকীতে কিন্তুু আমি যেতে পারছি না,আমাকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে।মাঝে মধ্যে অপরাধী মনে হয় এত বছর হয়েগেল কিন্তুু মৃত্যুবার্ষিকীতে উপস্থিত হতে পারি নাই। আমাকে অনলাইনের মাধ্যমে জানতে হচ্ছে,কেমন করে পালন হচ্ছে মৃত্যুবার্ষিকী।
ফা চলেশ রিছিল আমাদের নেতা আদিবাসীদের নেতা।উনার কিভাবে মৃত্যু হয়েছে, কেন মৃত্যু হয়েছে, পরে কিকি কেচ্ছা কাহিনী সৃষ্টি হয়েছিল, একটু কষ্ট করে অনলাইনে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।আমরা যখন অধিকারের জন্য সোচ্চার হই তখন আমরা ডাবল অপরাধী, এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা।ফা চলেশ রিছিলের বিচার এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।সবকিছু এলোমেলো, এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হবে কি না, ন্যায্য বিচার পাব কি না, আমি জানি না।আদৌ কি আশায় বুক বাঁধব, উনাদের কে বিশ্বাস করবো? এত বছর শুধু কথার ফুলজুড়ি দেখে আসছি,কাজের কাজ কিছুই হয় নাই।
আমি আমার অন্তর থেকে ফা চলেশ রিছিল কে স্মরণ করছি।এই নেতা জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।


দুই,

আমি দেখেছি আমাদের স্বপ্ন কিভাবে ধ্বংস  করে দেয়।শত শত স্বপ্নের কিভাবে অপমৃত্যু ঘটে,আমি দেখেছি অশ্রুধারা শত মানুষের কান্না চারিদিকে গ্রাস করেছিল।সবদিকে সব সময় আতঙ্ক শুধু আতঙ্ক। আমি নিজেও সেই আতঙ্কে ছিলাম, আমি এমন পরিস্তিতির সম্মুখীন হয়েছি। যা আমার জীবনের জন্য মারাত্মক ভাবে প্রভাব পেলেছিল।তখন দেশে জরুরি অবস্থা চলে ততত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়।আমাদের মধুপুর এলাকা বনের আশেপাশে গারো জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এছাড়াও কিছু কোচ বর্মন আছে।তখকার সময় এক কালো অধ্যায়। তখন গারো জাতিগোষ্ঠী লোক অর্থনীতি ভাবে  অনেক শক্তিশালী হচ্ছিল।অনেক পরিবার সচ্ছল হচ্ছিল,মোটামোটি একটা ভালো অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ করে একদিন খবর এলো, পুরো এলাকা খাসজমি এই জায়গা থেকে সরে যেতে হবে কারন এই গুলো সব সরকারের জায়গা।আমরা আজ পর্যন্ত খুব আতঙ্কে থাকি কবে না জানি উচ্ছেদের নোটিশ চলে আসে।আমাদের কে অনেক ভাবে আগে উচ্ছেদ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও আবারো করতে পারে।আমি ঠিক জানি না।
তখন আমাদের নিজেদের জমিতে আমরাই কলা চাষ করতাম,এছাড়াও নানা  ধরনের ফসল চাষ হতো বিভিন্ন প্রকার বিভিন্ন ধরনের।      প্রত্যেক গারো পরিবার কলা চাষ বা বাগানের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিল।কলার চাষ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। এত দিনের কষ্টের টাকা ,জমানো টাকা ঋণের টাকা সবকিছু কলার পিছনে দিয়েছিল।কিন্তুু আমাদের ভাগ্য খারাপ, নিজের চোখে সামনে পুরো কলাগাছ কাঁটা দেখতে হয়েছে।এমনি করে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিল তাদেকে নিংস্ব করে দিয়েছিল।আমাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল,প্রত্যেক পরিবার অর্থনীতি ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।একবার যে ক্ষতি হলো সেখান থেকে দাঁড়াতে প্রায় বারো পনেরো বছর লেগে গিয়েছিল।আজও কারো কারো এমন অবস্থা আছে যারা আজ পর্যন্ত ভালো করে অর্থনীতি শক্তিশালী করতে পারেনি।সেই জায়গা থেকে উঠে     দাঁড়াতে পারেনি।শুধু মাত্র কলা বাগান ধ্বংশ  করেই  থেমে থাকেনি    আবাদি ফসল নষ্ট করা হয়েছে।আমাদের জমিগুলোতে নতুুুন করে গাছ লাগানো হয়েছিল।আবাদি   জমিতে তো আছেই বাড়ির উঠান পর্্যন্ত লাগানো হয়েছিল।জমির কাগজ থাকা সত্ত্বেও নানা  ভাবে হয়রানি করা হয়েছিল।



আমি ইতিহাসে সাক্ষী,বাস্তবতা দেখেছি,কষ্টের দিন দেখেছি।

(বি:দ্র -ছোট করে লিখেছি)

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.