করোনাকালে তরুণ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভাবনা।।পর্ব-৬।।

করোনাকালে তরুণ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভাবনা।।পর্ব-৬।।



ছবি-সংগৃহীত। 

এক


হঠাৎ করেই দেখা ভূটিয়া বাজারে মধুপুরের গারো আদিবাসী নারীদের সংগঠন "আচিক মিচিক সোসাইটি"-র সভানেত্রী শ্রদ্ধেয়া সুলেখা ম্রং দিদির সাথে। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন? বললেন যে, ভালো আছেন।এইসব কথা বার্তার ফাঁকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দু'জনের মধ্যে কিছু আলাপচারিতা হলো। তিনি প্রায়ই তরুণদের সাহস ও উদ্দীপনার কথা বলে থাকেন। বট বৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে তরুণদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পথ দেখান ও জাতির জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগান। উনার সাথে ঢাকায় প্রায় দেখা হতো বিভিন্ন সভা সেমিনারে তখনোও খুব অল্প সময়ের মধ্যে জাতিকে নিয়ে আলাপচারিতা হতো। বর্তমান পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। যদিও করোনার আক্রমণে সারা পৃথিবীর স্থবিরতায় বিরাজমান।  তিনি আমাকে বুঝাতে চেয়েছেন পৃথিবীর প্রকৃতি কুলের স্বাভাবিকতাকে। একদিক থেকে করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রকৃতি সুন্দর হচ্ছে। আর অনেকেই ঢাকা থেকে এসে পরিবারের সাথে সুন্দর  সময় পার করছে। পরিবারের মধ্যে সুন্দর ও শান্তি বিরাজ করছে। অন্যদিকে চিন্তা করলে যাদের পরিবার একজনের আয়ের উপর নির্ভরশীল সে পরিবার বর্তমানে বিপাকে পড়েছে। অনেকেই ঢাকায় সামান্য চাকরি করে পরিবারকে যথাসম্ভব পরিচালনা করত সেটির আর সম্ভব হচ্ছেনা চাকরি থেকে ছাঁটাই ও সাময়িক সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হওয়ার কারণে। তবে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে আলাদা। 

দুই


প্রায় গারো নারীরা পার্লারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তাদের আয় দিয়েই পরিবার চলতো। এখন সে-সব নারীরা গ্রামে দিন মজুরি কাজ করে পরিবার চালাচ্ছে। ঢাকার কাজের পরিবেশ এবং গ্রামের দিন মজুরির কাজ অনেকটাই আলাদা। তাই সে-সব নারীদের দিন মজুরি কাজটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।  শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই কষ্টসাধ্য নয়, পুরুষদেরও কাজ করা খুবই কঠিন। অনেকের দিন মজুরি দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছেনা।  না পারতে অনেকেই কলা বাগানে, আনারস বাগানে কাজ করে পরিবারের খরচ ব্যয় করছে। তবুও মানুষ সুখে দিন পার করতে চাই আর পরিবারকে সুখে রাখতে চাই।

তিন


 যাই হোক,এইবার আসি তরুণ হিসেবে এই সময়ে চিন্তা-ভাবনা আর করণীয়ঃ
আমি একজন তরুণ হিসেবেই কিছু কথা সহভাগিতা করতে চাই। তরুণ বা যুবক হিসেবে আমরা আমরা অনেকেই পড়াশুনা করছি। আর ছাত্র হিসেবে আমাদের এখন অঢেল সময় পাচ্ছি নিজের, পরিবারের আর সমাজের জন্য কিছু করার। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আর পড়াশোনার কোন চাপ নেই আমাদের। এই সময় নিজেকে গড়ে তোলার মোক্ষম সময় বলে মনে করি। নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরার সময়। নিজেকে জানার নিজেকে তুলে ধরার সময়। জাতির জন্য নিজেকে তৈরি করার সময়। সে-ই পরিপ্রেক্ষিতেই পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য আমার কিছু চিন্তাভাবনা।
আমি আমার ভাবনা ও কার্যক্রম থেকেই তরুণ সমাজের জন্য কিছু ধারণা দিতে চাই।

★ প্রথমেই আমাদেরকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। দক্ষতা অর্জন ছাড়া আমাদের তরুণদের বিকল্প পথ নেই। আমরা যে যে ক্ষেত্রে পারদর্শী সেখানেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল হবে এবং জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তাই সব তরুণদের কাছে বিশেষ আহ্বান জানাই, যারা যে ক্ষেত্রে পারদর্শী তারা অবশ্য সেক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে ফেল এই সময়টাতে।

★ আমাদের সময় এখন, পরিবারকে সুন্দর সময় দেওয়ার। পরিবারে সবার সাথে দীর্ঘ সময় পার করার সুন্দর সুযোগ।  তাই পরিবারকে নিয়েও ভাবতে হবে আমাদের। পরিবারের সাথে থেকে আমরা বুঝতে পারছি মাতা-পিতা কিভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংসার পরিচালনা করে। তাই অধিকাংশ তরুণ বুঝতে ও জানতে শিখছে পরিবারের কর্তা আমাদের জন্য কত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে পাঠায়। তাই পরিবারের জন্য আমরা এই অলস সময়ে কিছু করতে পারি। যেমন- পতিত জায়গায় গাছ লাগানো, শাকসবজি ও বিভিন্ন ধরণের আবাদি ফসল রোপণ করা। এতে করে সংসারের খাদ্যশস্য অভাব মিটবে  এবং পরিবারের কষ্ট হালকা হলেও লাঘব হবে। এছাড়াও পরিবারের বিভিন্ন কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করতে পারব আমরা। 

★ সমাজ বা জাতির জন্যও আমরা এই সময়ে চিন্তাভবনা ও কাজ করতে পারি। বৃহৎ আকারে আমরা এখন করতে পারবনা তবে গ্রামের জন্য তো কিছু করার আছে আমাদের। সে দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা শিক্ষিত তরুণ সমাজ হিসেবে সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারি।  সমাজের মানুষদের বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্গানাইজেশনের Covid-19 স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জন্য দিকনির্দেশনা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছোট পরিসরে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করতে পারি৷ অধিকাংশ গ্রামের গ্রাম ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন রয়েছে। সে সংগঠনের মাধ্যমে আমরা এই সময় গ্রাম উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করতে পারি। সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারি গ্রামের সবাই মিলে। এতে করে আমাদের প্রতিটি গ্রাম উন্নয়ন হবে আর সমাজের জন্য আমরা কিছু করে যাওয়ার সুযোগ পাই। সে সুযোগ এবং সময়কে কাজে লাগিয়ে আমরা নিজেরা যেমন দক্ষতা অর্জন করি তেমনি আমাদের পরিবার,  সমাজ ও জাতির উন্নয়ন হবে বলে মনি করি। শুধু আমাদের মনের মধ্যে সদিচ্ছার প্রয়োজন। 

চাঁর



পরিশেষে নেলসন ম্যান্ডেলার কথা বলতে চাই,
"দেরিতে হবে কিন্তু ঠিকই হবে তুমি যা চাও তাই হবে,
মনে রেখো তোমার সময়টা খারাপ তোমার জীবনটা নয়। 
শুধু অপেক্ষা কর সময় সবকিছু ফিরিয়ে দিবে।" 

জুয়েল হাউই জাজ্রেং(গারো)
নিউ মডেল কলেজ,ঢাকা।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.