আমার প্রিয় স্থান," মামা এবং জোন"
আমার প্রিয় স্থান," মামা এবং জোন"
Jadil Mri(জাডিল মৃ)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
তরুণ লেখক এবং ব্লগার
মামার সাথে |
ক্যাম্পাসের যে জায়গাটাই সবচেয়ে বেশি বসি, ব্যক্তিগত ভাবে আমার অনেক পছন্দের জায়গা সেটা হচ্ছে" জোন"।প্রথম প্রথম লাইব্রেরী খুব যাওয়া আসা হতো,হুদায় লাইব্রেরী গিয়ে বই খুঁজে খুঁজে সময় পার করতাম।বইয়ের ক্ষেত্রে আমার আবার পছন্দের ধরন একটু ভিন্ন।যে বই গুলো মনে মনে খুঁজতাম বা পড়তে চাইতাম সেইগুলো নাই বললেই চলে।তাই আমার আর লাইব্রেরী যাওয়া হয় না, আমার মনে হয় লাইব্রেরী আমাকে টানতে ব্যর্থ হয়েছে।লাইব্রেরী হচ্ছে জ্ঞান আহরনের জায়গা কিন্তু যে জ্ঞান আমি চাই বা আমি মনে করি যে অমুক সমুক আমার দরকার তা পাই না, কিন্তুু তা আমি জোনে পাই, সেই ক্ষেত্রে তাই আমি জোনে বসে থাকি বেশি। যাই হোক সেসব কথা..
যে জায়গার কথা বলছিলাম আরিকি! প্রথম প্রথম জোনে আসা হতো না, বড় ভাইদের আসতে দেখে আমিও যাওয়া আসা শুরু করলাম। যখন দেখলাম বাও বালা মানে মামাটা অনেক ভালো আদর করে বেশি, প্রথমত বাকি খাইলেও সমস্যা নাই। তখন থেকে আর কোন সময় অন্য দোকানে যাওয়ার কথা চিন্তা বাদি দিলাম।দিনের প্রায় অর্ধেক সময় এখানে কেটে যায়।আন -অফিসিয়াল এর কথা যদি ধরি তাহলে এইটা হলো আদিবাসীদের অফিস ঘর।অফিস বলছি এই কারনে যে আদিবাসী বা আমাদের ক্ষেত্রে যদি কোন মিটিং বা আলোচনা বা আড্ডার জায়গা থাকে তাহলে একটাই সেটা হচ্ছে জোন।জোন ছাড়া কোন জায়গা কল্পনা করা যায় না।সারাদিন এখানে বসে থাকলে একজন না একজন আসবেই, একজনের সাথে কথা বলতে বলতে আরেক জন চলে আসে। এই আসা যাওয়ারর ফলে সারাদিন এমন করেই দিন কেটে যায়।আর সবাই অবগত থাকে বা জানে যে জোনে আসলে কারো না কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবেই, নিশ্চিয়তার যে ব্যাপারটা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
যদি কোন সময় জোন বন্ধ থাকে আমাদের খুব প্যারা যায়, চায়ের হাহাকারে অভুক্তে থাকতে হয়। কারন হাতে যদি টাকা না থাকে চা খাবো কোথায়, রুটি,কেক খাবো কোথায়,আর এমন কোন বসার জায়গা নেই যে একটু শান্তি আরামে আড্ডা দেওয়া যায়।এখানে বসেই চিন্তার পারদ জমা করি।চিন্তা করি আর চিন্তা করি লেখার চেষ্টা করি মাথায় আঘাত করি নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য।
যে মামার ছবি দেখতে পাচ্ছো এই হচ্ছে সবার প্রিয় আমার টুক্কু আমাদের মামা।মামাকে ভালোবাসি অনেক কারনে প্রথম কারন হচ্ছে সে আদিবাসীদের অনেক ভালোবাসে,আদিবাসীদের ক্ষেত্রে পজিটিভ, টাকা হাতে না থাকলেও চলে,সারাদিন বসে থাকা যায়,যতক্ষণ থাকি আদর করতেই থাকে,কোন প্যারা নাই,কথা বলার মাঝে কোন তিরস্কার বা কোটা দেওয়ার প্রবণতা নাই,নেগেটিভ চোখে দেখে না....ব্লা ব্লা ব্লা...।আমরাও মামার সাথে অনেক মজা করি যদি কোন প্রোগ্রাম থাকে বা কোন অনুষ্ঠান হয় তা সবকিছু মামার সাথে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করি না কারন মামা সহজে গ্রহণ করে বললে অংশগ্রহণ করতে বাধা নাই।
ক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধেক সময় এখানে কাটে সেহেতু ভবিষ্যতেও এখানে কাটবে বলে আমার বিশ্বাস,যত দিন পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছি না, আরিকি!যদিও আরো দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাসে থাকবো, তবুও স্মৃতি সংগ্রহে বা অনেক বছর পর স্মরণার্থে এইটা লিখছি।
আমি জানি কোন দিন একি জায়গায় থাকবো না, একদিন না একদিন চলে যেতে হবে।আমার না খুব ভয় হয় জানতো,কেন না এই যে জোনে বসে চা খাচ্ছি সারাদিন বসে আছি আড্ডা দিচ্ছি বেহুদা বসে থাকি। এই যে সময় গুলো পার করছি হয়তো কোন দিন আর পাবো না, সেই জন্য আমার খুব ভয় হয়। না জানি দিনটা চলে এলো বুঝি,ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবার, আমি চাই সেই দিনটা অনেক পরে আসুক যেদিনের জন্য আমাকে মিস করতে হবে , আমি মিস করবো জোন,জোনের মামা, সাথে জ্ঞানের ভান্ডার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থীদের।
সবচেয়ে বেশি মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই জোনে যারা সব সময়ে কাস্টমার বা নিয়মিত গ্রাহক তারা প্রত্যেকে খুবই বুদ্ধিমান এবং প্রগতিশীল চিন্তা করে এমন মানুষ।আমার কাছে মনে হয়, যদি বিপ্লব বা এমন একটা কিছু বা পরিবর্তনের জায়গাটা যদি সৃষ্টি হয় বা ভবিষ্যতে হবে।তাহলে জোনের কোন বিকল্প নাই এবং প্রথমে জোন থেকেই সৃষ্টি হবে। এই কথা এই কারনে বলছি যে এর আগে কিছু কাজ এমনটা হয়েছে যা আগে কখনো হয়নি।
জোনের একটা ব্যাপার আছে, সেটা হলো মামার সপ্তাহিক ছুটি থাকে শনিবার।কোন মতে সে শনিবার দোকান খোলে না,আমরা এত বার বললাম যে শনিবারেও যেন খোলা থাকে।মামা কি শুনে আমাদের কথা?দোকান অফিসিয়াল ভাবে বন্ধ থাকে শনিবার।
এই আদিবাসী অফিস কবে না কবে বন্ধ হয়ে যায় কে জানে,যে ভাবে বড় বড় দোকান হচ্ছে নতুন নতুন মেস হচ্ছে, জায়গা জমির দাম বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে।
একটাই প্রার্থনা থাকবে আমাদের যাওয়ার আগে যেন বন্ধ না হয়।
No comments