আচিক মান্দিদের মানুষ সৃষ্টির রহস্য

আচিক মান্দিদের মানুষ সৃষ্টির রহস্য




পৃথিবীর আকাশ,বাতাস,সূর্য,চন্দ্র,তারা প্রভৃতি পর প্রধান সৃষ্টি কর্তা তাতারা রাবুগা সকল দেব দেবীদের মানে মিদ্দিদেরকে কাছে ডাকলেন,বললেন,পৃথিবীকে তো এভাবে শূণ্য অবস্থায় রাখা যাবে না,আমাদেরকে একটা ভালো কিছু সৃষ্টি করতে হবে।তাই সকল মিদ্দিদের পরামর্শ মতোই নিজেদের সাদৃশ্যে মানে মিদ্দিদের আকারে প্রাণি সৃষ্টি করতে হবে।সকল মিদ্দেরকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হল।যে যেমন পারে যে আকারের হোক তৈরি করতে হবে।


সংগ্রহীত 


সকল দেবতা মিলে তাতারা রাবুগাকে বললেন,এই পৃথিবীর মানে এই গ্রহের মাটি দিয়ে কোন প্রাণি সৃষ্টি করা যাবে না।আমরা দেবতা নস্তু-নপাস্তুকে দিয়ে চেষ্টা করে দেখছি।তাতারা রাবুগা বললেন,প্রধান পরামর্শ দাতা মিদ্দি সুষুমি দেবীকে ডাক,সে কী বলে।


মিদ্দি সুষুমিকে ডাকা হলো।সুষুমি দেবী এসে তাতারা রাবুগাকে এই পরামর্শ দিলেন যে,অন্য গ্রহ থেকে মানে অন্য পৃথিবী থেকে মাটি এনে চেষ্টা করে দেখতে হবে।ডাকা হলো মনজার ও ডিনজার দেবতাকে অন্য গ্রহ হতে মাটি আনার জন্য সাহায্য করতে।দেবতা নস্তু নপাস্তু গেলেন মনজার ও ডিনজার দেবতাকে নিয়ে অন্য গ্রহের মাটি আনতে।
অন্য গ্রহের মাটি আনা হলো।শুরু হলো প্রাণি সৃষ্টির কাজ।সকল দেবতাই এই কাজে অংশ নিলো।যে যেমন পারে তৈরী করলো তাদের সাদৃশ্যেই।তাতারা রাবুগা এসে মাটি তৈরি প্রাণির দেহে ফুঁ দিয়ে জীবন দান করলেন।প্রাণ পেল কিন্তুু প্রাণিগুলি নড়ে না চড়ে না।তারা মাটিতে শিকড়ে গজিয়ে মাটি আকড়ে ধরে থাকলো।পরে পাতা হলো,ডাল পালা হলো।সৃষ্টি হলো পৃথিবীর বুকে সকল প্রকার গাছ গাছালীর।


দেবতা মিদ্দে ডিনজার তার পিঠে লেগে থাকা মাটি দিয়ে যে প্রাণি তৈরি করলো তা হলো সাম জাঙ্গি"জীবন বৃক্ষ "আর দেবতা মিদ্দি মনজার তার পিঠে লেগে থাকা মাটি দিয়ে যে প্রাণি তৈরি করলো তা হলো সাম গিসিক"জ্ঞান বৃক্ষ"।

আবার পরামর্শ সভা বসলো।প্রধান পরামর্শ দাতা সুষুমি দেবী এবারো আর এক অন্যগ্রহ থেকে মাটি এনে প্রাণি সৃষ্টির পরামর্শ দিলেন।আবার নস্তু নপাস্তু দেবতা গেলেন অন্যগ্রহে ডিনজার ও মনজার দেবতাকে নিয়ে মাটি আনতে।আনা হলো মাটি।চললো আবার প্রাণি সৃষ্টির কাজ।এবার তাতারা রাবুগা দেবতাদেরকে বললেন তৈরির সময় সবাই জোড়া জোড়া মানে পুরুষ ও নারী মিলে তৈরি করতে।


এবারে সৃষ্টির কাজে বাঁধা দেবার জন্য শয়তান আজাজু অৎপেতে রইলো।জোড়া জোড়া প্রাণি তৈরি শেষে যেই দেবতারা একটু আড়াল হলো অমনি আজাজু মাটির প্রাণিগুলিকে ভেঙে ফেলতে আরম্ভ করলো।দেবতা গয়রা দেখো তাড়াতাড়ি আজাজুকে তাড়িয়ে দিলো।বজ্রপাতের মাধ্যমে গয়রা আজাজুকে তাড়িয়েছিল বলেই গারোরা আজো বজ্রপাতের সময় শয়তান আজাজুকে মারছে বলে বিশ্বাস করে।


মাটির তৈরি প্রাণিগুলি শুকিয়ে গেলে তাতারা রাবুগা এসে ফুঁ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করে দিলেন।দেখা গেল সবই চারপায়ে প্রাণিতে পরিণত হয়েছে।তাদের মানে মিদ্দিদের সাদৃশ্যে আর হলো না।পশু প্রাণিতে পরিণত হয়েছে।তাদের মানে মিদ্দিদের সাদৃশ্যে আর হলো না।পশু প্রাণিতে পরিণত হলো আর আজাজু শয়তান যে সকল মাটির তৈরি প্রাণি ভেঙে ফেলেছিল সেগুলি পরিণত হলো সরিসৃপ প্রাণি রুপে।মিদ্দি ডিনজার ও মনজার পিঠে লেগে থাকা মাটি দিয়ে তৈরি হল যত পাখি।


তাতারা রাবুগা আবার চেষ্টা করতে বললেন।এবার আরেকটি অন্য গ্রহের(গিপপিন হাগিলসাক)মাটি এনে নিজেদের সাদৃশ্যে মাটির প্রাণি তৈরির চেষ্টা চললো।দেবতারা দেখলো মাটি দিয়ে প্রাণি তৈরি করলে কী লাভ!শয়তান আজাজু একটু ফাঁক পেলেই ভেঙে ফেলে।তাই মাটির প্রাণিটিকে রক্ষার জন্য সবাই বুদ্ধি পরামর্শ করে তাতারা রাবুগা দেবতাদের কাছে শয়তানকে মারার জন্য দু'জোড়া বিষাক্ত স্বাদন্ত ও শয়তানকে দেখার জন্য দু'জোড়া চোখ দিয়ে দিলেন।


দেবতারা এবার দুইটি গ্রহের মাটি দিয়ে তৈরি করলো এক জোড়া প্রাণি।মাথার মগজে দিল সদ্য আনা গ্রহের মাটি।মুখে দিল তাতারা রাবুগার দেওয়া স্বদন্ত ও চোখ বসালো যাথাস্হানে।দেবতারা পালা করে মাটির প্রাণিটিকে পাহাড়া দিলো।মাটির প্রাণিটি শুকিয়ে গেলে তাতারা রাবুগা ফুঁ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করলেন।সৃষ্টি হলো এক জোড়া প্রাণি।প্রাণির নাম দেবতারা রাখলেন "আচাক"।আচাক মানে মাটির তৈরি প্রাণির রক্ষাকারী। আ অর্থ মাটি, আর চাক অর্থ রক্ষা করা।দেবতারা আচাককে তাদের তৈরি জিনিসগুলোকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করার জন্য শিখালো।


এই দিকে দেবতা মনজার ও ডিনজার অন্য গ্রহের মাটি বার বার পিঠে বহণ করে আনাতে তাদের দেহ পাথরে পরিণত হলো।তারা আর দেবতাদের সঙ্গে দেবতাদের গ্রহে ফিরে যেতে পারলো না।আর আজো এই পৃথিবীতে জীবন্ত বড় পাথর ও জীবন্ত ছোট পাথর হয়ে আছে।তাই গারোরা কোনন বড় পাথরের উপর বসে না।


অন্য গ্রহের মাটি দিয়ে এবার দেবতারা মনোযোগ দিয়ে সুন্দর করে নিজেদের মতো করে তৈরি করলো জোড়ায় জোড়ায় প্রাণি। দেবতারা আচাক প্রাণিকে পাহাড়ায় রেখে গেল।শয়তান আজাজু দল বেঁধে এলো মাটির তৈরি প্রাণিগুলোকে ধ্বংস করতে।কিন্তুু আচাক(কুকুর)বিশেষ ধরণের চোখ থাকায় অদৃশ্য শয়তানকে দেখে ফেলে। আচাক একটা আজাজুকে কামড়ে দিল।আর আজাজু সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল। তাই দেখে অন্যন্য আজাজুরা আর সাহস হলো না মাটির তৈরি প্রাণিগুলোকে ভাঙাতে।আচাকের জন্য রক্ষা পেল সমস্ত মাটির তৈরি প্রাণি।তাতারা রাবুগা এসে ফুঁ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করলেন।সৃষ্টি হলো দু'পায়ে প্রাণির।এবার মিদ্দিদের মানে দেবতাদের সাদৃশ্যেই সৃষ্টি হলো প্রাণির। নানান দেবতাদের তৈরি বলে এই প্রাণিটিও নানান ধরণের নানান জাতের হলো।মিদ্দিদের সাদৃশ্য বলে নামও রাখা হলো মান্দে।মান্দে মানে মানুষ। মিদ্দে ও মান্দে,মানে দেবতা ও মানুষ।


মাটির তৈরি মানুষকে কুকুর সৃষ্টির প্রথম থেকেই পাহাড়া দিয়ে আসছে।গারোদের বিশ্বাস আজও কুকুর মানুষকে শয়তানের হাত থেকো রক্ষা করে।আচাকের(কুকুরের)মগজে অন্য গ্রহের (যে গ্রহের মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে)মাটি হওয়ায় আচাক অন্যন্য পশুদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। মানুষের মরণের পরেও আচাক  মানুষের আত্নাকে পরপারের পথ দেখাতে পারে বলেও গারোদের বিশ্বাস।


এই হলো সুনি সং এলাকার(বর্তমান সুসং)সিমসাং নদীর (সোমেশ্বরী)অঞ্চলের গারোদের মানুষ সৃষ্টির রহস্য।

(কপি)
গারো লোককাহিনী

ইগ্নাসিউস দাওয়া

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.