জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আহ্বান

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের আহ্বান






করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আদিবাসীদের সুরক্ষা প্রদান করুন
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কমপক্ষে ১৩টি জেলায় ৩৮টিরও অধিক প্রায় ১৫ লক্ষাধিক আদিবাসী জাতি যেমন: সাঁওতাল, উরাও, মুন্ডা, মাহাতো (বেদিয়া/কুড়মি), মালো, মাহালে, মুষহর, কড়া, কোডা, কোল, ভিল, ভুঁইমালি, বাগদী, তুরি, গঞ্জু, গড়াইত, তেলি, কোচ, কন্দ, রাজোয়াড়, রবিদাস, লোহার, শবর, হো ইত্যাদি জাতিস্বত্তার বসবাস। শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর এইসব জাতিদের ৯০ শতাংশই আজ ভূমিহীন। আদিবাসীদের বেশিরভাগেরই বাস অজ পাড়াঁগায়ে। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে তারা অনেকদূরে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনভ্যস্থ আদিবাসীরা তাই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা সর্ম্পকে এখনো তেমন জ্ঞাত নন।
উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা এমনিতেই নীরব নির্যাতন, অবহেলা ও শোষণের বেড়াজালে আবদ্ধ। ভূ-সন্ত্রাস বা জমি জালিয়াতির কারনে তাদের জীবন আজ বিপন্ন। ভূমিহীন দিনমজুর পরিবারে বেশির ভাগ সদস্যই আজ অপুষ্টির শিকার। তাছাড়া বিভিন্ন আদিবাসী এলাকায় এখনো সুপেয় খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরামর্শ ও সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত। ফলে তারা সহজেই বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবানুর সংক্রমনে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব তাই খুব সহজেই তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় হাম ও জল বসন্তের প্রকোপ বেড়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে ব্যার্থ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।


আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, আদিবাসী শিশু, মহিলা, বয়োবৃদ্ধ বা প্রবীন ব্যাক্তিগণ যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অহেতুক ভয় না পেয়ে যাতে যথাযথ সেবা ও ঔষধ প্রদান করেন। আদিবাসী অসুস্থ শিশু বা বয়ো বৃদ্ধদের বাংলা ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে তাদের প্রতি অধিক যতœবান হওয়ার অনুরোধ করছি। এবং স্মরণ করছি, ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের ২২তম ব্যাচের ছাত্র সুমন চাকমার বিনা চিকিৎসায় মারা যাবার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।
ইতোমধ্যে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার (দ্যা ডেইলি স্টার ও সমকাল) প্রতিবেদনে, ‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের অর্ন্তগত তিনটি গ্রামের: কুয়ামারা, মাদারপুর, জয়পুরের ত্রান সহায়তা বঞ্চিত ১২০০ সাঁওতাল পরিবারের’ কথা উঠে এসেছে। কিন্তু সারা উত্তরবঙ্গের দিন মজুর, দু:স্থ ও গরীব আদিবাসীদের অবস্থা একই রকম। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা কমিটির প্রদেয় তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও রাজশাহীর সব জায়গায় আদিবাসী গরীব ও খেটে-খাওয়া মানুষেরা প্রয়োজনের অনুপাতে পায়নি রাষ্ট্রীয় ত্রান ও সহযোগিতা। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি, উত্তরবঙ্গের দিনমজুর, গরীব ও আদিবাসীদের সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসুন।


আমরা উত্তরাঞ্চলের আদিবাসী জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা সাবধান থাকুন, অহেতুক ভয় পাবেন না। মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুন এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন। আজ সারা বিশ্বের সংকটময় পরিস্থিতিতে  নিজেদের সমস্যা মোকাবেলায় ঐতিহ্যগত-আদিবাসী জ্ঞান ব্যবহার করুন। সেই সাথে প্রয়োজনীয় মাস্ক, হ্যান্ড-সেনিটাইজার, জীবানু-নাশক-স্প্রে ইত্যাদি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করুন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর এ চরম দূর্ভোগের সময় উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও আদিবাসী জনপদের সুরক্ষায় প্রয়োজনে আপনারা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা শাখাগুলোর নেতৃবৃন্দদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃবৃন্দদের প্রতি আহ্বান আপনারাও আপনার এলাকার আদিবাসী জনগণের খোঁজ খবর নিন ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা-পরামর্শ দিন।

ধন্যবাদসহ,


(রবীন্দ্রনাথ সরেন)
সভাপতি
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ





No comments

Theme images by saw. Powered by Blogger.