এই শহরের পাখিগুলো একা
Troyee Thapsree
শহরে এখন মধ্যরাত | রাতের আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা | আসি আসি করে বৃষ্টি আসে না , জানালার কার্ণিশে হলদে পাখিটা নিশ্চুপ বসে কারো প্রতীক্ষায় আছে | মনে হচ্ছে, মেয়েটাকে ভালোবেসে এই শহরের পাখীরা কোথাও পালিয়েছে | তাই এই শহরে পাখীরা আসে না | শুধু হলদে পাখীটা কোথাও যেতে পারিনি, প্রতিদিন কারো প্রতীক্ষায় রাত জেগে কাটায় |
ঝুম বৃষ্টি এসে গেলো, মুষল ধারে বৃষ্টিতে নগরীর উদ্যম নৃত্য চলছে | নগরীর প্রত্যেক রাস্তা ঘাটে সুনসান নীরবতা |
ল্যাম্পপোষ্টের বিষণ্ণ আলোয় মৃত্যুমাখা বিষণ্ণ কোন সময়ের নিস্তব্দতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নগরীর অলি গলি পথ |
কোথা থেকে একটা শব্দ আসে, মানুষের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়, শুনেছি শহরে মধ্যরাতে নাকি দ্বৈত নামে | একদল হিংস জন্তু মানুষের ন্যায় অন্ধকারে হেঁটে বেড়ায় নগরীর পথে পথে | ওরা পুরো শহরে আগুন লাগায়, আর নিভায় | উল্লাস নৃত্য করে সারারাত জুড়ে | ঘরের ভেতর ওদের উল্লাসে মানুষেরা ঘুমাতে পারে না |
রাষ্ট্রের সবকিছুতে ওরা ভাগ ভাটোয়ারায় নামে এই অন্ধকারে | মিছিল সমাবেশ নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় এই মধ্যরাতে |
এরা কাউকেই মানে না, রাতের শহরে কেবল তাদের আধিপত্য |
ল্যাম্পপোষ্টের নীচে দাঁড়িয়ে আছে লাবণ্য, ঐ যে শেষের কবিতার লাবণ্য | লাবন্য কি তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজে অবিরাম প্রতীক্ষায় অমিতের জন্য !
একদমই না |
লাবণ্য কেবল আমার অপেক্ষা করে | অনেকটা বিষণ্ণ লাবণ্য আজ, চোখের নীচে ক্লান্তির স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে , মনে হয় অনেকটা পথ হেঁটে এসে এখানেই পথ ভুলেছে |
ভেজা ওড়নাটা বুকের সাথে লেপ্টে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে| অর্ধ নগ্ন পিটে কেবল তাকিয়ে আছে অনিশ্চতায় আর ভয়ে সামনের দিকে | যেমন বিষণ্ণ বিকেলে কয়েকটা হিংস জানোয়ারের মাংস ভক্ষণের বস্তু হতে হতে বেঁচে পালিয়ে এসেছে এখানে |
এদিকে জানোয়ারদের আগমন দেখে লাবণ্য পা বাঁড়ায় সামনের দিকে, এই কই যাস ? হুনকার ছুড়ে জানোয়াররা |
আমি ঘরে ফিরে যাই , অস্পষ্ট আওয়াজে লাবণ্যের ধ্বনি |
ঘিরে রাখে জন্তুরা লাবণ্যকে, আজ কোথাও যেতে পারবি না তুই, আজ আমাদের বিলিয়ে দিতে হবে সারারাত |
ভয় পেয়ে যায় লাবণ্য, এক ঝাক পাখি অভিমান ভেংগে কোথা থেকে আসে ঝড়ের সাথে | হলদে পাখীটা ভয়ে আরো চুপটি করে থাকে |
মৌন মিছিল করে পাখীরা | মানুষেরা ঘরে বসে তামাশা দেখে | প্রতিবাদের শক্তি সামর্থ্যের জানান কেউ দেয় না সাহসাই | পাখীরা কেবল আকাশে চিৎকার করে জানান দেয়, আমরা এগিয়ে এসেছি, কিন্তু আমাদের ক্ষমতা খুব অল্প |
এই শহরের লাবণ্যের মতো পাখীরা সবসময় একা |
লাবণ্যের স্বপ্ন ছিলো জুই জামেলি রক্তজবার রং এ নিজেকে রাঙ্গাবে | শহরে এসেছিলো জলপাই রং এর সাথে মিতালী পাততে, ধূসর বিকেলে কেবল তাকিয়ে থাকতো আকাশে মুঠোভরা স্বপ্ন হাতে নিয়ে |
অথচ...
পরদিন খবরের কাগজ জুড়ে আসে লাবণ্যেকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় নগরীর রাজপথে |
শহর, এবং সারা দেশ আরেকবার কেঁপে উঠলো | রেডিও টিভিতে কেবল প্রতিবাদ নয়, নানান চুলচেরা খবর লাবণ্যকে নিয়ে বের হলো |
ফেইসবুক, টুইটারে প্রতিবাদ হলো | প্রতিষ্ঠিত কবি লেখকরা কবিতা গল্পে লিখে প্রতিবাদের মিছিলে শরীক হলেন | রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে বিচারের আশ্বাস, বাণীতে কেটে যায় দিনের পর দিন |
খুব সহজে আমরা ও ভুলে যাই লাবণ্যদের কথা | আইনের ম্যারপ্যাচ, রাজনীতির প্যাচ পেরিয়ে দ্বৈতরা বের হয়ে আসে আবার এই নগরীতে | নগরীর রাস্তায় রাস্তায় অন্ধকারে ধর্ষকেরা ঘুরে বেড়ায় আবার নতুন কোন লাবণ্যের খুঁজে |
আর আমি লাবণ্যের বিরহে দিনের পর দিন কবিতাই লিখে যাচ্ছি | সেই কবিতা দিয়ে আগামী বইমেলায় একটা বই প্রকাশের স্বপ্ন ও দেখছি |
অথচ বেঁচে থাকতে লাবণ্যের শেষ চিৎকার কারো কর্ণ গহবরে প্রবেশ করেনি |
এই শহরের পাখিগুলো একা |
শহরে এখন মধ্যরাত | রাতের আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা | আসি আসি করে বৃষ্টি আসে না , জানালার কার্ণিশে হলদে পাখিটা নিশ্চুপ বসে কারো প্রতীক্ষায় আছে | মনে হচ্ছে, মেয়েটাকে ভালোবেসে এই শহরের পাখীরা কোথাও পালিয়েছে | তাই এই শহরে পাখীরা আসে না | শুধু হলদে পাখীটা কোথাও যেতে পারিনি, প্রতিদিন কারো প্রতীক্ষায় রাত জেগে কাটায় |
ঝুম বৃষ্টি এসে গেলো, মুষল ধারে বৃষ্টিতে নগরীর উদ্যম নৃত্য চলছে | নগরীর প্রত্যেক রাস্তা ঘাটে সুনসান নীরবতা |
ল্যাম্পপোষ্টের বিষণ্ণ আলোয় মৃত্যুমাখা বিষণ্ণ কোন সময়ের নিস্তব্দতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নগরীর অলি গলি পথ |
কোথা থেকে একটা শব্দ আসে, মানুষের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়, শুনেছি শহরে মধ্যরাতে নাকি দ্বৈত নামে | একদল হিংস জন্তু মানুষের ন্যায় অন্ধকারে হেঁটে বেড়ায় নগরীর পথে পথে | ওরা পুরো শহরে আগুন লাগায়, আর নিভায় | উল্লাস নৃত্য করে সারারাত জুড়ে | ঘরের ভেতর ওদের উল্লাসে মানুষেরা ঘুমাতে পারে না |
রাষ্ট্রের সবকিছুতে ওরা ভাগ ভাটোয়ারায় নামে এই অন্ধকারে | মিছিল সমাবেশ নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় এই মধ্যরাতে |
এরা কাউকেই মানে না, রাতের শহরে কেবল তাদের আধিপত্য |
ল্যাম্পপোষ্টের নীচে দাঁড়িয়ে আছে লাবণ্য, ঐ যে শেষের কবিতার লাবণ্য | লাবন্য কি তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজে অবিরাম প্রতীক্ষায় অমিতের জন্য !
একদমই না |
লাবণ্য কেবল আমার অপেক্ষা করে | অনেকটা বিষণ্ণ লাবণ্য আজ, চোখের নীচে ক্লান্তির স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে , মনে হয় অনেকটা পথ হেঁটে এসে এখানেই পথ ভুলেছে |
ভেজা ওড়নাটা বুকের সাথে লেপ্টে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে| অর্ধ নগ্ন পিটে কেবল তাকিয়ে আছে অনিশ্চতায় আর ভয়ে সামনের দিকে | যেমন বিষণ্ণ বিকেলে কয়েকটা হিংস জানোয়ারের মাংস ভক্ষণের বস্তু হতে হতে বেঁচে পালিয়ে এসেছে এখানে |
এদিকে জানোয়ারদের আগমন দেখে লাবণ্য পা বাঁড়ায় সামনের দিকে, এই কই যাস ? হুনকার ছুড়ে জানোয়াররা |
আমি ঘরে ফিরে যাই , অস্পষ্ট আওয়াজে লাবণ্যের ধ্বনি |
ঘিরে রাখে জন্তুরা লাবণ্যকে, আজ কোথাও যেতে পারবি না তুই, আজ আমাদের বিলিয়ে দিতে হবে সারারাত |
ভয় পেয়ে যায় লাবণ্য, এক ঝাক পাখি অভিমান ভেংগে কোথা থেকে আসে ঝড়ের সাথে | হলদে পাখীটা ভয়ে আরো চুপটি করে থাকে |
মৌন মিছিল করে পাখীরা | মানুষেরা ঘরে বসে তামাশা দেখে | প্রতিবাদের শক্তি সামর্থ্যের জানান কেউ দেয় না সাহসাই | পাখীরা কেবল আকাশে চিৎকার করে জানান দেয়, আমরা এগিয়ে এসেছি, কিন্তু আমাদের ক্ষমতা খুব অল্প |
এই শহরের লাবণ্যের মতো পাখীরা সবসময় একা |
লাবণ্যের স্বপ্ন ছিলো জুই জামেলি রক্তজবার রং এ নিজেকে রাঙ্গাবে | শহরে এসেছিলো জলপাই রং এর সাথে মিতালী পাততে, ধূসর বিকেলে কেবল তাকিয়ে থাকতো আকাশে মুঠোভরা স্বপ্ন হাতে নিয়ে |
অথচ...
পরদিন খবরের কাগজ জুড়ে আসে লাবণ্যেকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় নগরীর রাজপথে |
শহর, এবং সারা দেশ আরেকবার কেঁপে উঠলো | রেডিও টিভিতে কেবল প্রতিবাদ নয়, নানান চুলচেরা খবর লাবণ্যকে নিয়ে বের হলো |
ফেইসবুক, টুইটারে প্রতিবাদ হলো | প্রতিষ্ঠিত কবি লেখকরা কবিতা গল্পে লিখে প্রতিবাদের মিছিলে শরীক হলেন | রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে বিচারের আশ্বাস, বাণীতে কেটে যায় দিনের পর দিন |
খুব সহজে আমরা ও ভুলে যাই লাবণ্যদের কথা | আইনের ম্যারপ্যাচ, রাজনীতির প্যাচ পেরিয়ে দ্বৈতরা বের হয়ে আসে আবার এই নগরীতে | নগরীর রাস্তায় রাস্তায় অন্ধকারে ধর্ষকেরা ঘুরে বেড়ায় আবার নতুন কোন লাবণ্যের খুঁজে |
আর আমি লাবণ্যের বিরহে দিনের পর দিন কবিতাই লিখে যাচ্ছি | সেই কবিতা দিয়ে আগামী বইমেলায় একটা বই প্রকাশের স্বপ্ন ও দেখছি |
অথচ বেঁচে থাকতে লাবণ্যের শেষ চিৎকার কারো কর্ণ গহবরে প্রবেশ করেনি |
এই শহরের পাখিগুলো একা |
"এই শহরের পাখিগুলো একা"-
ReplyDeleteকাঁদে নিভৃতে মানবতা। লেখা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। ভালো, চালিয়ে যাও।