সাক্ষাৎকার;তরুণ উদ্যোক্তা সন্দীপ রিছিল।।জাডিল মৃ।।
এই করোনাকালীন সময়ে অনলাইনের মাধ্যমেই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জনপ্রিয় জাতীয় শিল্প উদ্যোক্তা ও গারো-সহ আদিবাসীদের অনুপ্রেরণাকারী সন্দীপ রিছিল।যিনি অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেছিলেন এখন তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন বিধায় আজকে শতশত মানুষকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাহায্য সহযোগীতা করছেন।এছাড়াও বিভিন্ন প্রজেক্ট এর সাথে জড়িত আছেন। তাছাড়া তিনি আরেক'টি কাজ করছেন,Direct action everywhere (Animal Liberation) এর একজন সহযোদ্ধা হয়েও কাজ করছেন।তাঁর নিজের দোকান রয়েছে। সে-ই সাথে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে নানা ভাবে কাজ করছেন মানুষ কে উৎসাহ দিচ্ছেন।আজকে তিনি নিজের জীবনবোধ সম্পর্কে, কাজ সম্পর্কে,বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এবং আরো নানাবিধ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাডিল মৃ...
ছবি-সংগৃহীত। |
জাডিল মৃ: এই সংকট কালীন মুহূর্তে জীবনযুদ্ধের সময়টা কেমন যাচ্ছে?
সন্দীপ রিছিল: বর্তমান মহামারী পুরো বিশ্বকেই যেমন সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে আমরাও কিছু না কিছু সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু জীবনযুদ্ধের দিক থেকে আমার জন্য স্বাভাবিক।
জাডিল:আপনার মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে চাই?
সন্দীপ: আমি গত ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় শিল্প উদোক্তা হিসেবে মাশরুমের সাথে পথচলা শুরু করি। যা চলমান.... ইতিমধ্যে আমার নিজের বলার মতো একটি গল্প তৈরী হয়েছে। যে গল্পের শিরোনামে রয়েছে "জয়রামকুড়া মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্প" যে প্রকল্প সকলের কাছে এখন বেশ পরিচিত। আমরা বিনামূল্যে মাশরুম প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই নতুন প্রকল্পের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ কাজ ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আমি আশাবাদী। এবং আমার এ প্রকল্পের তত্বাবধানে আরো ২৯ টি প্রকল্প ছিলো কিন্তু ৩ টি প্রকল্প আমরা প্রজেক্টের স্বার্থে সমস্ত লেনাদেনা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি।
(জোন- ধোবাউড়া, নালিতাবাড়ী, মধুপুর) এবং বর্তমানে ২৬ টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। মাশরুমের A To Z সবকিছুই জয়রামকুড়ায়।
মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্প সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এবং হাতে আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ মৌখিক ভাবে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা কাজগুলো শুরু করবো। চুক্তিবদ্ধ তালিকায় এ মুহূর্তে যে এলাকা রয়েছে... ১। সিলেট ২। চন্দ্রকোনা ৩। বিরিশিরি ও ৪ নং টি কোন এলাকায় তা এখনো পরিষ্কার না, ব্রাদার তুহিন বাজী তবে উনার এলাকা ধোবাউড়া। ৫। হালুয়াঘাট "সবুজ পল্লী" প্রতিষ্ঠান এর প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে মাশরুম কালচার হাউস শুরু করার জন্য সবুজ পল্লীর প্রেসিডেন্ট এর সাথে আমাদের সাময়িক চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।
কোন কোন জাতের মাশরুম চাষ করছেনঃ আমরা বর্তমানে ওয়েস্টার, Po2, Po10, Ws, Ganoderma Lucidum প্রজাতির মাশরুম চাষ করছি।
জাডিল : মাশরুমের উপকারীতা এবং চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাই।আপনি কতদিন ধরে চাষ করছেন।
সন্দীপ: মাশরুমের উপকারিতা অপরিসীম। ঔষধি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর মাশরুমকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা King of herbs নামে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ মাশরুম মানবদেহের সকল বিষাক্ততা সমূহ দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে। বর্তমান মহামারী থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার কথা বার বার বলে যাচ্ছেন, ইমিউনিটি সিস্টেম- ইমিউনিটি সিস্টেম অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি তাঁরা এ মহামারী তে ততটাই শক্তিশালী ও নিরাপদ। সো, অবশ্যই আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় মাশরুমকে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।
চাহিদাঃ মাশরুম আমাদের দেশের অসীম সম্ভাবনাময় একটি ফসল। মাশরুম সারাবছর চাষ করা যায়। অল্প খরচে অধিক ফলনের ফলে মাশরুম খুবই লাভজনক।
মাশরুমের চাহিদা আমাদের দেশে এখনো সর্বোপরি না হলেও সচেতন মহলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সচেতন।
কতদিন যাবৎ মাশরুম চাষ করছেনঃ আমি মাশরুম চাষ করছি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখন অবধি ২০২০ চলমান।
জাডিল:মাশরুম চাষ ছাড়াও আরো কী কী করছেন। এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
সন্দীপ: আমি একজন জাতীয় শিল্প উদোক্তা। এবং একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। Dxn International Direct selling business. (Position: Star Agent) যেখানে গ্যানোডার্মা লুসিডাম লাল মাশরুমের প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল সকল পণ্য যেমন পেস্ট, সাবান, সেম্পু, তেল, লোশন, কফি, ক্যামিকেল মুক্ত সকল কসমেটিকস, হেলথ্ কেয়ার সহ মানবদেহের যেকোনো কঠিন সমস্যার সমাধানে Dxn ফুড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে আমি কাজ করছি। পাশাপাশি আমার মুডি ও কসমেটিকস এর দোকানো রয়েছে।
এবং IVU International vegetarian Union এর একজন রাইটার ও প্রশিক্ষক।
এবং International meditation team এর একজন শিক্ষক।
এছাড়াও আরো বিশেষ কিছু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি।
জাডিল:করোনা কেটে গেলে সামনে নতুন কোন পরিকল্পনা করছেন কিনা?
সন্দীপ: বর্তমান মহামারীর স্থায়িত্ব দীর্ঘ সময়। এ মহামারী কেটে যাবার অপেক্ষা করছি না বরং এগিয়ে যেতে চাইছি। কারণ এ মহামারী কেটে যাবার অপেক্ষা করলে বিভিন্ন অভাব অনটন, সমস্যা ও সংকট সহ ক্ষুধার মহামারী শুরু হয়ে যাবে। সো, থেমে না গিয়ে সামাজিক দূরত্ব ও সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছি।
পরিকল্পনাঃ হ্যাঁ, আমি স্বপ্ন দেখি পৃথিবীর সকল প্রাণীর স্থান গুলো নিরাপদ ও বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠুক। আর শান্তির বার্তা নিয়ে প্রকৃতির মাঝে মানুষ, পশুপাখি, বন, পাহাড় নিরাপদে রাখার দায়িত্বে আদিবাসীরা সর্বদা সজাগ ও দূরদৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে চলুক।
জাডিল : কেন পুষ্টিকর শাক-সবজি, ফলমূল চাষ করা ও খাওয়া উচিত। এবং সারবিষ কেন পরিহার করবো?
সন্দীপ: মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষয় হলো সুস্বাস্থ্য থাকা। কারণ স্বাস্থ্য ই সকল সুখের মূল। বহু লোকের প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অসুখী কারণ ঐ ব্যক্তি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নয়। তাই আমাদের অবশ্যই পুষ্টিকর শাকসবজি, ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। এবং রাসায়নিক সার পরিহার করে প্রাকৃতিক ও জৈব সার ব্যবহার করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। কেননা বিষ তো বিষাক্ততাই পরিপূর্ণ এখান থেকে ভালো কি আশা করা যেতে পারে ইহা কি মানবজাতির জন্য বিপদজনক নয়!
জাডিল : মাশরুম শিক্ষার্থীদের ইনকামের পথ হতে পারে কিনা?
সন্দীপ: মাশরুম নিসন্দেহে খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। একদিকে যেমন পরিবারকে সুস্থ সুন্দর রাখা যায় অন্য দিকে সাবলীলভাবে সাবলম্বীও হওয়া যায়। এবং বহু মানুষের কর্মসংস্থানো তৈরী করা যায়। আমি মাশরুম চাষ করে আমার বাবার একটি স্বপ্ন পূরর্ণ করেছি। আমার বাবার জন্য CDI জাপানি একটি গাড়ি আমি কিনে দিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের জন্য মাশরুম চাষ আদর্শ একটি কাজ হতে পারে। কারণ সামান্য পুঁজি নিয়েই মাশরুম চাষ শুরু করা যায়।
আপনি কত টাকা পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেনঃ আমি সর্বপ্রথম মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে ২২ টি স্পন নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে মাশরুম চাষ শুরু করি। বর্তমানে লাখ-লাখ টাকার মালামাল বিনিয়োগ করছি।
জাডিল : যারা নতুন মাশরুম চাষ করতে চাই। তাঁদের জন্য কি পরামর্শ থাকবে এবং কোথায় মাশরুমের চারা পাওয়া যাবে?
সন্দীপ: স্বপ্ন দেখুন....সাহস করুন.... শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই আসবে।
(শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার)
মাশরুম শিল্পে যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদের স্বাগত জানাই। মাশরুম নিয়ে যারা কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে যারা শুরু করেছে তাদের কিছু বিষয় মনে গেঁটে রাখতে পারলেই সফলতা নিশ্চিত। কারণ মাশরুম হলো স্বচ্ছতার প্রতীক। মাশরুম যেমন স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ ঠিক তেমনি যারা এ পেশায় ধৈর্যের সহিত স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারবে তাদের স্বচ্ছতার প্রকাশ ঘটাবে এই মাশরুম।
মাশরুমের সকল সামগ্রীঃ মাশরুমের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে যেমন, টিস্যু কালচার, মাদার কালচার, সাব মাদার, অনেকে যেটা বীজ বলে থাকে প্রকৃত অর্থে মাশরুম শিল্পে এটাকে বলা হয় বানিজ্যিক স্পন।
যাদের স্পন, কিম্বা মাদার, কিম্বা মাশরুমের যে সকল সামগ্রিক প্রয়োজন আপনারা যোগাযোগের মাধ্যমে জয়রামকুড়া মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নিতে পারবেন।
জাডিল:ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিয়েছেন। সেই জন্য আপনাকে অসংখ্যক ধন্যবাদ।
সন্দীপ:আপনার মূল্যবান সময় ও শ্রম দেবার জন্য আপনাদের প্রতিও রইলো কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা সহ নিরন্তর শুভকামনা।
No comments