আমার প্রিয় ম্যাডাম...প্রাইমারি স্কুল

আমার প্রিয় ম্যাডাম...প্রাইমারি স্কুল

Jadil Mri(জাডিল মৃ)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার 


ম্যাডামের সাথে




প্রাইমারি স্কুল থাকা কালে কোন স্যার বা ম্যাডামের প্রিয় ছাত্র ছিলাম কিনা, আমি জানি।তবে আমার কাছে মনে হয়, কোন স্যার বা ম্যাডামের প্রিয় ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কেন না, আমি কোন দিন ভালো রেজাল্ট করিনি, পড়াশুনা পারতাম বলে মনে পরে না,আর ক্লাশ রোল থাকতো একে  বারে সবার শেষে। বকা খাওয়া , শাস্তি খাওয়া,স্কুল পালানো,স্কুলে না যাওয়া,ক্লাশ ফাঁকি  সেই গুলো নিত্যদিনের ঘটনা ছিল।স্কুল আমার কাছে নরকের মতো মনে হতো,বার বার মনে হতো এই নরক থেকে কবে যে মুক্তি মিলবে।এই মুক্তির স্বাদ যে বড় কোন নরকের পতিত হওয়া, আগে কে জানতো?ছোটবেলার সুখের সময় এত যে মিস করবো আগে কি বুঝতাম !! যদি বুঝতাম আমি নরকেই থাকতে চাইতাম।




উপরে যে ম্যাডামের সাথে আমার ছবি আছে, সেই ম্যাডাম আমার কাছে ছিল খুবই প্রিয় ব্যক্তি, তেমনি মন থেকে শ্রদ্ধা করতাম এবং এখনো করি।ছোট বেলায় ম্যাডামকে যেমন দেখেছি এখনো তেমনি মনে হয়। অনেক বছর তো হয়ে গেল, কম করে হলেও দশ বছর তো হবেই যখন ম্যাডামে সান্নিধ্য ছেড়ে আসতে হয়েছিল। ম্যাডামের হাতে কত বার যে মার খেতে হয়েছে, শাস্তি পেতে হয়েছে যার কোন ইয়ত্তা নেই।কারন এই সব হিসাব রাখা যায় না,এক বার বা দুই বার হলে মনে রাখার মতো কাহিনী থাকতো। এত বার যে,  মনে রাখার মতো জায়গা নাই।



ম্যাডামেরর সামনে যাওয়ার সাহস হয় না, তার পরেও বুকে সাহস নিয়ে কিছু ছবি তুলেছি। ম্যাডামেরর সাথে কিছু স্মৃতি জমিয়ে রাখবো বলে।এই ছবিটি আমার প্রাইমারি স্কুলের মাঠে তোলা,যখন সংসদ সদস্য নির্বাচন হচ্ছিল তখন অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা হয়ে যায়।প্রথমে সাহস হয়নি, তার পর মনে হলো এই সুযোগ, সুযোগ হাতছাড়া হলে কবে না কবে পাবো তার কোন ঠিক নেই।তাই সাহস করে তুলে রেখেছিলাম।


ম্যাডামের সাথে একটু ছোট করে মনে রাখার মতো গল্প বলি...তিনি কোন কোন বিষয় পড়াতেন তা মনে নেই,তবে স্পষ্ট মনে আছে তিনি বাংলা পড়াতেন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে, কারক, সন্ধি,সমাস,বচন,বাক্য ইত্যাদি পড়াতেন।পড়াশুনার এত গুরুত্ব দিতাম না, ফলে প্রচুর বকাবকি করতো আর বলতো, "তোমরা আমার কথা মনে রাখবা, আমি যে কথা গুলো বলছি সেই কথা গুলো যে মূল্য এখন না বুঝলেও পরে ঠিকি বুঝবা,তখন আমার কথা গুলো স্মরণ করবা"।ম্যাডামেরর কথা ঠিক মনে পরেছিল যখন হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, J.S.C,  S.S.C,  H.S.C.,  বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা মানে প্রত্যেকটা পাবলিক পরীক্ষায় সাধারণ পরীক্ষায় বার বার মনে হয়েছে ম্যাডামের কথা।


এখনো মাঝে মাঝে ম্যাডামের কথা মনে পড়ে,অন্তর থেকে শ্রদ্ধা চলে আসে।ম্যাডাম কেমন আছে জানি না,ম্যাডামেরর সামনে যেতেও লজ্জাবোধ কাজ করে। কেন না, ম্যাডামের সামনে কোন মুখ নিয়ে যাবো, ম্যাডাম যে রকম ভাবে কষ্ট করে পড়াশুনা শিখিয়েছে, উনার কষ্টের মূল্য কতটুকু দিতে পেরেছি, জানি না। তবে আমার কাছে মনে হয়,যতটুকুই এখন করছি তা যথাযথ নয়।সেই জন্যই ভাবি,যখন একদিন একটা জায়গায় যাবো বুক ফুলিয়ে যেন যেতে পারি, সেটাই এখন স্বপ্ন।যদিও কষ্টের ঋণ শোধ করা যায় না,তবুও চেষ্টা করতে দোষ কি...এই আরিকি!



ম্যাডাম কে কখনো ভালোবাসি বা পছন্দ করি,এই কথা বলা হয়নি। কারন সেই সাহস আমার নেই,বলেছিলাম আগেই, ম্যাডামের শ্রমের মূল্য এখনো দিতে পারিনি।
আমার স্কুল পাশ করার পরেও ম্যাডাম অনেক বছর ছিলেন,তিনি ছিলেন স্কুলের হেড-মাস্টার,সবকিছুই তিনি নিখুঁত ভাবে স্কুল পরিচালনা করছেন।আমাদের সময়ে পড়াশুনা দিক থেকে স্কুল সুনামের সাথে ছিল, পড়াশুনার মান বলতে গেলে অসাধারণ ছিল। এখন কি অবস্থা বা মান কেমন সেটা বলতে পারবো না।  হয়তো আমার ছোট ভাই ও বোন উনার কাছে পড়ার সৌভাগ্যবান হয়েছে,আমার মতো।ম্যাডাম আমার কথা মনে রাখবে কিনা আমি জানি না। কারন এত জন ছাত্র ছাত্রী পড়িয়েছে, আর ম্যাডামের সাথে কোন যোগাযোগ নাই,মনে না থাকাতাই স্বাভাবিক।



ম্যাডামের দীর্ঘজীবী কামনা করি, আমি স্বপ্ন দেখি মিষ্টি নিয়ে কোন একদিন ম্যাডামেরর সামনে যাবো, যখন আমি প্রতিষ্ঠিত হবো কিংবা নিজের টাকায় মিষ্টি কিনতে পারবো।
ঈশ্বর ম্যাডামের প্রতি প্রচুর পরিমাণে আর্শীবাদ দান করুন।আমেন।





No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.