কবি মতেন্দ্র মানখিন আর কিছু না হোক ‘বাঙা.আ জাবুছিম দুকনি সাগাল বালজ্রয়ে’ কালজয়ী গানটির জন্যই বেঁচে থাকবেন গারো জনগোষ্ঠীর অন্তরে।

কবি মতেন্দ্র মানখিন আর কিছু না হোক ‘বাঙা.আ জাবুছিম দুকনি সাগাল বালজ্রয়ে’ কালজয়ী গানটির জন্যই বেঁচে থাকবেন গারো জনগোষ্ঠীর অন্তরে।

মিঠুন রাকসাম

ছবি:থকবিরিম 




‘বাঙা.আ জাবুছিম দুকনি সাগাল বালজ্রয়ে’
হাজার পাহাড় আর দু:খ নদী পেরিয়ে
একটি কালজয়ী মান্দি(গারো) দেশাত্বকবোধক গান। গারো জনগোষ্ঠীর যে কোনো অনুষ্ঠান শুরুর আগে এই গানটি গাওয়া হয় বা গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এই গানটিকে অনেকেই বাংলাদেশি গারোদের জাতীয় সংগীতও বলে থাকেন। গারো জনগোষ্ঠীর সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে গানটি সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়, মনকে আনন্দোলিত করে। গানটি লিখেছেন বর্তমান সময়ের গারো জাতিসত্তার অন্যতম কবি মতেন্দ্র মানখিন। কবি মতেন্দ্র মানখিনের মতে, সমাজের জন্য দায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে গান রচনা করেছি। সমাজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, জাতীয়তা ও মূল্যবোধগুলো কবিতা, প্রবন্ধ ও গানের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি।

কবি মতেন্দ্র মানখিনকে গারো কবিদের গুরু বলেন অনেককে। যে কজন কবিতা লিখছেন বা লিখতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে কবি মতেন্দ্র মানখিনই এখনও দু হাতে লিখে চলেছেন। বিভিন্ন সাহিত্য আসরে উপস্থিত হন কবিতার ঝুলি নিয়ে, নতুন লেখা কবিতা পাঠের উদ্দেশ্যে। সুদূর নয়াপাড়া থেকে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে বান্দরবন কিংবা দেশের যে কোনো প্রান্তে।
কবি মতেন্দ্র মানখিনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার পাহাড় ও নদীঘেরা নয়াপাড়া গ্রামে। বিবাহিত জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে।

কবি মতেন্দ্র মানখিন কবিতা লিখতে শুরু করেন ছাত্রাবস্থাতেই। দশক ধরা হলে বলতে হবে ৭০ দশক। প্রথম কবিতা ‘বর্ষা’ ছাপা হয় সাপ্তাহিক প্রতিবেশীতে। বাংলাদেশি খ্রিষ্টানদের অত্যন্ত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা হচ্ছে সাপ্তাহিক প্রতিবেশী। কবি মতেন্দ্র মানখিন খ্রিষ্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিবেশীতে নিয়মিত কবিতা লিখতেন। একটা পর্যায় এসে ভেবেছিলেন কবিতা লিখে কী হবে?  সামাজিক নানা চিন্তা ডুবে থাকে ১৯৮৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত। ফলে কবিতা লেখা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু পরে নিজেকে প্রশ্ন করলেন, যা লিখেছেন সেই লেখা নিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারব তো? একসময় আবার পুরোদমে লেখালেখি শুর করলেন। কবির মতে, লেখালেখি সত্যিকার অর্থে লেগে থাকা ও দীর্ঘ সাধনার কাজ, চর্চার কাজ।
কবি মতেন্দ্র মানখিনের লেখায় মান্দি সমাজের চিত্র, তাদের দু:খ-কষ্ট ছবির মতো উঠে আসে। কোনো কবিতায় প্রেম, দ্রোহ কখনোবা প্রতিবাদ বাস্তব হয়ে ধরা দেয়।

ছবি:থকবিরিম 


কবি মতেন্দ্র মানখি কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, গান লিখেছেন। এখনও লিখে চলেছেন। গারো সাহিত্য ও সংস্কৃতির সব অঙ্গণে তাঁর সমান ও অবাধ বিচরণ। কবির অসংখ্য সৃষ্টি বাংলাদেশের গারো সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
গারো ও বাংলা মিলিয়ে প্রায় একশ’রও অধিক মত গান লিখেছেন। ২০০৭ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পাথরচাঁপা ফুল’ প্রকাশিত হয়। এ পযর্šÍ পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ এবং দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
১. পাথরচাপা ফুল
২. কবি ও কবিতা কাহিনি
৩. না প্রেম না বসতি
৪. এইতো জীবন এইতো মাধুরী
৫. হৃদয় বৃত্তান্ত এক কষ্টের নদী।
৬. ধূর্তছায়া নষ্টকাল- থকবিরিম প্রকাশনী

প্রবন্ধ:
১ গারো সমাজ ও সংস্কৃতি দুয়াল গোত্র
২ গারোদের লোকায়ত জীবনধারা - থকবিরিম প্রকাশনী
কবিতা লেখার জন্যে পেয়েছে বেশ কিছু সম্মাননা।
১. খ্রিষ্টান ছাত্র কল্যাণ সংঘ, ঢাকা থেকে -‘অনল সাহিত্য পুরস্কার’ -১৯৮১খ্রি.
২. ভালুকাপাড়া মিশন খ্রিষ্ট-জন্ম-জয়ন্তী ২০০০‘পদক সম্মাননা’-২০০০ খ্রি.
৩. ভালুকাপড়া মিশন ‘ক্যাটি খিষ্ট শিক্ষক দিবস সম্মাননা’ -২০০২ খ্রি.
৪. ‘লেখা সাহিত্য পুরস্কার’ --২০০৮ খ্রি.
৫. গারো অঞ্চলে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারের শতবর্ষ পূর্তি জয়ন্তী উৎসব রাণীখং,
   নেত্রকোণা থেকে ‘বিশেষ সাহিত্য সম্মাননা’-২০১০ খ্রি.
৬. ‘স্বতন্ত্র’ আয়োজিত ময়মনসিংহ কবি সমাবেশ -‘শুভেচ্ছা স্মারক সম্মাননা’-
                                                                         ২০১০ খ্রি.
৭. সুসং দূর্গাপুর সাহিত্য সমাজ, নেত্রকোণা, ‘সাহিত্য সম্মাননা’  - ২০১২ খ্রি.
৮. ঢাকা ওয়ানগালা সাহিত্য সম্মাননা-২০১২ খ্রি.
৯. কারিতাস (পারলাম) ময়মনসিংহ অঞ্চল, ধোবাউড়া, ‘মানবাধিকার দিবস
                                                       সাহিত্য সম্মাননা’-২০১২ খ্রি.
১০.  গারো গবেষক, লেখক, কবি সম্মেলন- ময়মনসিংহ। সম্মাননা- ২০১৩ খ্রি.।

কর্মময় জীবনে কবি স্কুল পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কবি নিজের তৈরি বাড়ি ‘ ছায়াকাননে’ এছন এবং কবিতা লিখে যাচ্ছেন। নামটা ‘ছায়া কানন’ কেন? জানতে চাইলে কবি বলেন, পাহাড় ও নদীর কোলে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। চারিদিকে সবুজ আর বিস্তীর্ণ মাঠ, মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃৃতির এই অপার সৌন্দর্য মন ভাল করে দেয়, মনকে সতেজ ও সজীব করে। ছায়া সুনিবিড়, স্নিগ্ধ ও শান্তির পরশ মেলে। মনে হয় দেশটা কত অপরূপ আর মনোমুগ্ধকর! তাই নাম দিয়েছি ছায়াকানন।


ছবি:থকবিরিম 


কবি মতেন্দ্র মানখিনের গারো ভাষায় লেখা কবিতা

জাতথাংনি জুমাং
(গারো-১)

আনচিনি খা,সায় থমথমে  দংআচাআনি বিদিংরাং
দিংথাংফিল্লেংজক।  দাকবেয়াল দাকমেশকা
মা,মান্থি চলরাং  দিংথাং ফিল্লেংজক। উনানÑ
গিসিকও থারিয়ে রাক্ষিনা নাংগেন খা,সারা নামনিকাখো
দু,খ-মিকচি আরও  চনিকাখো রি,বাকে গা,লে
খুরাং বিবাল আরও গীতরাংখো
নাম্মে রাক্ষিনা  নাংগেন জাতথাংনি জুমাংখো।

আনচিংনি বেয়াপদামও নামগিজা  আসেলরাং
মারাং সমাইও  আনচিং নাম্মেন দুক মানবেআহা
 নিথুয়া বারেখো ব্রিংনি মংমারাং গারিবিকা
গিম্মায়খাত্তা খুচলসান অংআনিরাং
নিকজেংজেংও নিকমানা রাসত্তা, সওত্তা রিমথা,ত্তাখো।

ইয়া ববিলমিদ্দিং সমাইও আনচিংবা রাকনা নাংগেন
জুমাং নিকনা নাংগেন মিখাংচিনি ফ্রিংগিত্তালখো
নাম্মা সিল্লা আরও  বিবিখো আনচিং রাক্ষিনা নাংগেন
মিলিগ্রিকে রাক্ষিনা নাংগেন মান্দিরাআনি বাগানখো।

ছবি:থকবিরিম 


জাতিসত্বার স্বপ্ন

আমাদের সহজ-সরল জীবন যাত্রা বদলিয়ে যায়
নানা চালচিত্র, কবিতার চিত্রকল্প রূপ, তাই-
শুভ কামনার মোড়কে বেঁধে রাখি আতœীয়তার বন্ধন
গøানি-অপমান, অপযশ মুছে ফেলতে চাই
আমাদের  জীবন সাহিত্য-সঙ্গীত আর কবিতায়
ধরে রাখতে চাই নিজস্ব মূল্যবোধের সৌন্দর্য
টিকিয়ে রাখতে চাই জাতিসত্বার স্বপ্ন,প্রাণ-স্পন্দন।

আমাদের চারপাশে নানা জটিলতা, দুঃখ অভিঘাত
দুর্মর সময়ে আমরা দুষণ পীড়িত
সাজানো বাগান তছনছ করে বুনো হস্তির দল
ঐক্যতান হারিয়ে যায় কালকূট আঁধারে
চোখের সামনে ভাসে সহিংস, হত্যা-খুন-ধর্ষণ!

এই সংক্ষুদ্ধ  সময়েও আমাদের টিকে থাকতে হবে
স্বপ্ন দেখতে হবে আগামী দিনের নতুন সকালের
নৈরাজ্যের মধ্যেও আঁকরে থাকতে হবে সত্য-সুন্দরকে
হাতে-হাত মিলে সাজাতে হবে সুন্দর মানবতার বাগান।


গুয়ালানি সালগী বিবালনি নরক

(গারো-২)
সান  খাথংথো থিত্তে খা,সানি মন্দিল রি,কা
মিকচাআয় বালওয়া খরে চাখাত্তা
গিচ্চাক রিম্মিট জুমাংনি বেলুন বি,লা
খা,সানি বালরোরোও   মোনালিসা খাসাদিকদিক।

কেলকি এংআও খা,সানি খুরাং বিবাল
মিক্ষা চাক্কি দো,রিম্মিট খাসায় মিকগুয়া
গানদিং চিনদিংখো নিকে উইনা মানফাআ
সা,ওয়ামিংবা দংফাকন মিজাল ওয়ালো।

খ্রাচাআনি আ,ধুলা গানদিংগ্রি-গাদিলা
বুদিফা অংওবা চশমাদে রাআ অংখুজাচিম
নিকমাখুজা নাম্মে গুয়ালানি সালগী
আরও বিবালনি নরকখো
আইয়াও সিম্মুলা, নিথুয়া আনসেংআ আগিলসাক।

ভুলের স্বর্গ ফুলের নরক - ২

কার হৃদয় খনন করে প্রেমের মন্দির গড়ো
মৃগ্ধতায় চঞ্চল বাতাস প্রিয় লীলায় মত্ত
রঙ্গিন স্বপ্নের বেলুন উড়ে
প্রণয়-বসন্তে  মোনালিসা চাঁদ প্রেমে মুগ্ধ সমীরণে।

প্রেম-শিল্প কবিতার খোলা জানালায়
বৃষ্টিভেজা হলুদ পাখীর ঋতু-রং ডাক
বেশ-ভূষায় বুঝা যায় কারও পরকীয়া প্রেমের
সঙ্গীছিল সেও- গতকাল রাতের আঁধারে।

চার পাশে ধুসর ধুলো নগ্ন কুায়াশার ভীর
সময় বেড়েছে ঠিক তবু-চশমা নেয়া হয়নি আজও
ভালো করে দেখা হয়নি ভুলের স্বর্গ ফুলের নরক
রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধের রঙ্গিন পৃথিবী।



নামগিজা রানথাআ 

(গারো-৩)
মারাং সমাইনি আধূলা ময়লা বাজিয়া
সোগাওলোবা থালজা রিবাকোবা থালজা
মিৎচিয়া বস্তু। প্লাকন নিকনা মাননা
জাজংনি সিম্মাখো, সিমরিমরিম জাজংখো।

বালওয়া আসাক বিল্লা আধুলারাং
উইমানগিজা মিকনাপা
সাগালনি বালমিন্দ্রি সাতদাপা
চিনিংও গ্রাপা মিকচি রুরারুরা

বেয়েন বিমাংনি মান্দিরাং  গুয়ালা
নামগিজা রানথা আসেল গালনা আম্মা
নিকমানগিজা সালনি আসেলও
দারেং রিকগাম বেয়া, চিও বানাংআ
সিয়া বননানি সাল সকবারিয়া।

ওয়ালগিত্তান মান্দিনি নামগিজা  রানথাআ
খুয়াও সান্দিরিমা  গানদিংগ্রি জাজংখো
আন্দালানি মাইদোষ ? উইগিপা মান্দি
উইগিজাদাকে আন্দালাও নাপে খাত্তোদে !

মুদ্রাদোষ

জীবনে লেগেছে দাগ বৈরী বাস্তবতার
ধুলি-মলিনতা। ধোয়া যায়না, মোছা যায়না
ঘৃণীত নিষ্ঠাবন। সবারই চোখে পাড়ে
চাঁদের কলঙ্ক, কলঙ্কের চাঁদ প্রতিমা !

আকাশে বাতাসে ওড়ে বাউকুড়ানির বালি
ভাঁঙ্গা পাঁজরের ফাঁকে ঢুকে অলক্ষে যন্ত্রনা দেয়
উত্তাল সাগরের ঢেউ-জলের অতলে ক্রন্দন
অশ্রæবাষ্প, মনস্তাপ, বাসনার ভ্রান্তিজালে
সমূহ ভোগান্তি। প্রলয় মাতম শুনি চারিদিকে !

শারীর স্বভাবে মানুষের দূর্বলতা খুব
কামনা, বাসনা প্রলোভনে পতনোম্মুখ চিরকাল
অদৃশ্য কার অমোঘ আকর্ষণে  অজান্তে কখন
নদীর পার ভাঙ্গে. ¯্রােতে ভেসে যায়
লেগেই খাকে আতœ-হন্তারক প্রমত্ত জোয়ার।

আগুনের মত মানুষের মুদ্রদোষ খানে-খারাপ
কূঁয়োর জলে হাতিয়ে বেড়ায় নগ্ন পূর্ণিমার চাঁদ
আধাঁরের কী দোষ ? আধাঁর বিনাশী মানুষ
ইচ্ছে করেই যদি আধাঁরে মিশে যায়।


খুরাং বিবালখো বান্নাংআ

(গারো-৪)
নিতাই দারেংও খুরাং বিবালখো বান্নাংআ

চিও বান্নাংআ মান্দিরাংনি খাথাখুরাং
মিংমানগিজা খা,সাআ আরও গীতমালা
নমুল মেচিকনি খাবাক মজিমা
নিকমানাও আন্দাল আন্দাল আনথাম
সিকদিক চি,নদিকদিক দাকা।

চি,রিকংখো মানচাপে গিমিক খাথং রে,য়া
নামগিজা বারিও খা,সানি বিবাল বাল্লা
আন্দাল সিমও দোরাংনি মিলিগ্রিকা
সুখ সুখ রিংআ বিবাল সালনি গীত।
উইয়াগ্রিচিম ইন্দিবা নাম্মেন মিলিয়া
খা,নাবেয়া সিকদিকদিক নিথুয়া
কবিরাংনি খুরাং বিাবলও
থমথম দংআ ব্রিংবারিনি গীত
গিসিক ব্রিংও আইয়াও খাফাকা
চেল্লাও দংয়ে জাকজিপা  অজন্তা ইলুরা।

কবিতার ভাসান
         
নিতাই নদীতে ফুল-চন্দন কবিতার বাসান
ভেসে যায় আদিবাসী শব্দ-তরঙ্গ, অস্ফুষ্ট প্রেম
গারো যুবতীর দোলে ওঠা বুক, কিছু কথামালা
দৃষ্টির সীমানায় ধূপছায়া গোধূলি
মোহময় লহর কাটে।

হৃদয় তরঙ্গ মিশে যায় কূলে কূলে
ফুটে কাম-কলি নষ্ট-ক্ষত বাগানে
পাখিদের সঙ্গমে আবছায়া অন্ধকার
চুপিসারে বাজে পুষ্পদিনের সঙ্গীত।

অচেনা সে তবু খুব ঘনিষ্ঠ সুন্দর
কাছে টানে মোহময় মৌন সুন্দরী
কবিদের কবিতা কূজনে থেমে যায়
অরণ্যের গীতালি
মনে-বনে -কোণে অর্পূব রোমাঞ্চ
দূর থেকে হাতছানি দেয় অজন্তা ইলোরা।




মংমা ওয়াগামনি দূর্গ

গারো (৫)
সিলগা গা,পে সগিন বিল্লামা, নামগিজা আসেল
মান্দেরাং খোননা, জাজ্রেংআ
সুনা আম্মা বিষিগ্নাংগিপা চিফু নকসাম-আসামও
জাংগী থাংআনি জাদিলও দুকনি গীত
আন্দালাও গিম্মায়খাত্তা থমথমানি বিয়ারাং
পাপ-মারাংরাং ওয়েননি দংআ নামগিজা সমইও
ইন্দিবা খাদংআনি  অংআ জুমাং সিলারাং
খা,সায় জাজং খাদিংআ আস্কিরাংনি বিবাল

খা,আও নাংয়ে চাখাত্তা খুরাং বিবাল
খুরাং বিবাল  আমজা শোওয়া,সওত্তা রাসত্তাখো
খুরাংনি মন্ত্রদে মিলিয়া মাগাপানিসা
এ্যাংয়েতবো মংমা ওয়াগামনি  দগাচিলখো
থমথমানি ফারুাআ বিল্লামচিনা
আগিলসাকো গীত রিংচিনা মিলিগ্রিকানিখো
জাকমিলিবো হাই খুরাংনি থমথমা রিজিমাও।

হস্তিদন্তের দূর্গ

আকাশ জুরে শকুন ওড়ে অশান্তির কালো ছায়া
অপ্রতীব মানুষ  বিব্রত ,শঙ্কিত
ফণা তুলে বিষধর সাপ আনাচে কানাচে।

অস্তিত্বের শেকড়ে বিষাদ সঙ্গীত
মিলিয়ে যায় আঁধারে শান্তির প্রার্থনা
অন্তিম সময়ে ঘিরে পাপ প্রপঞ্চক
তবু আশা জােেগ স্বপ্ন শ্যার্মালমা
অনুরাগে চাঁদ হাসে, নক্ষত্রের ফুল

কবিতা চায়না জ্বালাও পোড়্াও হত্যা, খুন, ধর্ষণ
কবিতার মন্ত্র- মানুষ আর মানবতা
খুলে দাও হস্তিদন্তের দূর্গ, উড়–ক শান্তির পায়রা
বিশ্বজুড়ে গীত হোক –মিলন সঙ্গীত
হাতে হাত মিলাও আজ কবিতার শান্তিমিছিলে।

মান্দে মেচিকসা
(গারো-৬)
মান্দে মেচিসা রামরামারী গানন্দিং চিনদিং
সোনা-রূপাগ্রে মামুংবা গানজা
জা, আওবা মামুং গানজা কাংখারেওবা
কংশ-নিতাই-সিমাং গিত্তা খাতনামান্না।

মান্দে মেচিক ফাংরাংও ওয়েন্নি গাদৌগিপা
মাধবীলতা অংজা । আনথাংখো উইয়া বিয়া
বিলথাংচি দালগিপা  আরঙ্গা আবৃখো দিংবাতা
মামুংনা খেনগিজাগিপা  বিয়াবা  চিত্রাঙ্গদা সাকসা।

মান্দে মেচিক  মাংমাং অংজা
মেচিক মিংদে আবা-সংবা জাত মাহারী নাংচাপা
 মিচিক আগিসাক বিয়া  নিথুরিরিসা
মান্দে-সমাজও নকদাং ফাথিনি নকগিপা।

সং-নকও, খাম আসেলও উইয়া-গা,মা
গিয়া-গোয়া, সিয়া,থাংআ, দাকমেশকাও
চাআ,রিংয়া ,আনসেংআ চুগিমিকওন
মেচিকসাগ্রে মামুং খামবা অংফাজাহা।

গারো আদিবাসঅ রানী

গারো আদিবাসী নারী, সহজ সরল সাজ-সজ্জা
অলংকারে রিনিঝিনি কাকন বাজেনা তার
পায়ে মলনেই, কোমরে বাঁধন
তাই সে বেগবতী কংস, নিতাই, সোমেশ্বরী।

গারোনারী, তমাল তরুতে বেয়ে ওঠা পরাশ্রয়ী কোন
মাধবীলতানয়। জানে সে নিজের পরিচয়
প্রাণের শক্তিতে বেড়ে ওঠা পাহাড় অরণ্য বিজয়িনী
সাহসে শান্তিতে সেও কিংবদন্তী চিত্রাঙ্গদা এক !

গারো নারী মানে শুধুমাত্র নারী পুত্তুলিকা নয়
তার সাথে জড়িত ভ’মিও ব্রহ্মান্ড, জাতির পরিচয়
নারী বসুমতি সেও- শস্য-শ্যামলিমা
মাতৃ-তান্ত্রিক সমাজে সবকিছুর মালিকানা।
ঘরে বাইরে, কাজে, কর্মে, কর্ষণে, বপনে-রোপনে
জীবন মরণে, কৃষ্টি-সংস্কৃতি-পালা পার্বনে
রূপায়নে আপ্যায়নে সবখানেই ভূমিকা তার

সমাজ সংসার, জীবন যাত্রায় নারী শূণ্য
কোথাও কোন ছন্দপতন নেই।


ছবি:থকবিরিম 

ছবি:থকবিরিম 


(বি:দ্র-বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মাসিক ‘ উত্তরাধিকার’)


No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.