পানির জন্য হাহাকার


পানির জন্য হাহাকার

Jadil Mri
তরুণ লেখক ও ব্লগার 


কাপ্তাই লেক, ২০১৯




এই বিশ্বায়নেরর যুগে আমরা যত আধুনিক হচ্ছি প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ তত বিপন্ন হচ্ছে। এই বিপর্যয় যদি রুখতে না পারি, যখন এক ফোঁটা পানির জন্য চিৎকার করবো তখন কোন লাভ হবে কি?খাবার পানি শূণ্যতা মোটা দাগে সংকট দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশেও যেমন এর প্রভাব পড়ছে তেমনি সারা বিশ্বেও এর ব্যতিক্রম নয়।বিশুদ্ধ পানির জন্য আমাদের সব সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়,আমাদের দেশে বড় শহর গুলোতে তা বেশি কার্যকর। যে পরিমাণ পানি দূষিত হচ্ছে সেই পরিমাণে আমরা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছি না।পানির অভাবে শত শত নদী, খাল,বিল,পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। যতটুকু আছে তাও বিভিন্ন কলকারখানা আবর্জনা, ময়লা, কীটনাশক, প্যালিথিন,প্লাস্টিক, ইত্যাদি ফেলে জলজ প্রাণীরর যে প্রাণস্পন্দন তা বিপন্ন করে তুলছি।যেমন আমরা প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করছি তেমনি একদিন প্রকৃতি আমাদের ধ্বংস করবে,যা আর বেশি দূরে নয়।


দিন কে দিন তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মনে করি, এইটা  স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবেই।তাপমাত্রারর জন্য জীবন কেমন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কেন?আমাদের কারনেই কিন্তুু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই কথা আমরা কত জননি বা জানি।বরফ গলে যাচ্ছে,সমুদ্রেরর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে নিচু এলাকা আস্তে আস্তে গ্রাস করছে,সুপেয় পানী সংকট দেখা দিচ্ছে।আমরা যদি এখনি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে না পারি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে শহরে যেমন সুপেয় পানির সংকট চরম আকার ধারন করে, তেমনি গ্রামে গ্রামে তা ছড়িয়ে যাবে।


আমাদের গ্রামের কথায় যদি ধরি,আমাদের গ্রামের মাঝখান দিয়ে একটা নদী বা খাল বয়েগেছে।ছোটবেলায় কত সাঁতার কাঁটতাম।সকাল থেকে নিয়ে বিকাল পর্যন্ত গোসল করতাম, মাছ ধরতাম।কিন্তুু এখন দেখি  পানি থাকে না, মাছ তো পরের আলাপ।খাল গুলো কেমন যেন সরু হয়েগেছে,আমাদের মতো গোসল করতে ছোট বাচ্চদের এখন দেখি না।পানি না থাকলে গোসল করবে কিভাবে মাছ থাকবে কিভাবে? খালের পাশে যদি ধান ক্ষেত থাকে, কিন্তুু ধানের জন্যই মেশিন বসাতে হয় তাহলে বুঝেন, অবস্থা! খালের পাশে ধান ক্ষেত হওয়া সত্ত্বেও যদি ভূগর্ভস্থ থেকে পানি টান দিতে হয়, তাহলে এমনিতেই বুঝা যায়, পানির কি রকম সংকট চলছে।সামান্য টিউবওয়েলর জন্য এখন হাজার ফুট পাইপ বসাতে হয়, অনেক সময় পানির স্তর পাওয়া যায় না।বৃষ্টি কম হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানি কম জমছে।পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তনেরর ফলে সমস্যা খারাপের দিকে যাচ্ছে।


পানি ছাড়া আমাদের জীবন অচল।আমরা সবাই ছোটবেলায় পড়তাম,"পানির অপর নাম জীবন"।ঠিক তাই,পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না।পানি না থাকলে ভোগান্তি কতটুকু হয় সেটা আসলে যখন পানির হাহাকার দেখা দেয় তখন অনুধাবন করা যায়।


আশঙ্কা করা হচ্ছে,  দু'বছরের মধ্যে ভারতের ২১ টি নগরীতে ভূগর্ভস্থের পানি ফুরিয়ে যাবে।তেমনি প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৫০ কোটি মানুষ পানির সংকটে ভোগে।সারা বিশ্বে ভূগর্ভস্থের পানির ৫০ ভাগ সুপেয় হিসাবে পান করা হয় এবং ৪০ ভাগ কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়।গবেষণায় বলছে যে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রার জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে।যদি এই রকম ভাবে চলতে থাকে তাহলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪০ ভাগ পানি সংকট দেখা দিবে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থা একটু ভালো থাকলেও, এই অবস্থায় যদি সচেতন হতে না পারি বা কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।তাহলে আমাদের অবস্থাও আফ্রিকা দেশের মতো হবে।যত দ্রুত সম্ভব পানি নিয়ে ভাবতে হবে এবং এই সংকট কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটা নিয়ে গবেষণা, সেমিনার, সচেতনমূলক প্রোগ্রাম করা যেতে পারে।এখন থেকে যদি কোন ব্যবস্থা নিতে না পারি তাহলে  অদূর ভবিষ্যতে আমরা  খাদের কিনারায় গিয়ে পরবো।

No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.