করোনাকালে তরুণ আদিবাসীদের ভাবনা।।পর্ব-৩।।
করোনাকালে তরুণ আদিবাসীদের ভাবনা।।পর্ব-৩।।
ছবি:সংগৃহীত। |
১.পৃথিবীতে যে মহামারি চলছে দিন কে দিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, পরিস্থিতি দিন কে দিন অবনতি হচ্ছে।বিশেষ করে বাংলাদেশে পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়।করোনা (covid 19) এর ফলে মানুষদের জীবন যাত্রার মান ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে/করছে।আদিবাসীদের অবস্থাতো আরো খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে।বাংলাদেশে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস।বিভিন্ন পেশায় জড়িত আদিবাসীরা।পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের অবস্থা অতি শোচনীয়।সমতলের গারো জনগোষ্ঠীর কথা যদি বলি। অধিকাংশ গারো ছেলে মেয়েরা ঢাকায় বা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পেশায় চাকরি করতো।কিন্তু করোনা(covid 19) এর কারণে যারা চাকরিজীবি তাদের চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।আবার অনেকে বেতন অর্ধেক পাচ্ছে আবার পাচ্ছেনা।অধিকাংশ গারো ছেলেরা সেলুন,নিরাপত্তা কর্মী এবং ড্রাইভার প্রভৃতি জায়গায় কাজ করতো এবং মেয়েরা পার্লারে কাজ করতো।যাদের নিজস্ব পার্লার ছিলো এবং পার্লারে কাজ করতো তাদের অবস্থা অনেক খারাপ।অনেকের ইনকাম নেই আবার যাদের নিজস্ব পার্লার আছে তাদের অনেকের বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ইনকাম না থাকার কারণে অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে না পেরে বাসা ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছে।আবার গ্রামে এসে খাদ্য সংকটে ভুগছে।এমন অবস্থায় জীবনের তাগিদে অনেকে দিন মজুরির কাজ করছে।আবার যাদের চাকরির বেতন দিয়ে গ্রামের মা বাবার এবং পরিবার চলতো বর্তমান অবস্থায় চাকরির বেতন না পাওয়ার কারণে সেই পরিবার গুলোর অবস্থা শোচনীয়। এমন পরিবার গুণে শেষ করা যাবেনা।আদিবাসীরা ভালো নেই।জীবন বাঁচাতে কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
২.এমন অবস্থায় আদিবাসীদের বিকল্প চিন্তা-ভাবন করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।তরুন ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ।এই সময়ে অনেকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।এই অবসর সময়ে তরুণদের যে যার প্রতিভা তা বিকশিত করার সময় এসেগেছে।প্রথমে নিজের দূর্বল বিষয়গুলো মেকআপ করা দরকার।নিজের জন্য আলাদা ভাবে সময় বের করা উচিত। কারণ নিজের যদি কিছু না থাকে তাহলে জাতির জন্য কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছুই করা যাবেনা।তাই আগে নিজের প্রতিভা বিকশিত করতে হবে। নিজের অবস্থানটা শক্ত করতে হবে।এবং ভাবতে হবে আমার/আপনার দ্বারা কী হবে!কী সম্ভব!! বা আপনি কোন কাজে পারদর্শী এবং আপনার দ্বারা কী সম্ভব সেটা নিজেকে'ই জানতে হবে। তরুণদের জাতির জন্য ভাবনাটা জরুরি বলে মনে করি।ভবিষ্যৎতে তরুণ'রা জাতিকে নিয়ন্ত্রন করবে।তাই নিজেদের সেই ভাবেই গড়ে তুলতে হবে। যারা সমাজের মানুষদের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আছে তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে সমাজের জন্য কাজ করা উচিত । বিশেষ করে আমাদের অর্থনৈতিক দিকটা কী ভাবে পরিবর্তন করা যায়,কী ভাবে বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিজের জাতিকে পরিবর্তনে সম্ভাব্য সঠিক সমাধানের পথ বের করা যায়,কী ভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়,কী ভাবে ভিত্তিটা শক্ত করা যায়। সে ধরনের চিন্তা ভাবনা করতে হবে।তবে তরুণদের চিন্তার শক্তিই মুখ্য হিসাবে কাজ করে।কারণ আমাদের তরুণ'রা সে-ই ভাবে চিন্তা করতে পারে নাই/শিখে নাই।আরো বহুপথ যেতে হবে।
৩.অনেক তরুণ'রা আছে যারা চাকরি বদলে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা ব্যক্ত করে/করেছে.)। কিন্তু পরিবারের সেই ধরনের সাপোর্ট না পাওয়ার কারনে এবং অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তা স্বপ্নই থেকে যায়।আর একটি সমস্যা হলো গারো অধ্যুষিত এলাকায় অধিকাংশ জমি মহাজনের কাছে বন্দক,লিজ দেওয়া।সেই জমি গুলো যদি বন্দক/লিজ না দিয়ে নিজে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিষরে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করা যেতো তাহলে পরিবারের সমস্যাগুরো দূর করা যেতো এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া যেতো।
সম্ভবনার পথ আমরা নিজেরাই পথ বন্ধ করছি।নিজেদের হাত পা নিজেরাই বেঁধে রাখছি।
৪.আবার অনেকের ইচ্ছা বিসিএস ক্যাডার হওয়া, ভালো সরকারী চাকরি করা,ব্যাংকে জব করা ইত্যাদি। এই ইচ্ছাগুলো পূরর্ণ করতে হলে এখনি সময় বাড়িতে বসে প্রস্তুতি নেওয়া,নিজেকে জ্বালিয়ে নেওয়া।
৫.রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গারো অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে একটা জিনিস লক্ষ করলাম নিজে নিজেদের মধ্যে বন্ডিং জিনিসটা অনেকটাই কম।এই এক -দুই মাসের মধ্যে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দেখতে পেরেছি নিজেদের মধ্যে বন্ডিং না থাকার কারণে অনেক সমস্যাই পড়তে হয়েছে।এছাড়াও সব সময় আদিবাসীরা অবহেলিত। তাই নিজেদের রাজনৈতিক দিক দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।নিজের অধিকার সম্পকে জানতে হবে এবং জাতির রক্ষার্থে সারা জীবন লড়াই করে যেতে হবে।তাই আমাদেরকে সেই ভাবেই গড়ে তুলতে হবে।
অবশেষে বলতে চাই এই করোনাকালীন সময়ে সবাই সাবধানে থাকবেন এবং সকলকে সচেতনতা গড়ে তুলবেন।
শোভন ম্রং(গারো)
নিউ মডেল কলেজ,ঢাকা।
No comments