স্বাধীন গারো রাজ্যের স্বপ্ন স্রষ্টা


স্বাধীন গারো রাজ্যের স্বপ্ন স্রষ্টা
Ja'dil Mri (জা'ডিল মৃ)
তরুণ লেখক এবং ব্লগার

Garo student Union(GASU),ঢাকা মহানগর শাখার "জাসেঙা "ম্যাগাজিনের জন্য আদিবাসী দিবস ২০১৯, উপলক্ষে লেখা... 


ছবি:লেখক নিজে





আমরা গারো জাতি বিদ্রোহ জাতি হিসাবে পরিচিত,যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করতে কোন দিন পিছবা হয়নি।যদি ইতিহাস দেখি তাহলে দেখতে পাবো, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসকের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করেছি।আমরা জাতি হিসাবে খুব সহজ সরল এবং শান্তিপ্রিয়, কোন জাতির উপর কতৃত্ব কায়েম করা বা কোন জাতির উপর দমন নিপীড়ন বা শাসন করা, আমি আমাদের ইতিহাসে খুঁজে পাইনি।যতগুলো লেখা পড়েছি ও জানার সুযোগ হয়েছে, আমি জানতে পেরেছি আমাদের উপর যারা শাসন শোষণ নিপীড়ন চালাতো  তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ  হয়েছে।আমার জানার মধ্যে হয়তো ঘারতি থাকতে পারে নয়তোবা আমি জানি না,সেই বিষয়ে।



আমি এত বিস্তর আলোচনায় যাবো না,শুধু মাত্র একটি দিক বা গারো রাজ্যের স্বপ্ন স্রষ্টাকে নিয়ে আলোকপাত করতে চাই এবং তার সম্পর্কে হালকা ধারণা দিতে চাই।কেন না,আমরা অধিকাংশ গারো জাতি গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে; এই সব বিষয়ে জানা উচিত থাকলেও জানি না,অবশ্য এইটা বাস্তবতা।যাইহোক, যার কথা আমি এতক্ষণ ধরে বলতে চাইছিলাম উনার নাম হচ্ছে"ফা ছপাতি গারো",ছপাতির পরে কেন গারো আসলো বা কেন চাচচি (টাইটেল)নই,সেটা আমার বোধগম্য নয়।এমনো হতে পারে,যারা ইতিহাস সম্পর্কে বলেছে বা লিখেছে উনারা নামের শেষে" গারো" শব্দ প্রয়োগ করতো।




উনার জম্ম কত সালে ও উনার পরিবার সম্পর্কে এবং উনার কোথায় মৃত্যু হয়েছিল তা জানার জন্য বই পুস্তক বা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তুু উনার সব তথ্য বা উনাকে নিয়ে বিস্তারিত লেখা আমি পাইনি।যদি কারো কাছে উনার সম্পর্কে লেখা থাকে বা বই পুস্তক থাকে, আমাকে পরামর্শ বা পড়ার সুযোগ করে দিলে খুবই উপকৃত হবো।উনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার ইচ্ছা থাকলেও জানার সম্ভব হয়ে উঠেনি।আমি যত দূর জানি বা জানার সুযোগ হয়েছে তাই বলতে চাই।আমার মনে হয়, উনাকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন বই বা পুস্তক বের হয়নি,উনার জীবন সম্পর্কে একটা গবেষণাধর্মী বই বা গবেষণা করা যেতে পারে।

ফা ছপাতি গারো..



যতদূর ইতিহাস বা লেখা থেকে জানতে পেরেছি,ফা ছপাতি গারো স্বাধীন গারো রাজ্যের স্বপ্ন দেখতেন,তিনি যে স্বপ্নের মধেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তেমনটা নয়, স্বপ্ন বাস্তাবায়নে তিনি ছিলেন সোচ্চার, গারো সহ,হাজং,কোচ মেচ,হাড়ি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী লোকদের তিনি একত্রিত করেছিলেন।উনার এই স্বপ্নের পিছনে অনেকগুলো কারন ছিল,জমিদারগণের শোষণের মাত্রা ছিল ভয়াবহ, মাত্রাধিক রাজস্ব কর দিতে হতো,জুলুম,নিপীড়ন, অত্যাচার প্রতিনিয়ত ঘটতো,ফসলের ন্যায্য মূল দিতো না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও ছিল অন্যায় আরো বিভিন্ন কারনে তিনি স্বাধীন গারো রাজ্যের স্বপ্ন দেখতেন।তিনি সেই সময়ে উপলদ্ধি করেছিলেন যে,যতদিন না জমিদারগণে হাত থেকে মুক্তি হচ্ছে তত দিন তাদের অন্যায় কার্যকলাপ সহ্য করে যেতে হবে।তিনি নিজের সব্বোর্চটা দিতে চেষ্টা করেছেন।ফলে উনার স্বপ্ন ও বাস্তাবায়নের যে আকাঙ্ক্ষা এবং উনার যে অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারবো না।


জমিদারগণের বিরুদ্ধে ফা ছপাতি গারো তীব্র আন্দোলন শুরু করেন,ফলে জমিদারগণ চিন্তায় পড়ে যান। জমিদারগণ বু্ঝতে পেরেছিলেন যে, যদি এই আন্দোলন থামানো না যায় তাহলে একটা কিছু ঘটে যেতে পারে, কোন মতে আন্দোলন দমন করা যাচ্ছে না,   কোন উপায় না পেয়ে জমিদারগণ মিথ্যা গুজব প্রচার করতে থাকেন যে,ফা ছপাতি গারো তাদের(গারো সহ আদিবাসীদের)   উপর কতৃত্ব করতে চাই, তাদের সবার রাজা হতে চাই,এই রকম মিথ্যা গুজবের ফলে সংগ্রামরত মানুষগুলো বিভ্রান্তিতে পরে যায়।তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করতে থাকে ফলে সংগ্রাম রত মানুষের আন্দোলনের গতি আসতে আসতে থেমে যেতে থাকে।ফা ছপাতি গারো যখন দেখল জীবনের কোন নিশ্চিয়তা নেই,তাকে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, কোন উপায়ন্ত না দেখে ফা ছপাতি গারো পার্বত্য এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যায়।




অন্য এলাকাতে গিয়েও স্বাধীন গারো রাজ্য স্থাপনের আশা ছেড়ে দেননি,তিনি বিভিন্ন পন্থা খুঁজতে থাকেন,অবশেষে তিনি সর্বশেষ চেষ্টা করেন।তখন ছিল নভেম্বর মাস, ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দ। তৎকালীন সময়ে ছিল  নাসিরাবাদ বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগ,তিনি সেই সময়ে জেলা কালেক্টর সাথে সাক্ষাৎ করেন।জেলা কালেক্টর সাহেব ফা ছপাতি গারোর কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়,কারন ফা ছপাতি গারোর ছিল উপস্থিত বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, বুদ্ধিমত্তা ছিল অসাধারণ।তাদের মাঝে অনেক কথা বার্তা হয়,ফা ছপাতি গারো এই  প্রস্তাব ও নিশ্চিয়তা দেন যে, যদি গারো ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা জমিদারগণ হাত থেকে মুক্ত করে নতুন জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে তাহলে নতুন জেলার যে রাজস্ব কর সে নিজে আদায় করে দিবে। উনার কথা কালেক্টর সাহেবের পছন্দ হয়ে যায়, ফলে তিনি সেই প্রস্তাব জেলা রেভিনিউ বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেন।কিন্তু রেভিনিউ বোর্ড তাদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে,কারন পাছে যদি জমিদারগণ অসন্তুষ্ট হয়।সেই ভয়ে, যেন কোন ঝামেলা না হয় ;তাই জমিদারগণের কথা ভেবে তাদেরকে  খুশি রাখার জন্য, প্রস্তাব বা সুপারিশ বাতিলের ফলে ফা ছপাতি গারোর স্বপ্ন নিমিষে ধ্বংস হয়ে যায়।



ফা ছপাতি গারো নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করেও তৎকালীন সময়ে গারো সহ আদিবাসীদের জন্য নিজস্ব জেলা বা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি।তার পরেও উনার স্বপ্ন ও চেষ্টাকে স্যালুট জানাই।



ফা ছপাতি গারোকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।




No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.